নরসিংদীতে মর্গে চলছিল মায়ের লাশের ময়নাতদন্ত,পরিক্ষার হলে ছিলো মেয়ে


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১, ২০২২, ১০:২৬ অপরাহ্ণ / ১৪৪
নরসিংদীতে মর্গে চলছিল মায়ের লাশের ময়নাতদন্ত,পরিক্ষার হলে ছিলো মেয়ে
নরসিংদী প্রতিনিধি ঃ
নরসিংদীতে হত্যার শিকার মায়ের লাশ মর্গে রেখে নাজিফা আক্তার নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। আজ শনিবার সকালে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কে কে ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সে যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে তার মায়ের লাশের ময়নাতদন্ত চলছিল।
নাজিফা নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী হিসেবে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের আরিফা বেগম ও আরমান মিয়া দম্পতির বড় মেয়ে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের একটি পুকুর থেকে নাজিফার মা আরিফা বেগম ওরফে দীপার (৪২) লেপে মোড়ানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নাজিফার বাবা আরমান মিয়া পলাতক রয়েছেন।
বেলা একটায় পরীক্ষা শেষে নাজিফা আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টানা দুই ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়েছি। মা খুন হওয়ার পর থেকে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। মায়ের লাশ মর্গে রেখে পরীক্ষার হলে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারছিলাম না। তবে সহপাঠী, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যদের মানসিক সাপোর্ট পেয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি। এই পরীক্ষায় পাস করতে পারব হয়তো, কিন্তু মা হারানোর কষ্ট কীভাবে ভুলব?’
নাজিফার নানা কাজী ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের অনুরোধে চোখে পানি আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে আজ সকালে উচ্চতর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যায় নাজিফা। সে অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে, আগের সব কটি পরীক্ষাও সে ভালো দিয়েছে। কিন্তু একটা পরীক্ষার জন্য তার শিক্ষাজীবনে বড় ক্ষতি হয়ে যাক, তা আমরা চাইনি। তার পরীক্ষা চলার সময়টুকুতে আমি কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
নাজিফার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নরসিংদী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমি খবরটি শুনে পরীক্ষার কেন্দ্রে ছুটে গিয়েছি। তাকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি কেন্দ্রপ্রধানকেও বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁরাও তাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন। মায়ের লাশ মর্গে রেখে পরীক্ষার খাতায় মনোনিবেশ করা যে কতটা কঠিন, এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যে যায়, সে বোঝে।’
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন গাজীবাড়ির পুকুরে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি লেপ ভেসে থাকতে দেখেন। সন্দেহ হলে তাঁরা লেপটি টেনে পাড়ে নিয়ে আসেন। এ সময় ওই লেপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হন। পরে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে।
পাড়ে তোলার পর গৃহবধূর মরদেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।