সহপাঠীদের হাতে খুন, পুলিশি তদন্তে ‘অনাস্থা’ পরিবারের


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ৯:০৮ অপরাহ্ণ / ৭৩
সহপাঠীদের হাতে খুন, পুলিশি তদন্তে ‘অনাস্থা’ পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রীমঙ্গল:-  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে স্কুলছাত্র ফাহাদ রহমান মারজান (১৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অপমৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এতে জোর আপত্তি জানিয়েছেন ফাহাদের পরিবার।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের টি ভ্যালী রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ফাহাদের বাবা ফজলুর রহমান এ আপত্তির কথা জানান।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে নিহত ফাহাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর (মোবাইল ডাটা রেকর্ড) যাচাই-বাছাই করে সন্দেহজনক ১৫ জনের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে কয়েকজন ফাহাদের স্কুলের সহপাঠী বলে নিশ্চিত করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামান। পরবর্তীতে ওই তদন্ত কর্মকর্তা ট্রেনের আঘাতে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অপমৃত্যু মামলার চূড়ান্ত  প্রতিবেদন দেওয়ার কথা জানালে নিহত ফাহাদের পরিবার জোর আপত্তি তুলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফাহাদের বাবা বলেন, শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানায় দায়ের করা অপমৃত্যু মামলায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা সিডিআর রিপোর্ট (মোবাইল ডাটা রেকর্ড) আসার পর তাদের ডেকে নিয়ে জানান, সিডিআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন ফাহাদকে তার সহপাঠী মুন্না, টিআরজি মাহিন, রাব্বি, ডিজে ইরফান, ফুয়াদ, মান্না, মুরাদ, তানভীর, শাহরুখ, তানজিল, ইফতি, আরাফাত, সুমন, জুম্মন, জাহিদ ডন-সহ আরও কয়েকজন মিলে হত্যা করেছে। তারা শহরের সোনা মিয়া রোড লুৎফা এলাহী কমপ্লেক্সে (এহসান করিম মঞ্জিল) একত্র হয়ে ফাহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ফাহাদের পিতা আরও জানান, পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসার পর অপমৃত্যুর মামলার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন করা হবে জানিয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট হাতে আসার পর ট্রেনের আঘাতে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রেলওয়ে থানার ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী ও তদন্ত কর্মকর্তা। তারা অপমৃত্যু মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন।

এ নিয়েই আপত্তি উঠে ফাহাদের পরিবারে। ফাহাদের বাবা জানান, পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টে মাথায় আঘাত ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাটের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কপালে ও পায়ের নিচে আঘাতের উল্লেখ রয়েছে।

ফাহাদের পিতার অভিযোগ, সিডিআর রিপোর্টের পর এ হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে তদন্ত কর্মকর্তা ও রেলওয়ে থানার ওসি সন্দেহভাজন আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আর্থিক লেনদেন করেছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা এসব সিডিআর সংগ্রহের জন্য তাদের নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছেন। মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার কারণে তদন্ত কর্মকর্তা ও ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বা র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মতো সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন ফাহাদের পিতা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামানকে কল দেওয়া হলে তিনি আসামিদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে মামলার তদন্ত চলছে বলে লাইন কেটে দেন।

অপরদিকে, রেলওয়ে থানার ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে অন্য এক কর্মকর্তা জানান, তিনি (ওসি) অভিযানে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ফাহাদ স্থানীয় শাহ মোস্তফা ইসলামিয়া হাইস্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর তার প্র্যাকটিক্যাল (ব্যবহারিক) পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ওই দিন ভোর রাতে পরিবারের অজ্ঞাতে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের অদূরে শাহীবাগ রেল লাইনের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় ফাহাদকে। পরে তাকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে সেখানে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা যার নং ২৫/২২ দায়ের হয়।