যশোর জেলা(Jashore District) ‘র আদ্যোপান্থ


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ৮:৫৮ অপরাহ্ণ / ৩১৭
যশোর জেলা(Jashore District) ‘র আদ্যোপান্থ

জেলা প্রতিনিধি :- যশোর, ফুলের রাজধানী হিসাবে পরিচিত, প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসাবে খ্যাত, দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রবেশদ্বার হিসাবে বিখ্যাত, বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে অবস্থিত ১৩তম বৃহত্তম একটি জেলা।
এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো:
নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা।

 

প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে যশোর বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন জেলা এবং এ জেলার সৃষ্টি হয় ১৭৮১ সালে।
যশোর জেলার নামকরণ সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
অনেকে মনে করেন যশোর শব্দটি আরবি ভাষার ”জসর” থেকে এসেছে। যার অর্থ- সেতু বা সাঁকো।
আবার আরেকটি মত হলো: মহারাজ প্রতাপাদিত্যের পিতা বিক্রমাদিত্য ও তার এক সহযোগী বসন্ত রায় গৌড়ের এক চরম অরাজকতার সময় সুলতানের অপরিমিত ধনরত্ন নৌকা বোঝাই করে গোপনে এই এলাকায় প্রেরণ করেন এবং এখানে নতুন রাজ্য যশোহর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবাদ আছে, গৌড়ের যশ হরণ করে এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নাম যশোহর রাখা হয়। যা পরবর্তীতে যশোর নামে প্রচলিত হয়।
# এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গতিপথসমূহ:
যশোর জেলার উত্তরে ঝিনাইদহ জেলা ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণ পূর্বে সাতক্ষীরা জেলা, দক্ষিণে খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্বে নড়াইল জেলা অবস্থিত।
সড়কপথ, রেলপথ, নদীপথ, বিমানপথ সবগুলো দিয়েই যশোরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এ জেলার দুরত্ব প্রায় ২০০ কিঃমিঃ।
১৯৮৬ সালে এ জেলাকে বিভক্ত করা হয় এবং সৃষ্টি করা হয় নড়াইল, মাগুরা এবং ঝিনাইদাহ জেলা। এ জেলায় ৮৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত মোট ৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো ১৯৮৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ জেলায় আরো ৮টি সংসদীয় আসন ছিলো যা ১৯৮৪ সালে বিলুপ্ত করা হয়।
#উপজেলা,পৌরসভা ও থানাসমূহ:-
যশোর জেলা ৮টি উপজেলা, ৮টি পৌরসভা এবং ৯টি থানা নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:
১.যশোর সদর ২.শার্শা ৩.মনিরামপুর ৪.কেশবপুর ৫.ঝিকরগাছা ৬.চৌগাছা ৭.বাঘারপাড়া এবং ৮.অভয়নগর
#জনসংখ্যা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
#জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী এ জেলায় মোট জনসংখ্যা: ৩০,৭৬,৮৪৯ জন এবং স্বাক্ষরতার হার ৭৬.৯৬ শতাংশ।
#কলা, খেজুরের গুড় ও ফুলের জন্য এ জেলা বিখ্যাত। এ জেলার গদখালী গ্রামকে ফুলের রাজধানী বলা হয়।
#ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ যশোর জেলাকে ২০১৬ সালে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে a2i থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
#খুলনা-কোলকাতা রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে যশোর রেখেছে এক অনন্য ভুমিকা এবং এ জেলার মধ্যে দিয়েই বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করে।
#যশোরে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করা হয়।
#বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ঘাটি যশোর সদরে অবস্থিত।
#যশোরের মৎস্য হেচারীগুলো সমগ্র দেশের পোনা মাছের ১/৩ অংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে।

 

#শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক যেটি নাজিরশংকরপুরে অবস্থিত।
#যশোর বিমান বন্দর যেটি ১৯৬০ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হিসেবে চালু হয়।
#প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকীতে কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে আয়োজিত হয় মধুমেলা।
#এ জেলার বেনাপোল – যশোর রোড নিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা লিখেছিলেন।
#যশোরের শিল্পকারখানার মধ্যে আছে নওয়াপাড়ার ভারী শিল্প কারখানা যেমন: পটকল ও সার কারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এবং বিসিক শিল্প নগরী।
#যশোরের অটোমোবাইল ও বডি বিল্ডিং শিল্প বর্তমানে অনেক বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। যেখান থেকে বছরে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি যানবাহনের বডি তৈরি করা হয়।
#স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কলম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পৌছেছিলো।
#বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রিট্রিট সিরিমনি নামের সামরিক কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।
#যশোর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত মণিহার বাংলাদেশের বৃহত্তম সিনেমা হল । ১ হাজার ৪৩০ আসনবিশিষ্ট এ সিনেমা হল ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
#বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের শার্শা উপজেলায় অবস্থিত।
#১৯৪৯ সালে যশোরের জেলা ক্রিড়া সংস্থার জন্ম হয় এবং এর মাধ্যমে শামসুল হুদা স্টেডিয়ামেরও সূত্রপাত ঘটে।
#এ জেলার জামতলার মিষ্টি এ এলাকায় অনেক বেশি সমাদৃত।
#এ  জেলার  উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপত্য:                    বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শংকরপুর বধ্যভূমি, বিজয়স্তম্ভ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এর সমাধি, বিজয় ৭১ ভাস্কর্য, রাসেল স্কয়ার, চেতনায় চিরঞ্জীব এবং রক্তঋণ।
#গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীসমূহ:
যশোর জেলায় যেসকল নদী আছে তার মধ্যে : ভৈরব, চিত্রা, কপোতাক্ষ নদ, হরিহর, দাদরা, বেত্রাবতী, কোদলা, ইছামতি ইত্যাদি।
যশোর জেলায় একটি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে যার নাম “মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর”। #গুরুত্বপূর্ণ  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ:-        
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি এম এম কলেজ
যশোর মেডিকেল কলেজ
যশোর জিলা স্কুল
আকিজ কলেজিয়েট স্কুল
জামিয়া আরাবিয়া মুহিউল ইসলাম
যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী
দাউদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
#গুরুত্বপূর্ণ ফসলাধিসমূহ:-
প্রধান যেসকল ফসল যশোরে উৎপাদিত হয় তাদের মধ্যে ধান,আখ, কার্পাস তুলা এবং পাট প্রধান।

#জেলার উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থান:                  সেগুলো হলো-
ঝাপা বাওড় –  যার উপরে নির্মিত হয়েছে ভাসমান ব্রিজ
দমদম পীরের ডিবি

 

 

 

 

তুলা বীজ বর্ধন খামার

খড়িঞ্চা বাওড়
গদাধরপুর বাওড়
শেখপুরা মসজিদ
অভয়নগরের এগার শিব মন্দির
চাঁচড়া শিব মন্দির
পীর মেহেরুদ্দিন (রা.) এর মাজার
মধুপল্লী – মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি
গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি স্হানের নাম:
যশোর কালেক্টরেট ভবন ও পার্ক যেটি স্থাপিত হয় ১৭৮৬ সালে
ভারত রাজার দেউল
ভবদাহ বিল
মীর্জানগর হাম্মামখানা
রামনগর ইউনিয়নের ইমামবাড়া
ধীরাজ ভাট্টাচার্যের বাড়ি
কালুডাংগা মন্দির
চাঁচড়া মৎস উৎপাদন কেন্দ্র
বেনাপোল স্থল বন্দর ও বেনাপোল পৌর গেট
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মাজার
চাঁচড়া রাজবাড়ী
যশোর বোট ক্লাব
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক
গদখালী ফুলের বাগান এবং সবজির ক্ষেত ইত্যাদি।

পূর্বে এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের নাম:
মাইকেল মধুসুদন দত্ত – অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম স্রষ্টাসহ বিভিন্ন গুনে গুনান্বিত।
কর্মবীর মুন্সি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ – বাগ্মী, সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক ও ধর্ম প্রচারক।
আনোয়ারা সৈয়দ হক – বিশিষ্ট লেখক
রাধাগোবিন্দ চন্দ – বিখ্যাত জ্যোতিস্ক বিজ্ঞানী
শিশির কুমার ঘোষ – সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
মনোজ বসু – লেখক
হামিদা রহমান – যশোরের একমাত্র নারী ভাষা সৈনিক ও বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য
ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান – সাহিত্যিক ও ভাষাবিজ্ঞানী।
মহারাজ প্রতাপাদিত্য গুহরায় – যিনি যশোর সম্রাট নামে পরিচিত
ইকবাল কাদির – গ্রামীণফোনের প্রতিষ্ঠাতা
তরিকুল ইসলাম – সাবেক খাদ্য ও তথ্য মন্ত্রী।
স্বপন ভট্টাচার্য্য – স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রতিমন্ত্রী।
পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য – বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য
ইসমাত আরা সাদেক – জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক – সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী
এ্যাডভোকেট শহীদ মশিউর রহমান – শেরে বাংলা ফজলুল হকের মন্ত্রীসভায় বিচার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী।
বেগম আয়েশা সরদার – নারী আন্দোলনের নেত্রী ও যশোরের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা
এ জেলার উল্লেখযোগ্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে আছেন- কেরামত মওলা, ফারজানা রিক্তা, কোহিনূর আক্তার সুচন্দা, ধীরাজ ভট্টাচার্য, ফরিদা আক্তার ববিতা, গুলশান আরা চম্পা, রিয়াজ, শাবনূর ইত্যাদি।
যশোরের যেসকল পত্রিকা প্রকাশিত হয় তাদের মধ্যে ১২টি দৈনিক, ৪টি সাপ্তাহিক এবং ৩টি মাসিক পত্রিকা। এ জেলার দৈনিক পত্রিকার মধ্যে আছে: দৈনিক কল্যাণ, দৈনিক পূরবী, দৈনিক দেশহিতৈষী ইত্যাদি।