কোথায় যাবো উড়ে


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ / ১১৫
কোথায় যাবো উড়ে

মোঃ মামুন মোল্যা 

মা বাবার এক মাত্র অতি আদরের সন্তান নীল মিয়া। নীল মিয়া দুরন্ত এক ছেলের নাম। সে সব সময় ছুটাছুটি করতে ভালবাসে না, নৈকট্য সহচরদের সাথে আড্ডা সহ
খেলা-ধুলাও করতে ভালবাসে। কিন্তু সে পড়া-লেখা মোটেও পছন্দ করে না। কারণ সে মনে করে লেখা-পড়ার জীবন হল বন্দী জীবন। যেখানে কোন স্বাধীনতা নেই। খুঁজে পাওয়া যায় না কোন প্রফুল্লতার মোহনা। সে ভালবাসে মুক্ত পাখিদের মত খোলা
আকাশে ডানা মেলে উড়তে। সে ভালবাসে অকপট প্রকৃতি যেমন শ্যামলে ঘেরা সোনার বাংলার গাছ-পালা নদী-নালা,খাল-বিল, পাহাড় পর্বত সহ বনের পশু-পাখি । বিশেষ করে তার দেখা বিড়াল,কুকুর সহ পাখিদের বড্ড বেশি ভালবাসে। সে
কিছু সময় পেলেই পাশের বাড়ির পোষা পাখিদের আদর করতে ছুটে যায়। সে অন্য বাড়ির বিড়াল,কুকুর এলে ওর ভাগের খাবার তাদের খেতে দিতে একটুও কৃপণতা করে
না। সে যেদিন স্কুলে যায় সেদিন তার বাবা দুপুরে টিফিন খেতে কিছু টাকা
দেয়। সে টাকা দিয়ে নিজে টিফিন না খেয়ে পাশের বাড়ির ময়না, টিয়া পাখির জন্য কলা বিস্কুট এনে খেতে দেয়। একদিন স্কুল ছুটি দিলে বন্ধুদের সাথে বাড়ি
রওনা দেয়। বাড়ি ফেরার পথে তার বন্ধু সরবা বলিল নীল মিয়া ওই যে দ্যাখো তাল গাছে শালিকের বাসা। ওই দ্যাখো শালিক আধার নিয়ে যাচ্ছে। নীল মিয়া গাছে উঠে
দেখে সত্যি সত্যি শালিকের দুটি ছানা। সে দুটি শালিকের ছানা পেড়ে আনে। নীল মিয়া দুটি ছানা কে পোষার জন্য পাড়ে কিন্তু তার বন্ধু কিছুতে-ই খালি হাতে যাবে না। সে ও একটি ছানা জোর করে নিল। নীল মিয়া একটি শালিক ছানা বাড়ি নিয়ে আসতে তার মা বকাবকি শুরু করে দিল। তার বাবা তার মা কে বলিল তুমি বেশি বল না,আমি ওকে বোঝায় বলছি। তার বাবা তাকে বলিল পাখির ছানা কেন এনেছো ? পাখির ছানার মা-বাবা কষ্ট পাবে এবং ছনাও তার মা-বাবার জন্য
কাঁদবে,অভিশাপ দিবে তাতে আমাদের ক্ষতি হবে। কিন্তু সে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে কিংবা বুঝ নিতে রাজি নয়। সে পাখির ছানা পুষবেই। পাখির নাম আদর করে রাখিল ঝিলঝিলা। তার সিদ্ধান্তে তার মা বাবার শেষ পর্যন্ত সম্মতি হতে হল।
দেখতে দেখতে পাখির ছানাটি বেশ বড় হয়েছে। ছানাটি এখন নিজে নিজে খাবারও খেতে শিখেছে। একটু একটু উড়তে ও পারে। পাখিটি নিল মিয়া মাঝে মাঝে কিছু সময়ের জন্য খাঁচার মুখ খুলে বাহিরে ছেড়ে রাখে কিন্তু সে নীল মিয়া কে ছেড়ে কোথায়ও যায় না। যতক্ষণ ছাড়া থাকে ততক্ষণ তার পাছ পাছ
থাকে। দীর্ঘদিন পাখিটি লালন পালনে একটু একটু কথাও বলতে শিখেছে। বিশেষ করে নীল মিয়া যেখানে যায় তার পাখি ঝিলঝিলা কেও তার সাথে নিয়ে যায়। নীল
মিয়ার মামার বাড়ি পাশের গ্রাম তেলিডাঙ্গা। একদিন সে এবং তার
পাখি মামার বাড়ি বেড়াতে যায়। সে দিনটি ছিল শুক্রবার। সময় অনুমান দুপুর ২.২০ মিনিট হবে। পশ্চিম গগনে কালো মেঘের ঘনঘটা। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকায়। সেই মেঘের ডাকে তার মা- বাবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে । এলাকাবাসী সাথে সাথে
হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করে। এই খবর শুনে নীল মিয়া তার পাখি কে নিয়ে দ্রুত হসপিটালে চলে আসে। তার মার জ্ঞান ফিরলে তার ছেলে কে বলিল বাবা আমার সময় শেষ
হয়ে আসছে। তোর কাছে আমার একটা অনুরোধ, মানুষের মত মানুষ হতে হলে লেখা পড়া করতে হয়। তাই বলছি তুই মন দিয়ে লেখা পড়া কর। সমাজে বড় মানুষ হবি এই দোয়া করছি । আর ঝিলঝিলা শালিক পাখি কে ছেড়ে দিবি তা না হলে তুই ও আমাদের মত বিপদে পড়বি। কথা দে বাবা আমি যা বলছি সব পালন করবি? বলতে বলতে তার মা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। কিছু সময় পর ডাক্তার এসে বলিল তোমার বাবা মারা গেছে । এই কথা শুনে নীল মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ঝিলঝিলা পাখি নীল কে কেঁদে কেঁদে ডাকে কিন্তু সে কোন উত্তর দিল না। ঝিলঝিলা পাখির চিৎকার শুনে
হসপিটালের মানুষ এসে ভিড় জমায়। নীল মিয়া কে ডাক্তার চিকিৎসা দিলে কিছু সময়ের মধ্যে জ্ঞান ফিরে পায়। ঝিলঝিলা পাখি বড্ড খুশি হয়। নীল মিয়া তার মা-
বাবার কথা না শুনে যে ভুল করেছে সেটা সে বুঝতে পেরেছে সব হারিয়ে। নীল মিয়া আর তার মার কথার অবাধ্য হতে চাই না। তাই সে বাড়ি এসে পাখির খাঁচাটি ভেঙে ফেলে। আর মনে মনে বলে আজ যদি মা-বাবার কথা শুনে যদি মন দিয়ে
লেখা পড়া করতাম, তাহলে পাখির অভিশাপে মা-বাবার অকাল মৃত্যু হতনা। আর এতিম হয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হতনা। মায়ের শেষ নির্দেশনা মানতে যত কষ্ট হোক না
কেন মন দিয়ে লেখা -পড়া করবো এবং ঝিলঝিলা পাখি কে সে বলিল তুই আজ থেকে সম্পূর্ণ খোলা আকাশে মুক্ত। তোকে আর কখনো খাঁচায় অবরুদ্ধ করে রাখবো না।
না বুঝে তোকে কষ্ট দিছি ,দীর্ঘদিন খাঁচায় ভোরে রেখেছি। যদি সম্ভব হয় তুই আমাকে মাফ করে দিস। ঝিলঝিলা পাখি বলিল নীল মিয়া আজ আমিও তোমার মত বড্ড একা। নীল আকাশ খোলা। প্রকৃতি যদিও তুমি অনেক আগে থেকেই খুলে রেখেছো কিন্তু তখন আমার মা থাকতে মা নেই, বাবা থাকতে বাবা নেই ,আর জীবন সাথী সে তো অনেক আগেই মারা গেছে। সব হারিয়ে এখন আপন বলতে
এই পৃথিবীতে তুই ছাড়া কেহ নেই। এখন তুই বল ! তোকে ছেড়ে কোথায় যাবো উড়ে?