হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি ও আনুষঙ্গিক আলোচনা।


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ১০:১১ অপরাহ্ণ / ৮৪
হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি ও আনুষঙ্গিক আলোচনা।
ডাঃ শওকত আলম
মহানবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) মক্কা নগরীতে ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে ১২ই রবিউল আওয়াল সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা খাজা আব্দুল্লাহ, দাদা আব্দুল মোতাল্লিব। তিনি ছিলেন এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি ১. একজন নবী ও রাসূল ২. রাজনীতিবিদ ৩. রাষ্ট্র নায়ক ৪. বীরযোদ্ধা ৫. সেনাবাহিনী প্রধান ৬. ধর্মীয় নেতা ৭. সমাজ সংস্কারক ৮. আধ্যাত্মিক নেতা ৯. মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক ১০. একজন চিকিৎসক।
নবীকরিম (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতির মৌলিক উপাদান সমুহ যথাঃ- ১. কালোজিরা ২.  মাসরুম ও আজওয়া খেজুর ৩. মধু ৪. যায়তুন, ঘাস, চন্দন ৫. পানি ৬. মেহেদী
৭. ছাই ৮. সুরমা  ৯. শিংগা লাগানো ১০ .গেঁটে বাতের চিকিৎসা ১১. নামায একটি শিফা ১২. মাছি দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতিঃঃ-
১৩ আল-কোরআন একটি শিফা।
 বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) তার সঙ্গী সাথী সাহাবিদের মধ্যে কেউ কখনো কোন প্রকার বা কোন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে তখন তিনি যে চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতেন ও যে  নির্দেশ প্রদান করতেন সেই চিকিৎসা পদ্ধতিকে মোটামুটি ভাবে চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ- ১.মুখ দিয়ে ঔষধ প্রয়োগ  ২. নাক দিয়ে ঔষধ প্রয়োগ ৩. রক্তমোক্ষম ৪. জুলাপের ব্যবহার।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতির ১৩টি মৌলিক উপাদান। তার বিষাদ আলোকপাত পেশ করা হলো।
১. কালোজিরা দ্বারা চিকিৎসাঃ-
কালোজিরা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কালোজিরা সেবনে যকৃত ভালো হয়। রসদোষ, বায়ুদোষ, কফের দোষ নিরাময় করে। দেহের শক্তি বলবৃদ্ধি করে, রুচিবর্ধক, আয়ুবর্ধক। কলোজিরা ক্রিমি দোষ নাশক। কালোজিরা দ্বারা মহানবী (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিন্মে আলোকপাত করা হলো।
(ক) ইবনে আবূ আমর সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান মাখযূমী (রহঃ)… আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা এ কালোজিরা ব্যবহার করবে। কেননা, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। “আছ্ছামু” অর্থ মৃত্যু। – হাদীস নং ২০৪৮, (তিরমিযী শরীফ)।
(খ) মুহাম্মদ ইবন মিসরী মুহাম্মদ ইবন হারিদ মিসরী (রহঃ)… হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, কালোজিরাতে মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের শিফা রয়েছে। ‘সাম’ অর্থাৎ মৃত্যু। হাববাতুল সাওদা -কালোজিরা। হাদীস নং ৩৪৪৭। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
(গ) আবু সালামা ইয়াহ্ইয়া ইবন খালাফ (রহ)… হযরত সালিম ইবন আব্দুল্লাহ (রহ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, এই কালোদানা (কালোজিরা) অবশ্যই তোমরা ব্যবহার করবে; কেননা তাতে মৃত্যু ছাড়া আর সব রোগের শিফা রয়েছে। হাদীস নং – ৩৪৪৮। ( সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
২. মাসরুম ও আজওয়া খেজুরঃ-
মাসরূম অনেক ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ।
এখন ঔষধ শিল্প কারখানাতে মাসরূম দ্বারা ঔষধ তৈরি হয় এবং সবজি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
(ক) আবূ কুরায়বা ও মুহাম্মাদ ইবন মুছান্না (রহ)… সাইদ ইবন যায়দ (রা) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, মাসরুম মাননের অন্তর্ভুক্ত। এর পানি চক্ষু রোগের প্রতিষেধক। হাদীসটি হাসান সাহীহ।  হাদীস নং – ২০৭৩,  (সহীহ্ তিরমিযী শরীফ)।
(খ) মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহ)… আবূ হুরায়রা  (রা) থেকে বর্ণিত। কতক সাহাবী বললেন, মাসরুম হলো যমীনের গুটি বসন্ত স্বরূপ, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাসরুম মাননের অন্তর্ভুক্ত।  এর পানি চক্ষু রোগের প্রতিষেধক। আজওয়া হলো জান্নাতী খেজুর আর এতে আছে বিষের প্রতিষেধক।  হাদীসটি হাসান। হাদীস নং -২০৭৪, ( সহীহ তিরমিযী শরীফ)।
(গ) উছমান ইবনে আবূ শায়বা (রহ)… হযরত সাআদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোনদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর দিয়ে নাস্তা করবে, সেদিন তার উপর বিষ এবং যাদু কোন কাজ করবে না। হাদীস নং ৩৮৩৭, (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)।
(ঘ) মুহাম্মাদ ইবন সাব্বাহ (রহ)… হযরত সাঈদ ইবন যায়িদ ইবন আমর ইবন নুফায়েল (রা) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কাম’আত (ব্যাঙের ছাতা বা মাসরূম) হলো সেই ‘মান্না’ এর শ্রেণিভূক্ত,  যা আল্লাহ বনু ইসরায়েলর প্রতি নাযিল করেছিলেন। এর রস চোখের জন্য শিফা। হাদীস নং ৩৪৫৪, (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
৩. মধু দ্বারা চিকিৎসাঃ-
ইউনানী আয়ুর্বেদিক এ্যালোপ্যাথিক শাস্ত্রে মধু সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। মধু চোখ পরিষ্কার করে। দেহের বলশক্তিবৃদ্ধি করে।পাতলা পায়খানা নিরাময় করে। মধু বলকারক, অগ্নিবর্ধক, শুক্রস্তাম্ভক, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিবমি ভাব দূর করে। কাশি, হিক্কা, জ্বর নাশক, মেধাশক্তি বর্ধক, যোবনশক্তি বর্ধক, আয়ু বর্ধক। ইউনানী শাস্ত্রে ঔষধ সংরক্ষণেও মধু ব্যবহৃত হয়। মধু দ্বারা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর
চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসের মূল্যবান বাণী নিন্মে পেশ করা হলো।
(ক) মাহমুদ ইবন খিদাশ (রহ)… হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,  যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন সকালে মধু চেটে খায় তাকে বড় ধরনের কোন মুসীবত (রোগ) আক্রান্ত করবে না। হাদীস নং ৩৪৫০, (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
(খ) আলী ইবন সালামাহ (রহ)… হযরত আব্দুল্লাহ (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দুই আরোগ্য দানকারী মধু ও কোরআনকে অবশ্যই গ্রহণ করবে। হাদীস নং ৩৪৫২।  (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
৪. যায়তুন, ঘাস, চন্দন কাঠঃ-
যায়তুন আরবি শব্দ, বাংলা অর্থ জলপাই, ইংরেজি অর্থ Olive. যায়তুনের তৈল বিশ্বের বুকে একটি পুষ্টি সম্পন্ন উপাদান। যায়তুনের তৈল ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে হার্ডের ব্যাধিতে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের দেহে মালিশ করলে ত্বক কোমল উজ্জ্বল হয়, চামড়ায় ভাঁজ পড়তে দেয় না। এই তৈল বহুগুণ সম্পন্ন । চন্দনও ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান। চন্দন পাটায় পিষে ফোঁড়া ফাটাতে প্রলেপ দেওয়া হয়।
ঘাসঃ-  এক প্রকার ঘাস দ্বারা বিজ্ঞানী ডাঃ জ্যোহার্স শ্যামূয়েল হ্যামিম্যান হোমিওপ্যাথিক Alfalfa আবিষ্কার করেন। যাকিনা মানব দেহের ভিটামিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যায়তুন, ঘাস, চন্দনকাঠ নিয়ে  বিশ্বনবীর (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিন্মে বর্ণিত হলো।
(ক) মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহ)… যায়দ ইবন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে যায়তুন ওয়ারস (এক জাতীয় ঘাস) মাধ্যমে চিকিৎসার প্রশংসা করতেন। হাদীস নং- ২০৮৪।  (সহীহ্ তিরমিযী শরীফ)
(খ) রাজা ইবন মুহাম্মাদ আদাবী বাসরী (রহ)… যায়দন ইবন আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ);আমাদের নিউমোনিয়াতে চন্দন কাঠ এবং যায়তুনের মাধ্যমে চিকিৎসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীস নং- ২০৮৫। (সহীহ্ তিরমিযী শরীফ)
