সিলেটে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে ১৪ শ্রমিক নিহত


প্রকাশের সময় : জুন ৭, ২০২৩, ৪:২৬ অপরাহ্ণ / ৯৯
সিলেটে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে ১৪ শ্রমিক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক  সিলেট :-  সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ট্রাকের সঙ্গে পিকআপের মুখোমু‌খি সংঘর্ষে নারীসহ ১৪ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬ জন। বুধবার (৭ মে) ভোর সাড়ে ৫টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাজির বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫), নেত্রকোনার বারোহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৪৬), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে শাহিন মিয়া (৫০), একই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হারুণ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), তলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে আউলাদ তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৫০), একই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৯), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৬০), সাগর আহমদ (১৮), উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত সোনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), গছিয়া গ্রামের মৃত বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৩৫), কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫)।

আহতদের মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক পাপ্পু দাশ (২৩), পলক আহমদ (২২), মিহির মিয়া (২৫), মিজান মিয়া (২৬), ওয়াহিদ (৩৫), রনি মিয়া (৩০), জমির হোসেন (৩১), আনোয়ার হোসেন (৩৫), আব্দুল কাদির (৬০) সাফিন আহমদ (২৫), ওয়াহিদ আলীর (৪০) পরিচয় মিলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসমানীনগরের তাজপুরে একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের জন্য আম্বরখানা বড়বাজার থেকে ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছিল পিকআপ। পথে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। দুর্ঘটনার পর নাজিরবাজারের দুদিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে ১১ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরও তিনজন মারা গেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। সকাল ৭টা পর্যন্ত ১১ জনের মরদেহ ও অন্তত ১০ জন গুরুতর আহতকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠাই। আমরা আসার আগে স্থানীয়রা আরও আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

এদিকে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি চলছে। শোকে মুহ্যমান হয়ে গেছেন অনেকে। দীর্ঘদিনের কাজের সহকর্মীর মরদেহ দেখে শ্রমিকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্ঘটনার পর ১৬ জনকে হাসপাতালে আহত অবস্থায় আনা হয়। এরমধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এখানে আনার পরপরই ২ জন এবং ভর্তি করার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে গুরুতর অবস্থায় একজন আইসিইউতে আছেন। অন্যরা মোটামুটি শঙ্কামুক্ত। তবে প্রত্যেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে। কেউ কেউ আবার মাথা ও বুকে আঘাত পেয়েছেন।

খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন সিলেটে সফররত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

এসময় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে। এরপরও কিছু মানুষের ভুলের কারণে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আজকের এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার আমি শান্তি কামনা করছি। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালের পরিচালককে বলেছি। চিকিৎসকরাও আহতদের আন্তরিকভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এ মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। নিহত প্রত্যেকের দাফন-কাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন।