সাগরে নির্বিচার ধরা হচ্ছে মাছ বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ


প্রকাশের সময় : জুন ৯, ২০২২, ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ / ৪৫৫
সাগরে নির্বিচার ধরা হচ্ছে মাছ বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ

ভোলায় দিন দিন সাগরগামী জেলের সংখ্যা বাড়ছে। আগে যে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতেন, তাঁরা এখন নদীতে মাছ না পেয়ে সাগরের দিকে ছুটছেন। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটের (ট্রলার) সংখ্যা নিকট অতীতের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। ট্রলার আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযান (ট্রলিং জাহাজ) বেড়ে যাওয়ার কারণে সাগরে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নদীর মতো সাগরেও মাছ কমে যাচ্ছে।

জেলেদের কথাতেও উঠে আসছে নদী ও সাগরে মাছের সংকট প্রকট হওয়ার ব্যাপারটি। নদী ছেড়ে যে আশায় সাগরে জাল ফেলছেন জেলেরা, সেই আশাতেও এখন গুড়ে বালি। দিনের পর দিন তেল খরচ করে ট্রলার নিয়ে জেলেরা প্রত্যাশিত পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন না সাগরে। ফলে জীবিকার সংকট কাটছে না।

 

সাগরে ট্রলারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে লাভ না ক্ষতি সেটি গবেষণা না করে বলা মুশকিল। তাঁরা টেকসই মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে কাজ করছেন।
আজহারুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ভোলা
সাগরে মাছ ধরতে নৌযান শুধু নিবন্ধন থাকলেই হয় না। সাগরে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রশাসনের অনুমতিও নিতে হয়। এসব নিয়মও মাছের বংশ রক্ষায় কাজে দিচ্ছে না। নতুন যেসব নৌযান সাগরে মাছ ধরছে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নির্বিচার সব আকারের মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয়ে তদারকি বা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। নির্বিচার সাগরে মাছ শিকার হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরও নদীর মতো মাছশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ভোলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, সাগরে মাছ ধরার কাজে কাঠের তৈরি ট্রলার, মাঝারি কাঠের ট্রলার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ব্যবহৃত হয়। নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত কাঠের নৌযানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭১৫। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা এই হিসাবের অনেক বেশি। স্থানীয় সূত্র জানায়, অগভীর সাগরে মাছ ধরার কাজে যুক্ত আছে ৬০-৬৫ হাজার নৌযান। গভীর সাগরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার দিয়ে ভোলার জেলেরা মাছ না ধরলেও অগভীর সাগরে মাছ ধরতে যান। সাগরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযান আছে ২৫১টির মতো।

সূত্র আরও জানায়, ভোলায় বর্তমানে সমুদ্রগামী ট্রলার বা ফিশিং বোটের সংখ্যা ৮ হাজার ৭৬৫। এর আওতায় থাকা জেলেরা ২০২০-২১ অর্থবছরে মাছ আহরণ করেছেন প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন, যার ৭০ শতাংশ ইলিশ মাছ। ভোলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৭। এর মধ্যে ভোলায় সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫৪।

ভোলার একজন প্রবীণ জেলে মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী এবং দৌলতখান পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরও। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে যুবক বয়সে সাগরের উদ্দেশে যখন ফিশিং বোট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন পুরো ভোলায় মাত্র ১২টি ফিশিং বোট সাগরে যেত। এর বাইরে একমাত্র কক্সবাজারের তীরে কিছু বোট দেখা যেত। আর এখন দৌলতখান উপজেলাতেই আছে হাজারের ওপর ফিশিং বোট। মৌসুমে মাঝারি ট্রলারগুলো সমুদ্রে যাচ্ছে মাছ ধরতে। নদীতে মাছ কমে যাওয়ার কারণেই জেলেরা সাগরে ছুটছেন। এর একটা নিয়ন্ত্রণ দরকার।

৬ জুন ভোলার কয়েকটি মাছঘাটে গিয়ে সমুদ্রগামী জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে প্রায় সারা বছরই নিষেধাজ্ঞা, অভিযান, অবৈধ জাল ও জেলের সংখ্যা বৃদ্ধি, একটু পরপর ডুবোচর, সাগর মোহনায় চরের কারণে নদীতে মাছ কমে গেছে। মাছ যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তেলখরচ উঠছে না। তাই ক্রমে সাগরগামী জেলের সংখ্যা বাড়ছে।

ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘নদীতে যেমন অবৈধ মশারি জাল, বেড়জাল, বেহুন্দি জাল, চরঘেরা জাল ইলিশসহ মাছের বংশ ধ্বংস করছে, তেমনি ট্রলিং জাহাজগুলো সাগরের ৩০০ প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস করছে। সাগরে সাদা বা বড় মাছ ও চিংড়ি মাছ ধরার জন্য জালের ফাঁসের আকার যথাক্রমে ৬০ মিলিমিটার ও ৪৫ মিলিমিটার নির্ধারিত থাকলেও অনেকে ট্রলিং জাহাজ এটা মেনে চলছে না। এসব নৌযানে মাছ শিকারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার।’

জানতে চাইলে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে ট্রলারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে লাভ না ক্ষতি সেটি গবেষণা না করে বলা মুশকিল। তাঁরা টেকসই মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে কাজ করছেন। অর্থাৎ মাছ এমন পরিমাণে ধরতে হবে, যেন সংকট না পড়ে। উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাগরে ৬৩ দিনের (২০ মে-২৩ জুলাই) নিষেধাজ্ঞা অভিযান চলমান রয়েছে। এতে শুধু মাছের প্রজনন নিশ্চিত হবে এমন নয়, মাছ অবাধে বেড়েও উঠবে।