৫. পানি দ্বারা চিকিৎসাঃ-
পানির আর এক নাম জীবন। লবণ পানি গরম করে পান করলে মানব জীবনে চব্বিশটি ব্যাধি নির্মূল হয়।স্বর্পদংশনকারীকে শীতল জলে রাখলে বিষের ক্রিয়া বিনাশ হয়। আবার কখনো কখনো গরম জল বিষের প্রতিষেধক হয়। পানি ছাড়া প্রাণী কুলের কোন বাহাদুরি চলে না। দেহের ভিতরের জন্য সর্বদা মহা কল্যাণকর হলো গরম গরম পানি পান আর শরীরের উপরিভাগ প্রকৃতিক পানি দ্বারা ধৌত কার্যক্রম করা অতি উত্তম। সুস্থদেহ গরম পানি দিয়ে ধৌত করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং অসুস্থ শরীরের জন্য ভিতরে বাহিরে গরম পানি অতি উত্তম। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর পানি দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতি নিন্মলিখিত ভাবে সনদসহ  তুলে ধরা হলো।
(ক)  হান্নাদ (রহ)… রাফি’ ইবন খাদীজ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ)  বলেন, জ্বর হলো জাহান্নামাগ্নির হলকা,  সুতরাং পানি দিয়ে তা শীতল কর। হাদীস নং – ২০৭৯। (সহীহ্ তিরমিযী শরীফ)।
(খ) আবূ বকর ইবন আবু শায়বা (রহ)… হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন,  জ্বর জাহান্নামের তাপ বিশেষ,  সুতরাং পানি দিয়ে তা শীতল করো। হাদীস নং – ৩৪৭১।  (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
৬. মেহেদী দ্বারা চিকিৎসাঃ-
মেহেদীপাতা  ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ঔষধি গুণাগুণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুষ্ক মেহেদীপাতা আট ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে কিছুদিন পান করলে রক্ত পরিস্কার হয়। ক্ষত স্থানে মেহেদী পাতার রস লাগালে ক্ষত শুকিয়ে যায়।
কাঁচা মেহেদী পাতা আর সমপরিমাণ কাঁচা হলুদের রস সপ্তাহে এক দিন (এই মতে ৮সপ্তাহ) গোসলের ১০/১৫ মিনিট আগে মুখে লাগালে মুখের বোরন, ক্ষত সেরে যায়। মানুষ কাঁচা পাকা চুলে এবং হাতে মেহেদী পাতার রস সৌন্দর্য বৃদ্ধির নিমিত্তে ব্যবহার করে থাকে। মেহদী দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ) এর হাদীসের বাণী নিন্মে তুলে ধরা হলো।
(ক) আবূ বকর ইবন আবু শায়বা (রহ)… হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আযাদকৃত দাসী সালমা উম্মে রাফে (রা) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এর যখনই কোন জখম হতো বা কাঁটা বিঁধতো তিনি তখনই তাতে মেহেদী লাগতেন। হাদীস নং – ৩৫০২।  (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
৭. ছাই দ্বারা চিকিৎসা করাঃ-
পরিমাণ মতো আপাং বা চিড়চিড়ে বা শিষাকন্দ গাছ অথবা মোটা বটের ২০/৩০ টি শুষ্কপাতা অথবা একমুঠো শুষ্ক খেজুরপাতার পোড়া ছাই কিছুদিন দাউদ, একজিমার ক্ষতে নারিকেল তৈলসহ লেপন করলে ক্ষত সেরে যায়। দাউদ একজিমাতে আলকাতরার পাতলা প্রলেপ দিয়ে তার উপর পোড়াঘুটের ছাই লাগালে ক্ষত শুকিয়ে যায় এবং ক্ষত সেরে যায়। ছাই দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর হাদীসের বাণী নিন্মে আলোচনা করা হলো।
(ক). ইবন আবূ উমর (রহ)… আবূ হাযিম (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহল ইবন সা’দ (রা) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যখম কি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল ? এ সময় আমিও তা শুনেছিলাম।
তিনি বললেন,  এ বিষয় আমার চেয়ে অধিক জানে এমন কেউ আর নেই। আলী তাঁর ঢালে করে পানি নিয়ে আসছিলেন আর ফাতিমা সেই রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন। একটি চাটাই জ্বালিয়ে এর ছাই তাঁর জখমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। ইমাম আবূ ঈশা তিরমিযী (রহ) বলেন, হাদীসটি হাসান সাহীহ।
হাদীস নং ২০৯১, (সহীহ্ ইবনে তিরমিযী শরীফ)।
৮. সুরমা দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতিঃ-
