সম্পর্ক করে বিয়ে, তদন্ত ছাড়াই থানায় অপহরণ মামলা রুজু


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ১০:১০ পূর্বাহ্ণ / ১২২
সম্পর্ক করে বিয়ে, তদন্ত ছাড়াই থানায় অপহরণ মামলা রুজু

আবু রায়হান, বিশেষ প্রতিনিধি, রংপুরঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মিস্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রেমিক যুগলের পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনায় প্রেমিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা করেছে মেয়ের পরিবার। এ মিথ্যা মামলায় তদন্ত ছাড়াই প্রেমিকের অনার্স পড়ুয়া মামা জুয়েলকে গ্ৰেফতার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক বেলা ১টায় সৈয়দপুর থানার গ্রিয়ারপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রেমিক সৈয়দপুর গোলাহাট গ্রামের মৃতঃ শামীমের ছেলে সেজান(২১)। প্রেমিকা সৈয়দপুরের ইসলামবাগ চিনা মসজিদ গ্রামের শামীম হোসেন ভলুর মেয়ে সিমরান জাহান সাহা(১৯)।

মেয়েটি সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। তবে প্রেমিক যুগলের বিয়ের কোর্ট ম্যারেজে প্রেমিকের বয়স(২১) ও প্রেমিকার বয়স(১৯) দেখা যায়।

অন্যদিকে সিমরান জাহান সাহার বাবার করা অভিযোগে, প্রেমিকের বয়স(২৩) ও প্রেমিকার বয়স(১৪) উল্লেখ্য করেছেন। এবং ইসলামবাগ কাঁচাবাজার থেকে সাদা মাইক্রোবাসে করে তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় মর্মে মামলায় উল্লেখ করেছেন, যাহা মিথ্যে তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রেমিকা সিমরান জাহান সাহার বাবা সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জানান- তার মেয়ের বয়স ১৮ বছরের কাছাকাছি, সে তার প্রেমিক সেজানের সঙ্গে পালিয়েছে, আমার মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনে ৩০/৩৫ মিনিট কথাও হয়েছে(তথ্য সংরক্ষিত)।

তিনি আরও বলেন- যেহেতু ছেলে/মেয়ে ভালোবাসার টানে ভুল করে পালিয়েছে, সেহেতু আমরা পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠানিক আয়োজন করে তাদের পূনরায় বিয়ে সাধির মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দানে পারিবারিক ভাবে সমাধান করবো।

এজাহার সূত্রে জানা যায়- গত ২৭শে ডিসেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে সিমরান জাহান সাহা তার প্রেমিক সেজানের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে মেয়েটির পরিবার তাকে উদ্ধারে চেষ্টা চালায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে প্রেমিক সেজান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সৈয়দপুর থানা পুলিশ “নারী ও শিশু নিযার্তন দমন” আইনের ৭ ধারায় এটি মামলা হিসাবে রেকর্ড করেন। এবং পরে তদন্ত ছাড়াই মিথ্যে মামলায় জড়ানো ২নং আসামি জুয়েলকে পুলিশ গ্ৰেফতার করে।

মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- প্রেমিক যুুগলের মধ্যে গত তিন বছর ধরে নিবির প্রেমের সম্পর্ক চলমান। তারা স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে এবং কিছু দিন আগে তারা কোর্ট ম্যারেজ ও করেছে। প্রেমিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তার পিতার আনিত অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। মেয়েটি বর্তমানে তার পরিবারের জিম্মায় রয়েছে বলে প্রেমিক পক্ষের দাবি। কেননা তার বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইল ফোনেও কথপোকথন হচ্ছে বলে মেয়েটির বাবা স্বীকার করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আরিফ খান জানান- ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের ঘটনা ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে অপহরণের ঘটনা কিনা তদন্ত না করে গ্ৰেফতার করার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিককে তুলে আনার হুমকি দেন এসআই দিপু।

সৈয়দপুরের স্থানীয় সচেতন সুধীজন বলেন- প্রেমিক যুগলের পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনাকে অপহরণ মামলায় প্রেমিকের মামাকে জড়িয়ে আসামি করে গ্রেফতার করা বড় দুঃখজনক। মেয়ের পরিবার অপহরণ মামলা করলেও পুলিশ ও প্রশাসনের তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়া উচিত ছিল।

অন্যদিকে মেয়ের বাবা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনা স্বীকার করায় তারা বলেন- থানা-পুলিশ বড় অর্থের বিনিময়ে এরকম মিথ্যে ও বানোয়াট মামলা রেকর্ড করে আসামী গ্রেফতার করেছে বলে ভূক্তভোগী পরিবারের৷ এটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনা দরকার ও মিথ্যে ও বানোয়াট মামলা করায় মামলাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবির করেন।

অন্যদিকে সৈয়দপুর থানার ওসি বলেন- প্রেমিক ও প্রেমিকা তাহারা একসঙ্গে আছেন, মেয়ের বাবার সঙ্গে মেয়ের প্রায়ই কথা হচ্ছে। এসআই দিপু কর্তৃক সাংবাদিকে হুমকির বিষয়ে বলেন- সে উপর লেভেলের চাপে হয়তো করছেন, বিষয়টি আমরা দেখছি এবং এমন বে-আইনী আচরণ করায় সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা চাবে মর্মে জানান।