পঞ্চগড় জেলার করতোয়ায় নৌকা ডুবির স্মরণকালের ট্রেজিডির এক বছর পূর্ণহলো


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ১:২৯ অপরাহ্ণ / ১১৯
পঞ্চগড় জেলার করতোয়ায় নৌকা ডুবির স্মরণকালের ট্রেজিডির এক বছর পূর্ণহলো

মাজহারুল ইসলাম পঞ্চগগড় জেলা প্রতিনিধি

পঞ্চগড় জেলার বোদার মাড়েয়া আউলিয়া ঘাটের করতোয়া নদীতে গতবছর /২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে নৌকা ডুবিতে ৭২ জনের সলিল সমাধির এক হৃদয়বিদারক ট্রেজেডি এক বছর পূর্ণহলো।

গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর এইদিনে দুপুরে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট দিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবিতে ৭২ জনের সলিল সমাধি ঘটে ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।অপর ১জন নিখোঁজ বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন নিখোঁজ রয়েছে।

মৃত ৭১ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৬ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের ২জন রয়েছেন। মৃত ৭১ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৯ জন এবং শিশু ২২ জন।

মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯), শৈলবালা, সনেকা (৫৫), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র বর্মন (১৭), ধৃতি রানী দাস (১০) ও সজিব রায় (১০)।

এই সেই নৌকা সেদিন করতোয়া নদীতে এই নৌকাটি থেকে ৭২ জনের সলিল সমাধি ঘটে।

উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কৃষ্ণ কুমার জানান, বদ্বেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া পূজায় আমিসহ পরিবারের সাতজন গিয়েছিলাম। আমার বড় ভাইসহ পাঁচজন নৌকাডুবিতে মারা যান। নৌকায় অনেক লোক উঠেছিলেন। কিন্তু কেউ বলেননি, এতো লোক ওঠা যাবে না। আমরা ফেরার পথে ওই নৌকাতে ছিলাম। চোখের সামনে  সেদিনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার  কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠি।

করতোয়া নদীর দুপারের। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগীরা জানান, এ ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ চার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের কষ্ট কমে যাবে। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবির ব্রিজটি নির্মাণ হলে হয়তো ৭২ জন মানুষ মারা যেত না। আমাদের মন্ত্রী ভোটের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটির বাস্তবায়ন চাই আমরা।

করতোয়া নদী এখনো ব্রীজ হয়নি। এখানে এসে নৌকা ভেড়ায় এবং এই ঘাটে যাত্রীরা নৌকায় উঠে।

এ বিষয়ে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামীম বলেন, আওলিয়ার ঘাটের ব্রিজটি আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। কারণ করতোয়া নদীটি আওলিয়ার ঘাট অংশে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট, বড়শশী ও কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করেছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটীর মানুষ এ ঘাট দিয়ে পারাপার হন। ব্রিজটি হলে বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াত সহজ হবে এবং নিত্যদিনের ভোগান্তি কমে যাবে।