(ক). আবু বকর ইবন আবু শায়বা (রহ)… হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত।  তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ): বলতে শুনেছি, তোমরা ঘুমানোর  সময় অবশ্যই ইসমাদ সুরমা ব্যবহার করবে, কেননা তা দৃষ্টিকে প্রখর করে এবং চুল গজাতে সাহায্য করে। হাদীস নং ৩৪৯৬,  সুনানে ইবনে মাজাহ (শরীফ)।
(খ). আবূ বকর ইবন আবু শায়বা (রহ)… হযরত  আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন নবী (সাঃ) এর একটি সুরমা দানি ছিলো, তা থেকে তিনি প্রতি চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। হাদীস নং ৩৪৯৯, (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
(গ). আহমদ ইবনে ইউনুস (রহ)… হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে। কেননা, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা সাদা কাপড় দিয়ে মৃতদেহ দাফন করবে এবং তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হলো ইছমাদ। এতে চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং পলকের পশম উৎপন্ন করে। হাদীস নং -৩৮৩৯৷ (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ) ।
৯. শিংগা লাগানো দ্বারা চিকিৎসাঃ-
আধুনিক বিশ্বে এখন মানব দেহের রক্তদান একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। রক্তদাতা ও রক্ত গ্রহীতার প্রাতিষ্ঠানিক উপকার হয়ে থাকে। শিংগা  লাগানোর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) এর হাদীসের বাণী নিন্মলিখিত ভাবে পেশ করা হলো।
 (ক).  আবূ মূসা ইবনে ইসমাঈল (রহ)… হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত।রাসুলুল্লাহ বলেছেন, তোমরা যে সমস্ত বস্তু দিয়ে চিকিৎসা কর, তার মধ্যে শিংগা লাগানো উত্তম।  হাদীস নং – ৩৮১৮, (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)।
(খ). আবদুর রহমান ইবনে ইবরাহীম (রহ)… হযরত আবূ কাবশা আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাথার সিঁথিতে এবং দু’কাধের মাঝখানে শিংগা লাগাতেন এবং  বলতেন, যে ব্যক্তি এসব স্থান থেকে দূষিত রক্ত বের করে ফেলবে, সে কোন রোগের জন্য অন্য চিকিৎসা না করলেও তার কোন ক্ষতি হবে না। হাদীস নং -৩৮২০, (সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)।
১০. গেঁটে বাতের চিকিৎসাঃ-
নিসিন্দার শুষ্কপাতার পাউডার ৫০ গ্রাম এবং হলুদ গুড়ার পাউডার ৫০ গ্রাম, এক সঙ্গে মিশ্ররণ করে নিয়মিত দিনে একবার ভরা পেটে, একটিপ পরিমাণ পাউডার ঠান্ডা পানিসহ সেবন করলে গেঁটে বাত নির্মুল হয়।
গেঁথে বাত সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিন্মলিখিত ভাবে পেশ করা হলো।
(ক).হিশাম ইবন আম্মার ও রাশিদ ইবন সাঈদ রামলী (রহ)… হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলু্ল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, গেঁটে বাতের চিকিৎসা হলো দুম্বার নিতম্ব গলিয়ে তিন ভাগ করে নিবে; পরে প্রতিদিন বাসিমুখে একভাগ পান করবে। হাদীস নং-  ৩৪৬৩,  (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
১১. নামায একটি উত্তম  শিফাঃ-
নামায একটি বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাতিক চিকিৎসা পদ্ধতি। নামায আত্মার ভূবণ খ্যাত ব্যায়াম এবং আত্মার, বিবেকের প্রায়ানাম। নামায একটি সর্বোচ্চ  শিফা। বিশ্বনবী (সাঃ) এর
হাদীসের মতামত নিন্মে তুলে ধরা হলো।
(ক). জাফর ইবন মুসাফির (রহ)…  হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, নবী (সাঃ) হিজরত করলে, আমিও হিজরত করলাম। আমি নামায আদায় করে তাঁর পাশে বসে পড়লাম। নবী (সাঃ) আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার পেটে ব্যথা আছে ?  আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! তিনি বললেন, উঠ এবং নামায আদায় কর। কেননা নামাযে শিফা রয়েছে।  হাদীস নং – ৩৪৫৮, (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
১২. মাছি দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতিঃ-
