ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সভাপতির ভাতিজা ও প্রধান শিক্ষকের বোনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৮, ২০২৩, ৭:২৮ অপরাহ্ণ / ৭৮
ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সভাপতির ভাতিজা ও প্রধান শিক্ষকের বোনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান

মাজাহারুল ইসলাম পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ– পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেরার শারবাহানহাট ইউনিয়নের বোয়ায়ালমারি বারিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষষ নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানের বিস্তর অবিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  ফলাফল না টাঙিয়ে স্থানীয় জনতার রষাণলে পড়ে পালিয়ে গেছে নিয়োগ কমিটি। ফলাফল ঘোষণা না করায় বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থী ও স্বজনরা তাদের অবরুদ্ধ করে। একপর্যায়ে কৌশলে এক এক করে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান নিয়োগ কমিটির সদস্যরা। নিয়োগ জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতি করে বিদ্যালয়ের সভাপতির ভাতিজা ও প্রধান শিক্ষকের বোনকে নিয়োগ দেন। এ ঘটনায় অন্য চাকরিপ্রার্থীসহ স্বজনরা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন। পরে স্থানীয় আ.লীগ নেতৃবৃন্দরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।সোমবার (২৭ মার্চ) জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহানহাট ইউনিয়নের বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।

জানা গেছে, বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চারজন, অফিস সহায়ক পদে সাতজন ও পরিছন্নতাকর্মী পদে পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন। সোমবার বিকেলে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ দুই সহকারী শিক্ষক এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কথায় সাজানো পরীক্ষা গ্রহণ করেন। ফলাফল না টাঙিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রথমে নিয়োগ কমিটি ও পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কৌশলে একে একে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে তার আপন বোন জেবুন বেগমকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আকবর আলী তার আপন ভাতিজা ইমরান খানকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেন। পরিছন্নতাকর্মী পদে আরজু বেগমকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেন। পরীক্ষার আগেই এসব পদে তাদের চাকরি হবে বলে প্রকাশ পেয়েছিল।

অফিস সহায়ক পদের পরীক্ষার্থী নির্মল চন্দ্র, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের পরীক্ষার্থী হুসনেয়ারা ও ফরহাদ হোসেন জানান, টাকার বিনিময়ে তাদের নিজেদের লোককে নিয়োগ দেবে এটা আমরা আগেই শুনেছি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছিল লোক দেখানো। টাকা খেয়েছে বলে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা বা টাঙিয়ে না দিয়ে সকলেই পালিয়ে গেছেন।
তাদের দাবি, গত ১৯ মার্চ এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। চাকরিপ্রার্থীরা বিদ্যালয়ে দিনভর থেকে ফিরে যান। সেদিন পরীক্ষা নেননি।

 

 

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমীন জানান, নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে টালবাহানা চলছিল। বিভিন্নজনের কাছ থেতে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা মৌখিক পরীক্ষার কোনোটাতেই স্বচ্ছতা ছিল না।

 

 

শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি জাকির হোসেন জানান, ফলাফল ঘোষণার দায়িত্ব হচ্ছে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি আকবর মুহুরি এবং প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার। আমরা ফলাফল প্রকাশ করিনি তবে আমরা ফলাফল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির হাতে দিয়ে এসেছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী জানান, নিয়োগ কমিটি পালিয়ে যায়নি। এই নিয়োগ পরীক্ষা সঠিকভাবে নিয়ম মেনে হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের।

 

 

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ও সভাপতি আকবর আলী বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের বোন-ভাতিজা নিয়োগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল টাঙানো হয়নি বা ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে রাতে ফলাফল টাঙানো হয়েছে। যেহেতু নিজস্ব লোক নেওয়া হয়েছে তাই কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি বলেও জানান তারা।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ফোনে চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তবে আমি লিখিত অভিযোগ পাইনি। নিয়োগসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করতে পারেন।