৫০ তালগাছে বিষ প্রয়োগ আওয়ামী লীগ নেতাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা


প্রকাশের সময় : মে ১৮, ২০২৩, ৬:৩৪ অপরাহ্ণ / ৮০
৫০ তালগাছে বিষ প্রয়োগ আওয়ামী লীগ নেতাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :- রাজশাহীর বাগমারায় ৫০টি তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলার ঘটনায় অভিযুক্তকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে এই টাকা জমা দিতে হবে। অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলম বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।

এ ঘটনায় শাহরিয়ার আলমকে তার কর্মস্থল স্থানীয় মাদরাসার কম্পিউটার শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের অনুলিপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পাঠনোরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৭ মে) হাইকোর্টের এক দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। উপজেলার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে তাকে তলব করা হয়েছিল।

‘৫০ তালগাছে কীটনাশক’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি একটি জাতীয় পত্রিকায় সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এটি নজরে আসার পর ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এ অনুসারে ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হন শাহরিয়ার আলম। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জাহেদুল হক। আদালতের আদেশ অনুসারে সরেজমিনে উল্লেখিত গাছগুলোর ছবিসহ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক। আদালত কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য শোনেন। আদালতের মৌখিক আদেশে কয়েক ঘণ্টা আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহরিয়ার আলম।

হলফনামা আকারে কৃষি কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও ছবি আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস-আল-হারুনী। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজা বেগম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া। প্রকাশিত খবরের সত্যতা জানাতে প্রথম আলোর পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার সময়ের আরজি জানান।

ঘটনায় সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে শাহরিয়ারের পক্ষ থেকে শুনানিতে দাবি করা হয়, বিদ্বেষপ্রসূত ঘটনাটি প্রচারিত হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভাষ্য, আমগাছ বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য তালগাছগুলো ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারার অপচেষ্টা হয়েছে। তালগাছ রক্ষার্থে তার কোনো উদ্যোগ ও আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। তালগাছগুলোর ক্ষতি করার পেছনে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে শাহরিয়ার জড়িত মর্মে কৃষি কর্মকর্তা মনে করেন।

সকালে ওই তালগাছগুলোর ছবি আদালতে দাখিল করা হয়। আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ছবিগুলো দেখতে বলেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেন, ‘একজন বৃদ্ধ লোক প্রকৃতি ও দেশকে ভালোবেসে গাছগুলো লাগিয়েছিলেন। এই জাতির যেমন সুসন্তান ও বীরশ্রেষ্ঠ আছে। আবার কুলাঙ্গারও আছে। বাকল কেটে বিষ প্রয়োগ করে, পত্রিকায় দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টকে জাগ্রত বিবেক বলা হয়। যে কারণে রাত আড়াইটায়ও আদালত আদেশ দেন।’

আদালত আরও বলেন, ‘মনে করছেন— ছোট্ট একটি তালগাছ, এটিও কোর্ট দেখে। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প যে তালগাছ লাগানো। একজন বৃদ্ধ মানুষ, বাবার বয়সী মানুষ, উনি আগামী দিনের জন্য সন্তানদের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে তালগাছ লাগিয়েছেন। অথচ কুসন্তান বিষপ্রয়োগ করেছে— এরা দেশকে কী দিলো?’

মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে এসে শুনানিতে আদালত বলেন, ‘একটি পশুরও মায়া থাকে। পশুরও একটা অনুভূতি থাকে। একটি গাছ হতে ১২ বছর সময় লাগে। ১২ বছর কে ফিরিয়ে দেবে? গাছের জীবন আছে। ইচ্ছা করলে একটি গাছ সৃষ্টি করতে পারবে না। এই পশুদের চিহ্নিত করাই হচ্ছে কাজ। সে পশু যে–ই হোক না কেন, যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন? এটি হালকাভাবে দেখার অবকাশ নেই। গাছের যে ছবি দাখিল করা হয়েছে, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। এমন হৃদয়বিদারক ও নির্মম ছবি দেখিনি।’

ওই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাবর গত ৩০ জানুয়ারি চিঠি পাঠান বলে শুনানিতে উঠে আসে।