ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তামাক ব্যবসায় নিজেদের অংশগ্রহণ সরকারের দ্বৈত নীতি : মানস


প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২২, ৪:৩৫ অপরাহ্ণ / ৪৪৫
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তামাক ব্যবসায় নিজেদের অংশগ্রহণ সরকারের দ্বৈত নীতি : মানস

স্বাধীনতার পর থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে (বিএটি) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার (অংশ) ছিল। বর্তমানে তা প্রায় ১০ শতাংশ। তামাকপণ্যের ব্যবসায় অংশীদারত্বের বিষয়টিকে সরকারের দ্বৈত নীতি হিসেবে মনে করছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)। বিষয়টি সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানস আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী।

এ সময় অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে (বিএটি) সরকার ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার (অংশ) ছিল। বর্তমানে শেয়ারের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। উচ্চপদস্থ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অপর দিকে ‘বনায়ন’ প্রকল্প চালুর জন্য ১৯৮০ সাল থেকে বিএটি পাঁচবার বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। যদিও তামাক কোম্পানিগুলো আসলে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এ অসামঞ্জস্য ও প্রতিবন্ধকতা তামাক নিয়ন্ত্রণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা তৈরি করছে।

এ ছাড়া কৃষিজমি ও পরিবেশের সুরক্ষায় ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস না হওয়া, খসড়া নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে ‘গাইডলাইন’ না থাকা, ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণীত না হওয়া’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়নে ‘রোডম্যাপ’ না হওয়া—এসব বিষয়কেও তামাক নিয়ন্ত্রণের পথে বাধা হিসেবে দেখছে মানস।

প্রকৃতির ওপর তামাকের প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক চাষে প্রচুর সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করায় মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। এতে মাছসহ জলজ উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। খাগড়াছড়িতে নদীর তীরসংলগ্ন পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষ করায় দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ৩১ শতাংশ বন নিধনের জন্যও তামাক চাষকে দায়ী করা হয় প্রবন্ধে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তামাকপণ্য চাষ ও উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন হেক্টর বন ধ্বংস করা হয়েছে। যা বার্ষিক ২০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বিশ্বে প্রতিবছর ৩৫ লাখ হেক্টর জমি তামাক চাষে ধ্বংস হয়, যা বৈশ্বিক পাঁচ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য দায়ী। এ ছাড়া ৩০০টি সিগারেট তৈরিতে একটি গাছ পোড়ানো হয়। অর্থাৎ একটি সিগারেট তৈরিতে ১৪ গ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন–২০১৮ এর তফসিল–১ এ ১৩ ধরনের কৃষিপণ্যের কথা বলা হয়েছে। সেখানে চারটি অর্থকরী ফসলের মধ্যে তামাকের কথাও উল্লেখ রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকেও তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবে পড়ানো হচ্ছে, যা তামাক চাষকে উৎসাহিত করছে।

অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের চেয়ে তামাকের কারণে মৃত্যুহার এবং ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। তিনি বলেন, তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে বলে টোব্যাকো অ্যাটলাস-২০১৮ এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ২৯ হাজার ১৩১ জনের।

মানসের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক ব্যবহারকারী বিশ্বের শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। তাই জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরও শক্তিশালী ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রবন্ধে কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি পাস, তামাকের বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি উদ্যোগ, তামাকপাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পদকের জন্য তামাক কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো থেকে সরকারের ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার এবং কর্মকর্তা প্রত্যাহার করা, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা ইত্যাদি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক চিকিৎসক এ কে আজাদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। দেশে গাঁজা চাষ নিষিদ্ধ, কিন্তু তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না কেন? এটিও নিষিদ্ধ করুন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানসের কার্যনির্বাহী সদস্য শামীম হোসেন। ছিলেন কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ সাংবাদিকেরা।