প্রকাশের সময় : মে ২৯, ২০২২, ২:৩১ পূর্বাহ্ণ / ১৮০

কখন উঠবে সূর্য
মো ঃ মামুন মোল্যা

মা হারানো মেয়ে সুশ্রী। বয়স মাত্র নয় বছর। এখন তার লেখা-পড়া আর খেলাধুলার সময়। সত্য মিথ্যা পৃথক করা এবং কাজ করার বয়স নয়। কিš‘ এই বয়সে প্রধান কাজ ধরা দিছে,থালা বাসন পরিষ্কার

করা,সকাল,দুপুর,সন্ধায় ভাত রাঁধা।কাজ একটু কম হলে মার পিঠে ধরে না।সুশ্রী বড় দুঃখী মেয়ে। সুশ্রীর কোন বন্ধু বান্ধবী ও ছিল না। দিন ভর কাজ আর কাজ।
রাত হলে একটু বিশ্রাম নিবার সুযোগ পায়। সুশ্রীর মনে অনেক যন্ত্রণা। কষ্টের কথা কাকে বলবে? তেমন কাউকে কাছে পেতো না। কাছে থাকার মধ্যে পাশের বাড়ির একটি বিড়াল ছিল। বিড়াল টা শুধু তার কাছে আসতো। আর কাছে গিয়ে ঘেঁষাঘেঁষি আর মুখের দিকে তাকিয়ে মেও মেও করতো। সুশ্রী তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে সে ডাকা ডাকি বন্ধ করে দিতো। আর তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইতো। বিড়ালটির তাকানো দেখে সুশ্রী বলে।

তুই বিড়াল হয়ে আমার বেদনা বুঝতে পারিস কিš‘ মানুষ আমার দুঃখ বোঝে না রে!আমার মা থাকলে ঠিকই আমার দুঃখ বুঝতো। সুশ্রী বিড়ালটি কে বল্ল তুই আজ থেকে আমার সঙ্গী। তোর নাম আজ থেকে সুখশ্রী। আমার কষ্ট আজ থেকে সব তোকে বলবো,আর তোর মনের কষ্ট সব আমাকে বলবি।সুখশী বল্ল ঠিক আছে তাই হবে। সুখশ্রী বল্ল সুশ্রী তোর কষ্টের সব কথা আজ আমাকে খুলে বল।সুশ্রী বলিল বাবার কাছে মার কথা আমি জানতে চাইলে আমাকে বলে মা নেকি মামার বাড়ি চলে গেছে। সে নেকি আর আসবে না। আমাকে যে কাজের মেয়েটি ছোট থেকে লালন পালন করে। তার কাছে জানতে চাইলে বলে মা নেকি মামার বাড়ি যাওয়ার পথে হারিয়ে গেছে। সৎ মার কাছে ও জানতে চেয়েছি।

তিনি বলে আমার মা নেকি অনেক আগে মারা গেছে। আমাকে নেকি কাজের মেয়ে লালন পালন করেছে। আর বাবা যখন বাড়ি থাকতো তখন বাবা আমাকে নেকি দেখা শোনা করতো{পাঠক আগে বলছি কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বাহির করার মত বয়স সুশ্রীর হয়নি}। আমার খুব মনে পড়ে। বাবা আমাকে অনেক ভালো বাসতো। অনেক আদর করতো। আমি কষ্ট পেলে আমার বাবার ভীষণ কষ্ট হতো;চোখ বেয়ে জল ঝরতো। আমি হাসলে আমার বাবা ও হাসতো। আমার সুখের জন্য বাবা আর একটা বিবাহ করে। আমার বাবার ভালোবাসা পাবার জন্য নতুন মা আমাকে অনেক আদর যতœ করতো। আমি যা আবদার করতাম তা পূরণ করতে ভীষণ ব্যাকুল হয়ে যেতো। আমি আমার মা হারানো শোক ভুলেই গেছিলাম প্রায়। বাবা আমার আনন্দ দেখে খুব আনন্দিত হতো। সৎ মা একদিন তার বাবার বাড়ি

বেড়াতে গেলো। বাবা আমাকে ডেকে তার কোলে বসিয়ে আমাকে আদর করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো মা সুশ্রী আমি ঢাকায় যাবো আগামী জানুয়ারি মাসে। তোমাকে একটা কথা বলছি তুমি তোমার মার কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনবে। আর যদি তোমাকে কোন কিছু বলে আমি আসলে আমাকে বলবে। আমি এসে তার বিচার করবো। তুমি শুধু লক্ষী মেয়ের মতো মন দিয়ে লেখা-পড়া করবে! তুমি আমাকে কথা দাও? ঠিক আছে বাবা তাই হবে। বাবা ঢাকা চলে গেল।আমার উপর নির্যাতন ও শুরু হলো। প্রতিবাদ করতেই বাবার কথা পইপই মনে পড়ে যায়। সুখশ্রী বলিল বুঝতে পেরেছি তোর মনের কষ্ট।

এখন যা বলি মন দিয়ে শোন। তোর মা মারা যায়নি এবং হারায় ও যায়নি। তোর বাবা ঠিক বলেছে। তোর মা তোর মামার বাড়ি আছে। তোর মা বাবা সম্পর্ক করতো। সেটা তোর নানা মেনে নেয়নি। তার পর তারা পালিয়ে বিবাহ করে। তোর বয়স যখন ছয় বছর। তখন তোর নানা ভাই তোর মাকে ফোন দিয়ে বলছিল মা যা হবার হয়েছে এখন আমি সব ভুলে গেছি। তোর মেয়েরে আমারে দেখায় যা। এই কথা শুনে তোর মা বাবা খুব খুশি হয়। তার পর তোর মা বাবা বেড়াতে গেলো। তার পর তোর মাকে রেখে তোর বাবার কাছে তোকে দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে তিন বছর তোর মা তোর নানার বাড়িতে রয়েছে।তোর মা তোর নানার বাড়ি থাকা অব¯’ায় দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যুদ্ধ চলছে প্রায় ছয় মাস।তোর বাবা একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা। প্রথম থেকে তোর বাবা একজন গুপ্তচর মুক্তিযুদ্ধা। সেই কথা রাজাকার বাহিনী পাকবাহিনী কে বলে দিলে তোর মাকে ধরতে তোরনানার বাড়ি যায়।পাকবাহিনী তোর মাকে ধরে নিতে চাই। তোর নানা ধরে নিতে বাধা দিলে গুলি করে মেরে ফেলে। তোর মামাও বাধা দিতে তাকেও গুলি করে মেরে

ফেলে। তার পর তোর মাকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এই খবর শুনে তোর বাবা তোর নানার বাড়ি ছুটে যায়। কিš‘ তোর মা কে কোথায় ধরে নিয়ে গেছে সেই সন্ধান পায় না।তার পর তোকে দেখতে এক নজর বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসে দেখে তোকে যে লালন পালন করতো,সেই কাজের মেয়েকেও পাকবাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। তারও কোন খবর নেই। তোকে কে দেখবে? তোকে দেখার জন্য আর একটা বিবাহ করে। তোর সৎ মার কাছে তোকে রেখে আবার তোর বাবা ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যায়। এখন বাংলাদেশ প্রায় স্বাধীনের পথে।সুশ্রী বলিল তুই যে এত কিছু বল্লি আমি কি ভাবে বিশ^াস করবো? শুখশ্রী বলিল তুই আমার মালিক রহমাতের কাছে গিলে সব জানতে পারবি। কি তুই যাবি? সুশ্রী বলিল হ্যা আমি যাবো। সুখশ্রী তাকে সাথে নিয়ে রহমাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সুশ্রী সব খুলে বল্লে

রহমাত বলিল হ্যা মা সব সত্যি। আমি ও আজ ঢাকা যাবো যুদ্ধ করতে। সুশ্রী বলিল মালিক আমাকে সাথে নিবে? রহমাত বলিল তুমি ছোট্ট মেয়ে সেখানে গিয়ে কি করবে? সুশ্রী বলিল মালিক আমি আপনাদের পানি এগিয়ে দিবো। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে চাই। আমি পাকিস্তানের পতন চাই। যারা যুবতী এবং দুধের
বা”চার মা কে ধরে ধর্ষণ করে নির্য়াতন করে এবং মেরে ফেলে তাদের পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা মালিক।আমার মা হারিয়েছি। নানা ভাই,মামাও প্রাণ দিছে
এই মহান মুক্তি যুদ্ধের জন্য। বাবাও হারিয়ে গেছে।

এখন যদি আমাকেও হারাতে হয় আমি হারাতে চাই।তবু দেশকে স্বাধীন করতে চাই হারাম জাদাদের হাতথেকে। রহমাত বলিল তোমার মতো সাহসী সন্তানআছে বলে আমরা স্বপ্ন দেখি দেশকে স্বাধীন করার। সুশ্রী আমি তোমাকে অবশ্যই নিবো। রহমাত
সুশ্রী কে নিয়ে ঢাকা চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। ঢাকার মুক্তিযুদ্ধাদের কাছে যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকবাহিনী অত্মসর্মাপনকরে। এই ভাবে এক এক করে ঢাকা ,চট্রগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, বিভাগস্বাধীন হয়।

বাকি থাকে শুধু খুলনা বিভাগ। ঢাকা থেকে মুক্তিবাহিনী খুলনা চলে যায়। সেখানে গিলেসুশ্রীর বাবার সাথে দেখা হয়। সুশ্রী তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলিল বাবা তুমি বেঁচে আছো? বাবা আমার মা কোথায়? হ্যা মা আমি বেঁচে আছি। সুশ্রী আমি যতটুকু জেনেছি তোমার মাকে রাজাকার ধরে পাকবাহিনীর কাছে দিছে। তার পর নেকি তারা ধর্ষণ করে হাত মুখ বেঁধে রুপসা নদীতে ভাসিয়ে দিছে। এই খবর শুনে আমি ঢাকা থেকে খুলনা চলে আসি। যারা তোমার মাকে সহ লক্ষ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম লয় করে মেরেছে তাদের অনেক কে মেরেছি। আর যারা বাকি আছে আজ ওদের আক্রমন করবো সব মুক্তিবাহিনী।

 

সুশ্রী বলিল বাবা আমি ও যুদ্ধ করবো। বাবা বলিল ঠিক আছে চলো। সেখানে মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে বাবা মেয়ে যুদ্ধ করে। দীর্ঘ দিন যুদ্ধ চল্লে হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৬ ডিসম্বর মহান বিজয় অর্জিত হয়। পাকহানাদার এবং এ দেশীয় দোসরদের হাত থেকে খুলনা অঞ্চল কে মুক্ত করতে অতিরিক্ত আরো একটি দিন মুক্তিকামীদের মরণ পণ লড়তে হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতার সূর্য ওঠে বাংলারআকাশে।লাল সবুজের কেতন পানে অবাক তাকায় সুশ্রীরা।