১০ ডিসেম্বর’ ঘিরে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২২, ৮:১০ অপরাহ্ণ / ৮১
১০ ডিসেম্বর’ ঘিরে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সেলিম রানা নিজস্ব প্রতিবেদক:-

# দফায় দফায় বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

# ছুটি না নেওয়ার নির্দেশ পুলিশ সদস্যদের

# নজরদারিতে নাশকতা মামলার আসামিরা

# সুশৃঙ্খল সমাবেশে সহায়তা করবে পুলিশ

বিএনপির ‘ডেডলাইন ১০ ডিসেম্বর’ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত। কী হবে এদিন, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। রাজনীতির মাঠে এ ‘ট্রাম্পকার্ড’ প্রথম খেলেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান। গত ৮ অক্টোবর ঢাকার এক সমাবেশে তিনি হঠাৎ ঘোষণা দেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়…।’ তার এমন বক্তব্যে শুরু হয় তোলপাড়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া যেখানে রাজনীতির মাঠেই নেই, সেখানে তার কথায় দেশ চলবে—এমন বক্তব্যে নড়েচড়ে বসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। তবে সেখানেই থেমে থাকেনি বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমানউল্লাহ আমানের সুরে বক্তৃতা করেন। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও। হঠকারী কোনো কর্মসূচি করা থেকে বিরত না থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে অনড় বিএনপিও। তারা ঢাকার রাজপথ দখলের বার্তা দিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। ফলে প্রশ্ন একটাই- কী হতে চলেছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হওয়া ১০ ডিসেম্বরে?

বিএনপির তর্জন-গর্জন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের পাল্টা হুঁশিয়ারি—দুপক্ষের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে সতর্ক পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তৎপরতা বাড়াচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। চলতি মাসের শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দফায় দফায় বৈঠক হতে পারে বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র। বৈঠকে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

তবে আন্দোলন-সংগ্রাম বা গণসমাবেশের নামে রাজনৈতিক কোনো দল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও গাড়িতে আগুন দিলে কঠোর অবস্থানে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে দেশজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে সংস্থাগুলো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছুটি না নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আগেও জ্বালাও-পোড়াওয়ে জড়িত থাকার অভিযোগের নাশকতার মামলাভুক্ত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সবমিলিয়ে ওইদিন সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করবে দলটি। সেখানে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা’ তুলে ধলা হবে। তারেক রহমান যে জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে বিএনপি। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে যে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করেছিল বিএনপি, সেটা শেষ হবে ঢাকার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। ফলে এ গণসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, প্রস্তাবিত রূপরেখায় ২০১৭ সালের ১০ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’-কে কেন্দ্রে রেখেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তন করা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বন্ধ, বিদ্যুতে আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে আনা।

নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতিও চেয়েছে। সমাবেশের অনুমতি চাইতে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যান বিএনপি নেতারা। বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু।

কমিশনারের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখে আমাদের গণসমাবেশ রয়েছে, সেই অনুমতির জন্যই আমরা এখানে এসেছিলাম। পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ গণসমাবেশের অনুমতি চেয়েছি। এটা ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। আমরা বলেছি, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না। পুলিশও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। তারা বলেছেন সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে পরে জানাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, বিভাগীয় গণসমাবেশের সময় সব গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছি, এভাবে পরিবহন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের সমাবেশে যারা আসবেন, তাদের যেন বাধা না দেওয়া হয়। তাদের ওপর যেন কোনো আক্রমণও না করা হয়। আমারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। আমরা দেখেছি, যুবলীগ সমাবেশ করেছে। সারাদেশ থেকে ঢাকা শহরে গাড়ি এনে ভরে রেখেছে। আমাদের সমাবেশে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। সে বিষয়গুলো আমরা কমিশনারকে বলেছি। আমরা চেষ্টা করবো সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য। কেউ যেন বাধা না দেয়।’

তিনি বলেন, ‘ডিএমপির পক্ষ থেকে গণসমাবেশের বিকল্প স্থানের কথাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছি, এটা আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

‘ঝুঁকি বিশ্লেষণ’করছে ডিএমপি, অনুমতির সিদ্ধান্ত পরে

বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চাইলেও তাৎক্ষণিক অনুমতি মেলেনি। ডিএমপি জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য জানান। কবে নাগাদ অনুমতি দেওয়া হতে পারে, তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

ডিএমপির এ উপ-কমিশনারের ভাষ্য, ‘বিএনপি ঢাকা বিভাগে গণসমাবেশ করতে চায়। সেটার অনুমতির জন্য দলের নেতারা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। তারা সমাবেশের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেছেন। আমরা লিখিত দরখাস্ত পেয়েছি। এখন সেটি বিবেচনা করে দেখবো অনুমতি দেওয়া যায় কি না। আমাদের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখবো কোনো ধরনের ঝুঁকি রয়েছে কি না।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগের বিষয়ে উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এরকম কাউকে গ্রেফতার করিনি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাদের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতার অভিযানও চলছে না। তবে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা আছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর বার্তা

বিএনপির আন্দোলন থেকে জ্বালাও-পোড়াও করা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপির সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন সরকারপ্রধান। ২০তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাসমালিকরা যদি বাস না চালান, তাহলে আমরা কী করতে পারি? তারা (বিএনপি) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। যাদের অবস্থা এমন, তাদের জনগণ কি ভোট দেবে?’

আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যদি কেউ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিংবা গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করে, জনগণের দুর্ভোগ তৈরি করে, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় সভা-মিছিল ও সমাবেশ করছে। আমরা বলেছি, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শৃঙ্খলা মেনে তারা (বিএনপি) যদি সবকিছু পরিচালনা করতে পারে, তাহলে আমাদের তো সমস্যা নেই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে কিংবা চলাচলে বিঘ্ন ঘটে বা জানমালের ক্ষতি করে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজটি করবে।’

পুরোনো রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুরোনো মামলা তো রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলা তো যুগ যুগ ধরে রাখবো না। তবে নতুন করে কিছু হচ্ছে না।’

লাঠিসোটার বিরুদ্ধে ‘খেলার ঘোষণা’

লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে খেলায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে ‘খেলা হবে’ উল্লেখ করে বিএনপিকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর রাস্তায় বের হবে। ১০ ডিসেম্বর নাকি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিজয় মিছিল করবে। তার মানে লাঠিসোটা নিয়ে নামবে। এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেবো না।’

তিনি বলেন, ‘বাড়াবাড়ির কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন ভালো কথা। কিন্তু সেখানে শেখ হাসিনার নামটা পর্যন্ত শালীনতার সঙ্গে উচ্চারণ করেন না। বলেন, হাসিনা হাসিনা..। এমন শিষ্টাচার-বহির্ভূত বক্তব্য দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

১০ ডিসেম্বর রাজপথ দখলে নেবে যুবলীগ

বিএনপির ‘ডেডলাইন ১০ ডিসেম্বর’ ঘোষণা দেওয়ার পর পাল্টা ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ যুবলীগ। তারা ১০ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথ দখলে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ গত ৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের এক প্রস্তুতি সভায় এ কথা জানান।

শেখ পরশ বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনাদের মোকাবিলা করতে যেকোনো দিন, যেকোনো সময় যুবলীগ প্রস্তুত। চ্যালেঞ্জ দিলাম এবং আপনাদের জবাবের অপেক্ষায় রইলাম। ১০ ডিসেম্বর আমরাও রাজপথে আপনাদের অপেক্ষায় থাকব। দেখি শেখ হাসিনাকে কে উৎখাত করে?

সতর্ক পুলিশ, নজরদারিতে নাশকতাকারীরা

১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিএনপির ‘তোড়জোড়’। আওয়ামী লীগের পাল্টা হুঙ্কার। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত এড়াতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে একমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশের অধীনস্থ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর করা হচ্ছে। ছুটি নিতে পুলিশ সদস্যদেরও নিরুৎসাহিত করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নতুন কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ৬ নভেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে ১০ ডিসেম্বর প্রসঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিস্তর আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা উঠে আসে। ওইদিন ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজধানীতে বেশকিছু বড় বড় সমাবেশ হয়েছিল। সেসব সমাবেশে আগুন-সন্ত্রাস মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা। ওইসময় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহিনীর অনেক সদস্য জীবনোৎসর্গও করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে, জানমালের ক্ষতি করে, বোমাবাজি করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এগুলো দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে ডিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা।’

তবে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশঙ্কা না থাকলেও আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। যারা এ ধরনের কাজ (নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও) করতে পারে তাদের ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের কোনো বৈধ রাজনৈতিক দল সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করলে পুলিশই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে সমাবেশের নামে যদি কেউ নাশকতা বা সহিংসতার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে আমরা কঠোর হাতে আইন প্রয়োগ করবো। জানমাল ও জনসাধারণের ক্ষতিসাধন করলে কেউ ছাড় পাবে না।’

সহিংসতায় ৯ মাসে ৫৮ প্রাণহানি

২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে বিরোধী দলগুলো তৎপর হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করছে তারা। এসব মিছিল-সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা অনেক সময় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনাও বাড়ছে। স্থানীয় নির্বাচন ঘিরেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি ঘটছে। গত ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩৮৭টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এমন তথ্য জানিয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত সময়ের মধ্যে (৯ মাস) সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়। কুমিল্লায় ২৫টি সহিংসতার ঘটনায় দুজন নিহত এবং ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। এরপরে রয়েছে চট্টগ্রাম। এ জেলাতে ২৩টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন নিহত ও ৩০২ জন আহত হন।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদন বলা হয়েছে, শুধু সেপ্টেম্বরেই দেশে ৫০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে একটি সহিংসতার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯০১ জন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৮ জন, যারা সবাই গুরুতর আহত হন।