রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নতুন মাদকের ঝুঁকিতে ইউরোপ


প্রকাশের সময় : জুন ১৪, ২০২২, ৬:১২ অপরাহ্ণ / ৪০৯
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নতুন মাদকের ঝুঁকিতে ইউরোপ

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নতুন ঝুঁকিতে পড়েছে ইউরোপ। আর সেটা হলো মাদক। যুদ্ধের কারণে চোরাচালানের অন্য রুট দিয়ে ইউরোপের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে মাদক। ফলে মানুষের আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনভিত্তিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মাদকবিষয়ক সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার এ সতর্কবার্তা দিয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার জোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চেরনিহিভ অঞ্চলের একটি অস্ত্র কারখানায় বোমা হামলাও চালিয়েছে রুশ বাহিনী। খবর রয়টার্সের

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে দেশটির কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থী হিসেবে। এই যুদ্ধ ইউরোপে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ইউরোপিয়ান মনিটরিং সেন্টার ফর ড্রাগস অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন (ইএমসিডিডিএ) গতকাল বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গুরুতর মানসিক চাপে রয়েছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুদ্ধের কারণে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা থাকায় মাদক পাচারকারীরা বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে। এ সময় ইউক্রেন সীমান্তবর্তী দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়তে পারে। কারণ, যুদ্ধের কারণে অনেকেই মাদকে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাদকে আসক্ত হওয়া থেকে মানুষকে বাঁচাতে ধারাবাহিক চিকিৎসা, আবাসিক ও সামাজিক সুবিধা প্রদান এ সময় অত্যন্ত জরুরি।

ইউরোপের মাদক সংস্থা ইএমসিডিডিএ আরও বলেছে, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। গত বছরের আগস্ট থেকে সেখানে তালেবান শাসন চলছে। সেখানকার আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে মাদক চোরাচালান। সেখান থেকে ইউরোপে হেরোইনের চোরাচালান বাড়তে পারে। আফগানিস্তানে অবৈধ মাদক উৎপাদন, বিক্রি ও চোরাচালান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও হেরোইনের অন্যতম উৎস পপি চাষ বেড়েছে।

ইউরোপে মাদকের সমস্যা বর্তমানে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় চলে এসেছে এবং মাদক উৎপাদন আরও বাড়ছে। ইউরোপের মাদক সংস্থার পক্ষ থেকে চিকিৎসা জোরদার ও ক্ষতি কমানোর মতো পদক্ষেপ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।

ইএমসিডিডিএর পরিচালক অ্যালেক্সিস গুসডিল বলেন, প্রচলিত মাদকগুলো কখনো এত সহজলভ্য ছিল না। এখন নতুন নতুন মাদক সামনে আসছে। এতে সবাই আসক্ত হতে পারে। কেউ প্রত্যক্ষ বা কেউ পরোক্ষভাবে এর শিকার হতে পারে।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২১৩ টন কোকেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ৩৫০টি অবৈধ কারখানা ধ্বংস করা হয়।

রুশ হামলা জোরদার

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলা আরও জোরদার হয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের শেষ সংযোগ সেতুটিও ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। আঞ্চলিক গভর্নর সেরগি গাইদাই বলেন, শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এখন রুশদের নিয়ন্ত্রণে। গাইদাই বলেন, তিনটি সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শহরটি এখন কার্যত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। সেখানে থাকা বেসামরিক লোকজন আটকা পড়েছেন। সেভেরোদোনেৎস্ক রক্ষায় পশ্চিমা ভারী অস্ত্রশস্ত্রের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউক্রেন। কিয়েভ বলছে, পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের জন্য লড়াই এবং যুদ্ধের গতিপথ নিয়ন্ত্রণে শহরটি রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশের সমন্বয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চল নিজেদের দাবি করে আসছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই চলছে।

এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা আরআইএ বলেছে, ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলের একটি অস্ত্র কারখানায় বোমা হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এ ছাড়া তাস জানিয়েছে, রুশ বিমানবাহিনী ইউক্রেনের একটি মিগ-২৯ ফাইটার জেট ও এমআই-২৪ হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে।

সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এই লড়াইয়ে আমাদের ত্যাগ অনেক বেশি। একেবারে শিউরে ওঠার মতো।’ যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে আধুনিক অস্ত্রের জন্য আবারও তিনি মিত্রদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দনবাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা মস্কোর কাছে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক রক্ষা করা।