মৌমাছি নামে পবিত্র আল কোরআনে একটি সুরা নাজিল হয়েছে। মধুদ্বারা ঔষধ তৈরি হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌমাছি পিষে Apis mel নামে একটি ঔষধও আছে যা বিজ্ঞানী জোহাস শ্যামুয়েল হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। মাছি সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) বাণী নিন্মে তুলে ধরা হলো।
(ক) আবু বকর ইবন শায়বা (রহ)…. হযরত বু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মাছির দু’টি ডানার একটিতে বিষ আর অন্যটিতে শিফা আছে। তাই খাবারে যখন মাছি পড়ে তখন সেটাকে তাতে ডুবিয়ে দাও। কেননা তা বিষাক্ত ডানা আগে এবং শিফার ডানা পরে লাগায়। হাদীস নং ৩৫০৪। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
(খ) সুওয়াইদ ইবন সঈদ (রহ)… হযরত আবূ হুরায়রা (রা)
সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন  তোমাদের পানিতে মাছি পড়লে সেটাকে তাতে ডুবিয়ে দিবে, তারপর ফেলে দিবে। কেননা তার একটি ডানায় রোগ এবং অন্যটিকে শিফা রয়েছে। হাদীস নং ৩৫০৫। ( সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
১৩.   কোরআন দ্বারা শিফা গ্রহণঃ-
আল-কোরআন হলো সকল মানব জাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ। দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির চাবিকাঠি। একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কোরআন হলো সর্বরোগের ও সব মানুষেব, সব সমস্যার সমাধান। আল কোরআন যে শিফা, এই সম্পর্কে  বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর হাদীস নিন্মে বর্ণিত হলো।
(ক) মুহাম্মাদ ইবন উবায়হ ইবন আব্দুর রহমান কিন্দী (রহ)… হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, উত্তম দাওয়া হলো কোরআন। হাদীস নং- ৩৫০১/ মুহাম্মাদ ইবন উবায়হ ইবন উতরা ইবন আব্দুর রহমান কিন্দী (রহ).. হাদীস নং- ৩৫৩৩।   (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)।
“””‘”‘”””””””‘””‘”””'””
তথ্য সূত্রঃ-
১. ইবনে মাজাহ শরীফ।
২. আবূ দাউদ শরীফ।
৩. তিরমিযী শরীফ।
৪. লেখকের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও প্রাসঙ্গিক  অভিমত।
লেখকঃ-
কবি, ছড়াকার, বাণীশিল্পী, প্রবন্ধকার, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, সমাজ সেবক, চিকিৎসক।
“””””””””””””””””””””””””’
যোগাযোগ ঠিকানাঃ-
কবি
ডাঃ শওকত আলম
খুলনা ইউনানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
গল্লামারী, খুলনা, বাংলাদেশ।
০১৯১৪৭৭০৯১০
……….
বিঃদ্রঃ  “প্রাসঙ্গিক একটি  স্বপ্ন ও পত্রমালা “
“””””””””””””””””'””'””“”””””””””””””
বরাবর
“প্রিয় পাঠক বন্ধু “
আমার সালাম ও ভালোবাসা নিবেন।
আশা করি ভালো আছেন, দোয়াও করি তাই।
পরবার্তা এই যে, বেশ কিছুূদিন উপরোক্ত লেখালেখিতে হাত দিয়েছি  বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)এর চিকিৎসা পদ্ধতি)।  ইতিমধ্যে গত ১১.০৮.২০২৩ তারিখ, বিকাল আনুমানিক ৩.৩০ মিনিটে বাসে উঠার সময় আমি প্রচন্ড ভাবে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হই। আমার মাথার তালুর চামড়া ডিপ হয়ে বসে যায় কিন্তু কোন প্রকার রক্তপাত হয়নি। আমার মনে হয়ে ছিল, আমার মাথাটা নষ্ট হয়ে যাবে, আমি এক প্রকার পাগল হয়ে যাবো এটাই ভাব ছিলাম।
প্রকাশ থাকে যে, প্রতি সপ্তাহে আমাকে ৫০ কিলোমিটার দূরে সফর করতে হয়। আমি প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাই। যথারীতি রাত ১০টার পরে বিছানায় ঘুমাতে যাই। রাতে সেই ব্যথা নিয়ে ঘুমালাম। গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আমার মাথায় খুব জোরে জোরে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে দিলেন। সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙে গেল। তখন থেকেই আমি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলাম। এখনো আমি একদম সুস্থ আছি ইনশাল্লাহ। আপনার দোয়া ও ভালোবাসা চাই। আজ এই লেখাটি সমপ্ত করলাম এবং ই-মেইল, করলাম।
আমার আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা জানাই।
মায়াস-সালাম। আল্লাহ হাফেজ।
বিনীত
কবি শওকত আলম
০১৯১৪৭৭০৯১০
২৬ . ১১. ২০২৩ ইং