১২ বিশ্ববিদ্যালয়ের, শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হবে


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ৭:১৫ অপরাহ্ণ / ৯০
১২ বিশ্ববিদ্যালয়ের, শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হবে

সেলিম রানা:-    স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০১১ সাল থেকে একের পর এক আলটিমেটাম। ১২ বছর পর আইন মেনে এখনো সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

আলটিমেটাম এখনো চলছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। বছরের শুরুতেই এই নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

বর্তমানে দেশে ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইনানুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর ও অন্য এলাকায় দুই একর জমি থাকতে হবে। ২০১০ সালে সংশোধিত আইন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দুই যুগ পার হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে সাময়িক অনুমতিপত্র বাতিল বা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিধান থাকলেও নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। সময় বাড়িয়ে শুধুই আলটিমেটাম। তবে এবার শুধু কাগুজে আলটিমেটাম নয়, বাস্তবেও দেখা যাবে এমনই বলেছেন এক কর্মকর্তা।

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না অন্তত ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে, এই ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হবে। তথ্য অনুযায়ী, ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ  ইউনিভার্সিটি, সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস স্থায়ী ক্যাস্পাসে যেতে পারবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ ইউজিসিকে এমন তথ্যই জানিয়েছে।

তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরো সময় চেয়েছে। যদিও এবার স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে ইউজিসি—এমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুখ জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিপলস ইউনিভার্সিটি ইউজিসিকে জানিয়েছে,  নরসিংদী সড়কে সংস্কার কাজ থাকায় জানুয়ারিতেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না। আর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হলেও এলসি বন্ধ থাকায়  লিফট আনতে পারছে না। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা যাচ্ছে না।

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ গাজীপুরে ৩ দশমিক ৮২ একর জমি কিনেছে। তবে তাদের জমিটি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কাছে হওয়ায় বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ভবনের নকশা অনুমতি না হওয়ায় নির্মাণকাজ শুরু করেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আবারও ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আরো তিন বছর সময় চেয়েছে। স্টেট ইউনিভার্সিটি সময় চেয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। আর গ্রীন ইউনিভার্সিটি এখন তথ্য জানায়নি।

মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডেশনের জায়গা নিয়ে সমস্যা থাকায় যথাসময়ে নিজস্ব জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হবে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি  সময়ে চেয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আশা ইউনিভার্সিটি সময় চেয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। সময় চেয়েছে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিও।

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয়। আইন পাশ হওয়ার পর একই বছর ‘রেড এলার্ট জারি’ করে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ঐ সময় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগই নেয়নি। পরে দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালে, চতুর্থ দফায় ২০১৫ সালের জুন এবং পঞ্চম দফায় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে গরিমসি করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইন না মানার প্রবণতা তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষাপটে ২৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, যা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে ।