“মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ভূমিকা”


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২৩, ১:০৯ পূর্বাহ্ণ / ৩১
“মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ভূমিকা”
স্টাফ রিপোর্টার মো : মামুন মোল্যা 
২০ ( ডিসেম্বর)  সকাল দশটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল  হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ভূমিকা” সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 
এ অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক, গণতন্ত্রী পার্টি এ্যাডঃ ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলনের সঞ্চালনায় নির্বাহী সভাপতি, গণতন্ত্রী পার্টি ও সাবেক প্রো-ভিসি,অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জননেতা আমির হোসেন আমু এমপি, ১৪ দলের সমন্বয়ক, সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ব্যারিস্টার মোঃ আরশ আলী, সভাপতি, গণতন্ত্রী পার্টি। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ । তাদের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত গানের কলি এখনও আমাদের কানে বাজে-ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরো তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।বন্ধুগণ মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরে কবি গুরুর গানের অন্তর জাগানিয়া সুর ১৭ কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে নিরন্তর বেজে চলেছে যে- বাংলাদেশের দুয়ার সোনার মন্দিরে খুলে যাবে, সেটিই প্রত্যাশিত। আজকে ৩০ লক্ষ শহীদের যে স্বপ্নের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে বাংলাদেশ, তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্নের যে বাংলাদেশ, বর্তমানের ১৭ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার যে বাংলাদেশ- সে বাংলাদেশ নানা ভাবে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, ৫২ বছর একটি জাতির জীবনে কম নয় এই সময়ে আমরা বেশ কিছু অর্জন করেছি- আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, যোগাযোগ ব্যাবস্থারও অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেকদূর এগিয়েছে; কিন্তু দূর্ভাগ্য জনক ভাবে যেই প্রত্যাশাকে বুকে ধারন করে ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ রক্ত দিয়েছিলেন, ২ লক্ষ মা বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন, তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষ নানা ভাবে দুঃখ কষ্টে বুক বেধে স্বাধীনতার স্বপ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন সেই স্বপ্ন পূরনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর পিছিয়ে আছি। স্বাধীনতার পরে বিশ্বের অনেক দেশ যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। আমরা যদি স্বাধীন দেশের মানুষের জীবন মানের দিকে তাকাই তাহলে অনেক ছোট ছোট দেশ যেমন ইউরোপের সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, প্রাচ্যের জাপান অথবা কোরিয়ার দিকে তাকাই, যেই বিষয়টি লক্ষ্য করব যে সেখানে যেমন প্রযুক্তির মান বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে, আধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক তেমনিভাবে সেখানকার মানুষ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নৈতিক মানে উন্নীত হয়ে একটি সুন্দর মানবিক ন্যায় পরায়ন সৎ আধুনিক জীবন ধারায় জীবন যাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করবে তাঁর নিজের দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সে বিশ্ব দরবারে তাঁর নাগরিক পরিচয়ে মর্যাদার আসনে থেকে বিশ্ব পরিসরে বিবেচিত হবেন; সেটাই যৌক্তিক আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলাদেশ আজকে নানা ভাবে সংকটে নিপতীত হচ্ছে। কেন বাংলাদেশের মানুষের আজ এই সংকট? সেটি সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ভেবে দেখা দরকার। আমি বিশ্বাস করি আজকে এখানে যারা উপস্থিত তাঁরা সকলেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন অথবা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন, আজকেও তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড, তাঁদের শ্রম, মেধা দেশের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনা হল সর্বোচ্চ ত্যাগ এবং মুক্তির আকাঙ্খায় জাতীয় ঐক্য। এখানে ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনের দ্বারা জাতীয় মুক্তির কোন পথ নেই। ব্যাক্তিগত কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য থাকলেও জাতীয় অর্জনের দিক থেকে আমরা অনেক দূর পিছিয়ে আছি। তবে একজন যোদ্ধা, দেশপ্রেমীক ত্যাগী মানুষ বা রাজনৈতিক ব্যাক্তির জন্যে, এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে থাকার বা পরাজিত হবার কোন সুযোগ নেই। দেশের কল্যাণে, জাতির কল্যাণে আমাদের অবশ্যই জাতির যেকোন সংকটময় মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে এর কোন বিকল্প নেই, কারন ঐক্য ছাড়া আমাদের পক্ষে অন্য কোন পথে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে যে আজকে বাম প্রগতিশীল শক্তির যেমন শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল ঠিক তেমনি ভাবে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তিরও একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল। যেখানে অসাম্প্রদায়িক, উদার, বিকাশমান গণতান্ত্রিক ধারায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সেই আকাঙ্ক্ষা নিরবে নিভৃতে দেশের মানুষ সযতনে লালন করেছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বাম প্রগতিশীল শক্তি যেমন নানাভাবে বিভক্ত হয়ে তাদের সম্ভাবনাকে, প্রচ্ছন্ন শক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে বা অসমর্থ হচ্ছে তেমনি গণতান্ত্রিক শক্তিও নানাভাবে দ্বিধায় এবং অনিশ্চয়তায় বিভক্ত হয়ে তাদের শক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যার্থ হচ্ছে। আজকে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যারা ‘৭১ এ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর সেজে হত্যা করেছে, মা বোনদের সম্ভ্রম লুটেছে তারা আবার দেশী-বিদেশী কায়েমি স্বার্থবাদীদের মদদ পুষ্ট হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। ‘৭১ এর চেতনার অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্বাস হলো স্বাধীন দেশে সরকারী দলে ও বিরোধী দলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি থাকবে। ‘৭৫ এ জাতির জনকের নৃশংস হত্যা কান্ডের পর আমরা দেখেছি ভিন্ন চিত্র। যেখানে সরকার পরিচালনায় এবং বিরোধী দলেও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অনাকাঙ্খিত উপস্থিতি। যেটির কালো ছায়া আজকের দিনেও বাংলার আকাশে দেখা যাচ্ছে যাহা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক উদার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে আজ সেই সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, রক্ষণশীল, দেশি এবং আন্তর্জাতিক শক্তিকে পরাভূত করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ আদর্শবান, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে জয় লাভ করতে হবে। ঠিক সেই জায়গাতেও অনেক সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজকের দিনে গণতন্ত্রী পার্টির পক্ষ হতে আমরা সে আহ্বান জানাতে চাই যে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির যারা দীর্ঘদিন সমাজতান্ত্রিক চেতনায় রাজনীতি করেছেন শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তাদের সকলকে ভেদাভেদ ভুলে দেশের সংকট মোচনে দেশবাসীর ভাগ্য গড়ে তোলার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে অবশ্যই উন্নত সমৃদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। যে স্বপ্ন ৩০ লক্ষ শহীদের, যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর ও তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের এবং আজকে ১৭ কোটি বাঙালি মনে ধারন করে নিরবে নিভৃতে পথ চলছে।
আমরা বিশ্বাস করি সমস্ত বাধা, সংকট, ব্যার্থতা ছাপিয়ে আমরা আবার সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত, সমাজতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বিকাশমান, আধুনিক, সৎ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এটি হল আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার।