সম্পর্ক


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৮, ২০২৪, ৯:৩৯ অপরাহ্ণ / ২৭
সম্পর্ক

সোহিনী ঘোষ (কলকাতা)

মোঃ মোমিন ইসলাম সরকার পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি

কতদিন তোমায় দেখি না,
রোজ যে স্পর্শ না পেলে আমাদের মন ভরত না।
সেই সব আজ অতীত।

কোথায় তুমি?
একেবারেই কি ভুলে গেলে কাজের অবসরে। একবারও কি মনে পরে না আমায়?
আমাদের স্বপ্ন আমাদের কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো? সবটাই কি টাইমপাস ছিল?
তখন তো একবারের জন্যও মনে হয়নি আমাদের কাটানো মুহূর্তগুলো টাইমপাস।

স্পর্শ কেবলমাত্র চাহিদা নয় ভালোলাগাও বটে, সুখানুভূতি যা আমাদের মধ্যে ছিল।

শৈবালের সাথে মিলির প্রেমটা যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে বলে মিলির মনে হয়। কলেজ লাইফের প্রেম। নতুন জীবন নতুন ভালোলাগা। চোখে রঙিন চশমায় দেখা নিত্যনতুন স্বপ্ন।

স্বপ্নের ভেলায় ভেসে কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। যেন তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। না সত্যিই হয়তো নেয় নি কিন্তু মনে মনে রূপ নিয়েছে।

বেশ ভালো লাগতো গঙ্গার ধারে দুজন একাকী পথ হাঁটতে। ট্রাম লাইন পার হতে। শীতের সকালের ধোঁয়া ওঠা চা এ চুমুক দিতে। মিলি গ্রামের মেয়ে। ছোট থেকে টানাপোড়েনে বড় হয়েছে। সেভাবে জীবনকে উপভোগ করা হয়নি। চাহিদাও সীমিত কারণ দারিদ্রতা মনকে দমিয়ে রেখেছিল।

আজ যখন সে বড় কলেজে চান্স পেয়েছে। কেবলমাত্র মেধার জোরে তখন সে দেখেছে গ্রামের পরিবেশের থেকে শহরের চাকচিক্য বড় আকর্ষণীয়। শহুরে মানুষ বড় বেশি নিজেকে নিয়ে মেতে থাকে। বার বার সে বুঝেছে কিন্তু শৈবাল যেন একটু আলাদা। একটু অন্য কোনো ভালোলাগা আছে, ভালোমানুষ আছে তার মধ্যে। গ্রামের প্রলেপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি মিলি। কলেজে বার বার সবাই তাকে হেয় করেছে বার বারই শৈবাল তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বন্ধু হয়েছে। বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। এক অজানা ভালোলাগা জন্ম নিয়েছে। কলেজের পর তারা রাস্তার ধারের ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিয়েছে। হাতে তখন দুজনেরই তেমন পয়সা নেই। হাতখরচের সামান্য টাকায় পড়ার খরচ চালিয়ে মিলির হাতে তেমন কিছু থাকত না। শৈবালই মাঝে মাঝে চা খাওয়ার বায়না জুড়ত। এই অবসরে দুজনই একটু কাছাকাছি পাশাপাশি সময় কাটানো।

বাড়ি ফিরে পড়াশুনা আবার পরদিনের অপেক্ষা। এভাবেই চলেছে। একা অবসরে দুজন কত গল্প করেছে। খুব বর্ষায় যখন জল জমেছে শৈবাল বায়না করেছে চলোনা মিলি আজ ওই জল দিয়ে হেঁটে যাই। মাথার উপর ছাতা সরিয়ে দিয়ে দুজন টিপ্ টিপ্ বৃষ্টিতে ভিজেছে। পায়ের নিচে জল। রাস্তায় লোক হাতে গোনা। হয়তো লোকে বলবে পাগল -বয়সের দোষ। হ্যাঁ সত্যিই, কৈশোর যেন মানুষের মনকে বাঁধাহীন প্রাণবন্ত করে তোলে। বাড়ি ফিরে স্নান সেরে পড়াশোনা করেছে, কোনদিন মন বসেছে কোনদিন বা বসেনি।

প্রচন্ড গরমে যখন মাথায় চড়া রোদ নিয়ে কোন দোকানে এসে এক বোতল ঠান্ডা পানীয় পান করেছে, রোদে ঝলসে গেছে মুখ। ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর। সেই ঠান্ডা পানীয় দুজনের শরীরের সাথে মনকেও সতেজ করেছে।

ভুলে গেলে শৈবাল সে সব ফেলে আসা দিন? আজ তুমি কত ব্যস্ত, বড় চাকরি। আর মিলি আজও চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চলেছে, সাথে জীবনেরও। যার সাথে জীবনের সেরা মুহূর্ত কাটিয়েছে আজ সেই শৈবাল, তার সময় নেই একটা ফোন বা মেসেজে করার। সমাজের নিয়মই হয়ত তাই। মানুষ যতক্ষণ অবসরে থাকে ততক্ষন সে নানাভাবে সময় কাটায়। আর ব্যস্ত হয়ে পড়লে সেই অভ্যাসগুলো নিমেষে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অভ্যাসগুলো তখন বড় অসহায় হয়ে পড়ে। তাদের নিয়ে খেলা করার কেউ থাকে না। অভ্যাসগুলো এককোনায় মুখ গুমরে পড়ে থাকে।

ব্যস্ততা, না অবহেলা, না তাকে এড়িয়ে যাওয়া কোনটা?

ব্যস্ততা তো বাহানা কেবলমাত্র অবহেলায় এড়িয়ে যাওয়া, নতুনের পথে। পুরোনো যা কিছু সব কিছুকে ঝেড়ে ফেলে নতুন নতুন নতুন কিছু চাই। সেই নতুন আবার কাল পুরোনো হয়ে যাবে। প্রয়োজন হয়ে পড়বে আর এক অন্য নতুনের। অন্য মিলির।