একুশের কবিতা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ১:০০ পূর্বাহ্ণ / ২৮
একুশের কবিতা

মিটু সর্দারঃ

দাদু, বলতে পারো গোলাপটা ক্যানো হলো লাল
রাঙা হলো কৃষ্ণচূড়া আর শিমুলের ডাল?
জারবেরা,জবা, কুঞ্জলতাও রক্তের মতো লাল
এই বাংলায় কেমন এসেছিল আকাল?
ফেব্রুয়ারি এলেই দেখি বাংলার গাছের ডালে-ডালে রক্তলাল।

আর বলিস-নে দাদু দুঃখের কথা
বিট্রিশের দাসত্ব থেকে ৪৭শে পেয়েছিলাম
একটা মানচিত্র, ভূখণ্ড এবং স্বাধীনতার পতাকা!
একথা চিরন্তন সত্য –
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত!

যেই লাউ সেই কদু, জিন্নাহর মুখে ছিলো মধু
রেসকোর্স ময়দান -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে দ্ব্যর্থহীন চিত্তে দেয় বক্তব্য জিন্নাহ-
আমরা পাকিস্তানি, রেখো আমাদের চিন্না-
‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা,অন্য কোনো ভাষা নয়'” আমরা করিনা রক্তের ভয়।

৫২-র ২৫ শে জানুয়ারি ঢাকায় আসেন খাজা নাজিমুদ্দিন
২৭-শে জানুয়ারি পল্টন জনসভায় বলেন তোমরা চাষাভুষা
দেখি কি করতে পারো “উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”।
রাস্ট্র ভাষা উর্দু করতে এসেছিলো আবাদ!
পাথরের চেয়েও শক্ত ছিলো বুকের জমি –
বাংলার মায়ের শেকড় ছিঁড়ে উর্দু পাবেনা ভূমি।

সারাদেশ উত্তাল, মিছিল মিটিং হবেনা বন্ধ
জিন্নাহ যদি ফিরিয়ে না নেই তার নির্বোধ শর্ত।

শহরে কারফিউ জারি, বন্ধ অলিগলি রাজপথ
ভাঙবে কারফিউ, তরুনেরা নিয়েছিলো শপথ!
একুশে ফেব্রুয়ারির ভোরে, কারফিউর বেড়ি তুড়ে
সব জনতা জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়ে।
হাতে প্লাকার্ড, মুখে স্লোগান –

উর্দু ভাষায় ঢালি ছাঁই, রাস্ট্র ভাষা বাংলা চাই!
বাংলা ভাষায় কথা বলে আমার জন্মদাত্রী মা’য়
পাকিস্তানিরা সেই ভাষা কেঁড়ে নিতে চায়।

তারপর কি হলো দাদু?
মাতৃভাষাকামী তরুণেরা অবরোধ ভেঙে –
ভাষার দাবীতে তারা যখন রাজপথে নামে
ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ নিক্ষেপ করে কাঁদানে গ্যাস
বীর বাঙালী, ভাষা’র জন্য জীবন করবে নিঃশেষ।
শহরজুড়ে চলছিলো কারফিউ –

কারফিউ ভেঙে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে, কিছু ধরে পুরে দেয় জেলে।
তপ্ত দুপুর, সূর্যটা কিছুটা পশ্চিমে পড়েছিল হেলে
বাকিরা আইনসভায় রওয়ানা দিয়ে তাকাতে পারেনি ঘুরে –
পুলিশ ছাত্রদের বুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে!

সালাম, বরকত, রফিক,জব্বার,শফিউয়ের রক্তে
লাল দেখছো তোমার আজ সব ফুল ফাল্গুনে।