বিএনপির মিছিলে পুলিশের রাবার বুলেট ও আ.লীগের হামলা, আহত ৩৮


প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৮, ২০২২, ১:৪১ অপরাহ্ণ / ৬৬৪
বিএনপির মিছিলে পুলিশের রাবার বুলেট ও আ.লীগের হামলা, আহত ৩৮

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ২৭ জন নেতা–কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হেতেমদী মোড়সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ৩৮ জনের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায়। তিনি আইনের চোখকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান চলছিল, আমাদের নেতা–কর্মীরা সেখানে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কোনো হামলা চালাননি দাবি করে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইমন আলম বলেন, বিএনপির কয়েক শ নেতা–কর্মী দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে না পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অবস্থান ছিল।

বিএনপির নেতা–কর্মীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তেল–গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হেতেমদী মোড়ের সমাবেশস্থলে যাচ্ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিলের সামনে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন ওরফে বকুল, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনজুর এলাহী ও উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুর রহমান।

মিছিলটি হেতেমদী মোড়সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালান। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে ২৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আরও ১১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মনোহরদী পৌরসভার কমিশনার শামসুন্নাহার ও বাবুল আকন্দকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আহত ব্যক্তিদের পার্শ্ববর্তী শিবপুর ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন আইনের চোখকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচিস্থলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের নেতৃত্বে গণভোজের আয়োজন করা হয়। পরে গন্ডগোল এড়াতে চন্দনবাড়ি এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচি স্থানান্তর করা হয়। এরপর ওসি সাহেব বলেন, সরু গলিতে কর্মসূচি দিলে অসুবিধা হবে। তাঁর কথায় আমরা একটি মাঠের মধ্যে কর্মসূচি দিই। গতকাল রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, হাইস্কুল–সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে কর্মসূচি করা যাবে না। পরে হেতেমদী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের স্থান নির্ধারিত হয়।’

এত কিছুর পরও পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরাও আমাদের ওপর হামলা করেছেন। আমাদের ২৭ নেতা–কর্মী গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ১১ জন আহত হয়েছে। এর আগে রাত থেকেই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও ছিলেন।’

জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, একই এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা ছিল। বিএনপির নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ায় সড়কে না যেতে অনুরোধ জানানো হয়। তাঁরা অনুরোধ না রেখে পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় বাধ্য হয়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।