স্মৃতিতে রাখার মত গ্রাম


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২২, ৬:০৩ অপরাহ্ণ / ৩৭৩
স্মৃতিতে রাখার মত গ্রাম

মো ঃ মামুন মোল্যা 

রহিমের বাবা একজন পুলিশের কর্মকর্তা। চাকরির কারণে বিভিন্ন জেলায় তাঁর বিচারণ করতে হয়। সেই সুবাদে ঢাকায় এসেছিল দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার কারণে রহিম কে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করে দেয়। সেই সময়টি ছিল বৈশাখ মাস। রহিম গ্রামের ছেলে। সে গ্রামের খোলা মেলা
প্রকৃতিতে থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু বাবার কারণে, গ্রামে থাকা আর তার হয়ে ওঠেনি। রহিম খুব খোলা মনের মানুষ। কোনদিন রহিমের বন্ধু বান্ধবীর অভাব হয়নি কারণ সে ছিল সৎ মিষ্টি ভাষি এবং অত্যধিক মেধাবী। তার লেখা পড়া দেখে সবাই অবাক।এক এক করে সবাই তার বন্ধু হতে থাকে। কয়েক জন বন্ধু স্কুলের বারান্দায় বসে আছে । হঠাৎ করে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পশ্চিম দিক থেকে ভীষণ
আকারে বাতাস ধেয়ে আসে। কিছু সময়ের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টি আর ঝড়। মাঝে মাঝে মেঘ গর্জে উঠছে। রহিম নিস্তব্ধ। এক বন্ধু রতন বলে উঠলো কি রে বন্ধু কি হয়েছে? রহিমের নিকট থেকে কোন প্রত্যুত্তর এল না। রতন তার শরীরে হাত দিতে বলে
উঠলো কি রে কি হয়েছে ? তোকে ডাকছি কত কোন সাড়া না দিতে ঠেলা দিয়েছি। কি রে কি ভাবছির?। রতন এটা কি মাস বলতে পারবি ? মে মাস, কেন? আরে ইংরেজি না বাংলায় বল। রতন বলিল তা তো বলতে পারবো না। রহিম বলিল এটা
বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাস। এই মাসে গ্রামে অনেক মজা করতাম। সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। রতন বলল বন্ধু শহর থেকে কি গ্রাম বেশি সুন্দর এবং বেশি আনন্দ করা যায়?
কেন তুই গ্রাম কখনো দেখিস নি ? শহরে সুন্দরের কি আছে। গ্রাম হল সুন্দরের মা। আর আনন্দের কথা কি বলবো? সেখানে না গিলে বোঝানো যাবে না। আমি তোর গ্রামে বেড়াতে যাবো তুই নিবি? আমি চার বছর গ্রামে যায় না কারণ আমার স্কুল ছুটি হলে বাবা ছুটি পায় না আর বাবা পেলে আমি পাই না। তোরে
আমাদের গ্রামে নিতে পারি একটি সর্তে। কি সর্তে? তোর বাবাকে বলবি
আমার বাবাকে দশদিন ছুটি দিতে কারণ তুই আমার বাবার সাথে গ্রামে
বেড়াতে যাবি। জ্যৈষ্ঠের গরমে স্কুল পনেরো দিন বন্ধ দিল। রতন তার বাবাকে সব খুলে বললে বাবা খুব খুশি হল। রহিমের বাবা কে চার দিনের ছুটি দিল। রহিম তার বাবা
মার সাথে বন্ধু রতন কে নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাত নয়টার দিকে বাড়ি পৌঁছায়। গল্প করতে করতে রাত প্রায় বারোটা বাজে। সবাই যার যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়। রহিম আর রতন এক রুমে ঘুমাতে যায়। রহিম বিছানায় কাত হতে দেরি আছে কিন্তু ঘুম পড়তে দেরি নেই।নতুন জাগা রতনের আর ঘুম আসে না। রাত প্রায় একটা বাজে। একটি পাখি খুব মধুর সুরে ডাকে। কিছু সময় পর
আবার আর একটি পাখি ডাকতে শুরু করে। তবে কি পাখি যে এত মধুর কণ্ঠে ডাকছে সে তার নাম জানেনা। রহিম হয়তো জানতে পারে। ভোর বেলা রতন ঘুমিয়ে
আছে।দুটি দোয়েল পাখি জানালার পাশে জামরুল গাছের ডালে বসে মধুর কণ্ঠে গান গায়। তা শুনে রতনের ঘুম ভেঙে যায়।রতন মনে মনে বলতে থাকে সারা জীবন
গাড়ির শব্দে ঘুম ভাঙে আজ জীবনের প্রথম পাখির সুমিষ্ট কণ্ঠে গান শুনে ঘুম ভাঙল। সত্যি! এত সুন্দর কণ্ঠ গল্প বা কবিতায় তুলে ধরা খুব দুরূহ। রহিম দুপুরে রতন
কে নিয়ে ঘুরতে বাহির হয়। নদী পথে মাঝি  দের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় মন মাতানো ভাটিয়ালি গান। নদীর চরে গরুর পাল ছেড়ে রাখাল বাজায় বাঁশি। কৃষকেরা প্রখর রোদে কেহ ধান কাটে কেহ পাটের ভুঁই নিড়ায়। দেখতে যতটুকু ভালো লাগছিল
তার চেয়ে বেশি কষ্ট লাগছিল ওদের কষ্টে। রহিম,সত্যি গ্রাম যেমন সুন্দর, গ্রামের মানুষ তেমন পবিত্র। নদীর পাড় দিয়ে হাটতে হাটতে দেখি সূর্যস্ত যায়। মনে হল যেন নদীর মাঝে
হারিয়ে গেলো। সন্ধা নেমে এল। বাড়িতে ডুকতে দক্ষিণা হাওয়ায় কামিনী ফুলের সুগন্ধে বাড়ির আঙিনা মুখরিত। সত্যি জোছনা রাতে এমন প্রকৃতি দেখে পেট না ভরলেও মন ভরে যায়। শেষ রাতে আকাশের বুক চিরে নেমে আসে বৃষ্টি।ধীরে ধীরে ভীষণ ঝড়ও উঠতে থাকে। সকাল হতে না হতে আম তলায় সে কি ভিড়? জীবনে প্রথম নিজের হাতে আম কুড়িয়ে খাওয়ায় সত্যি খুব আনন্দের। বর্ষার পানিতে নদী নালা খাল-বিল ভরে একাকার। চারিদিকে পানিতে থৈ থৈ করে। ব্যঙ্গ মনের আনন্দে গান জুড়ে দেয়। এমন প্রকৃতি ছেড়ে মন নাহি যেতে চাই শহরে। সত্যি তোর গ্রাম স্মৃতিতে রাখার মত। সারা জীবন তোর গ্রাম কে ভালবাসবো।