লাল-সবুজ জার্সিতে এবার মাঠে নামছে : ঈসা ফয়ছাল


প্রকাশের সময় : মে ৩০, ২০২২, ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ / ৭৯২
লাল-সবুজ জার্সিতে এবার মাঠে নামছে : ঈসা  ফয়ছাল
  • রংপুর জেলার পুরুষ ফুটবলকে এক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেলেন কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগের সন্তান মো. ঈসা ফয়সাল। জাতীয় দলে জায়গা করে রংপুরের ফুটবল ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করলেন বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল দলেরঈসা এ সদস্য। অবশ্য গেল মার্চেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ঈসা ফয়সাল। সেবার মাঠে নামাটা হয়নি; আরাধ্য লাল-সবুজ জার্সিটাও গায়ে জড়িয়ে খেলা হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বর্তমান প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা দায়িত্ব নিয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই ঈসাকে দলে ভেড়ান। সুযোগ দেন মালদ্বীপের বিপক্ষে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। তবে ওই ম্যাচে সেরা একাদশে জায়গা করে নিতে পারেননি। ২৩ জনের স্কোয়াডে থাকলেও সুযোগ হয়নি মাঠে নামার। লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠে নামাটা তাই অধরাই থেকে গেছে। তবে মাস দুয়েকের ব্যবধানে আবারো জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। আজ রাতে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে দলের সঙ্গে ঢাকা ছাড়ছেন এ লেফটব্যাক। ১ জুন স্বাগতিক ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের। ওই ম্যাচে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখছেন ঈসা।

তবে সেই স্বপ্নও যদি পূরণ না হয় এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব তো রয়েছেই। মূলত মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপের জন্যই ইন্দোনেশিয়াতে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলা। ৮ জুন বাহরাইনের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব মিশন শুরু ঈসাদের। এরপর আরো দুটি ম্যাচ রয়েছে। ১১ জুন তুর্কমেনিস্তান এবং ১৪ জুন সবশেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক মালয়েশিয়া। এই তিন ম্যাচের যে কোনো একটিতে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের সন্তান ঈসা ফয়সাল। একদিন জাতীয় দলে খেলবেন; লাল-সবুজ জার্সিতে মাঠ মাতাবেন- এমন স্বপ্ন নিয়েই মূলত ফুটবলে পা রাখা তার। স্বপ্নের কাছাকাছি থেকে স্বপ্নকে ছুঁতে না পারার কষ্ট মালদ্বীপে এর আগে পেয়েছেন। দ্বিতীয়বার সেই কষ্ট আর পেতে চান না!

হঠাৎ আলোর ঝলকানি হয়ে নয়; দীর্ঘ সময় জাতীয় দলে খেলার লক্ষ্য আর স্বপ্ন নিয়েই ফুটবলে আসা ঈসার। রংপুরে স্কুল ফুটবল দিয়ে যাত্রা শুরু কৃষক বাবা আর গৃহিনী মায়ের চার সন্তানের সবার আদরের ছোট সন্তান (দুই ভাই, দুই বোন) ঈসার। সেই ২০১০ সালে আপন ছোট চাচা আবু তালেবের কাছে ফুটবলে হাতেখড়ি। এরপর সেখান থেকে এলাকার একাডেমি শামীম খান মিসকিনের অধীনে পরিচালিত সান্তোসে যোগদান। এর আগে অবশ্য রংপুরের দ্বিতীয় বিভাগের দল লিবার্টি স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে খেলেন ঈসা ফয়সাল। আন্তঃস্কুল আর এলাকায় দারুণ ফুটবল খেলার সুবাদে পুলিশ টিমের কোচ আলতাফ স্যারের চোখে পড়েন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রংপুর ছেড়ে স্বপ্নের ঢাকায় পা রাখেন তিনি।

২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব দল অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেয়। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে দেশের সর্বোচ্চ পেশাদার লিগ প্রিমিয়ারে উঠে আসে দলটি। ওই আসরে পুলিশ দলের হয়ে দারুণ খেলেন লেফটব্যাক ঈসা। পুলিশ টিমকে প্রিমিয়ারে তুলে আনতে কঠোর পরিশ্রম করেন। পরিশ্রমের ফলস্বরূপ পুলিশ বিভাগে চাকরি জুটে যায়। কনস্টেবল হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন ফুটবলার ঈসা ফয়সাল। সেই সঙ্গে নাম লেখান প্রিমিয়ার লিগেও। দলটির হয়ে এখন অবধি খেলে যাচ্ছেন এ ডিফেন্ডার। পুলিশ টিমে নজরকাড়া পারফরম্যান্স শো করেই জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।

পুলিশ টিমকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ঈসার। দলকে একদিন লিগ শিরোপা এনে দেবেন- মনের কোণে সারাক্ষণ এমন স্বপ্নই আঁকিবুকি কাটে তার। স্বপ্ন দেখেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। বর্তমানে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া লেখাপড়ার সর্বোচ্চ পাঠ চুকিয়ে আরো উচ্চ পদে চাকরির পাশাপাশি; ফুটবলটাও সমানতালে চালিয়ে যেতে চান। ঈসার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তার ক্লাব বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল দল সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ঈসাকে শুধু উন্নত খাবার আর থাকার ব্যবস্থাই করে দেয়নি; খেলাধুলার সকল সরঞ্জমাদিও ক্লাব থেকেই পাচ্ছেন ঈসা। পরিবারও পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। বিশেষ করে বাবার অবদান অকপটে স্বীকার করেন। বাবার আকুণ্ঠ সমর্থনে এতদূর আসতে পেরেছেন জানান দেশের উদীয়মান ডিফেন্ডার রংপুরের গর্ব ঈসা ফয়সাল।