সরকারের ‘বিদায়ে’ নতুন কর্মসূচি শনিবারই: মোশাররফ


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ৭:৩৭ অপরাহ্ণ / ৯৩
সরকারের ‘বিদায়ে’ নতুন কর্মসূচি শনিবারই: মোশাররফ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:-  ফখরুল-আব্বাসসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়ার পর ‘সরকার পতনে’ বিএনপি নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেছেন, “১০ ডিসেম্বর থেকে আমরা আগামী দিনে এই সরকারের বিদায়ের জন্যে কতগুলো চার্টার অব ডিমান্ড বা দফা আমরা ঘোষণা করব। আমাদের সাথে যারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত- ইতিমধ্যে আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে।

“আমরা আশা করি, তারা যুগপৎভাবে আমরা যে ১০ দফা প্রণয়ন করেছি, তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘোষণা করবেন। যার যার অবস্থান থেকে তারা ভবিষ্যতে এই দফাগুলোর দাবিতে আন্দোলনকে শাণিত করে যুগপৎভাবে আন্দোলন আসবেন।”

শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর শুক্রবার বেলা ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে, যাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।

তারপর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নয়া পল্টনে সমাবেশ করার অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “শুক্রবার দুপুরে আমাদের দলের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার বরাবর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য পুলিশ সম্মতি দেয়।

“অতএব ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার ঢাকা মহানগরীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টায় এই সমাবেশ শুরু হবে।”

এই কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।

“আমি আপনাদের মাধ্যমে আমাদের সকল নেতাকর্মী, সমর্থকদের আহ্বান জানাতে চাই, আগামীকাল শান্তিপূর্ণভাবে

গোলাপবাগের মাঠে সমাবেশে উপস্থিত হবেন। ঢাকাবাসীর প্রতি আমাদের আহ্বান এই যে, স্বৈরাচারী গায়ের জোরের সরকার- ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে অপচেষ্টা করছে, তার প্রতিবাদ জানাতে আপনারা সমাবেশে দলে দলে যোগ দিন।”

জ্বালানি তেলের মূল্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের ‘গুলি করে হত্যা’, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সরকারের এত ষড়যন্ত্র, গ্রেপ্তার-মামলার পরও ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে জনতার ঢল নামবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

ঢাকার সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে সরকার শুরু থেকেই ‘গড়িমসি’ করেছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে।

“আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও তারা অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণোদিত হয়ে- পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীনভাবে ২৬ শর্তে গণসমাবেশের যে সম্মতি দিয়েছিল তা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গত কারণে আমরা প্রত্যাখান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেওয়ার যে অনুরোধ জানিয়েছি, তাতে তারা সায় দিতে গড়িমসি করেছে। যা আপনারা সকলে অবহিত আছেন।”

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।

বিএনপি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।

এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।

দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ওপর ‘পুলিশি হামলা-গুলিবর্ষণ’, মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জহির উদ্দিন স্বপন, কায়সার কামাল, নাজিম উদ্দিন আলম, নিলোফার চৌধুরী মনি, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।