এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম আইনের চোখকে বলেন, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় কম হলেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করতে তেমন বড় সমস্যা হচ্ছে না। কোভিড–পরবর্তী অবস্থা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ—এই দুই পরিস্থিতির মধ্যেও বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরের শুল্ক-কর আদায়ে ১৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা ঠিক যে রাজস্ব আদায় বেশি হলে এখন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো প্রকল্পে বেশি অর্থ খরচ করা যেত। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হলে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আকৃষ্ট হতো।
রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়
রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতে বিশ্বের তলানির দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও লাওস স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ হবে। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশ থেকে নেপালের দ্বিগুণ এবং লাওসের দেড় গুণ বেশি। অন্যান্য স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায়ও রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত কম। দেশগুলো হলো শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এই দেশগুলোর রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের মোট রাজস্ব আদায়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আদায় করে এনবিআর। এনবিআরের আদায় করা কর জিডিপির অনুপাতে ১০ শতাংশের নিচে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে এই হার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক গড় রাজস্ব-জিডিপি কত। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ইউরো অঞ্চলে ৪৭ শতাংশ; লাতিন আমেরিকায় ২৭ শতাংশ; ক্যারিবীয় অঞ্চলে ২৭ শতাংশ; মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ; আফ্রিকার সাব সাহারায় প্রায় ১৭ শতাংশ। এসব অঞ্চলের গড় রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।
খরচ যেখানে বাড়ছে
ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তেল আমদানিতে খরচ বাড়ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক পণ্য হিসেবে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকিও বাড়ছে। বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছর তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে দেশি–বিদেশি ঋণের সুদের খরচও বাড়ছে। বিদায়ী অর্থবছরে ৬৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বেতন–ভাতার খরচ কমানোর সুযোগ নেই সরকারের। তাই সরকার উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ কমাচ্ছে। এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পাস করা হচ্ছে না। বেশ কিছু প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ মুহূর্তে পাইপলাইনে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সহায়তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সেখান থেকে ঋণের অর্থ ছাড় করা গেলে সহজেই বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়ত। যা নতুন প্রকল্প নিতেও সহায়তা করত।
আপনার মতামত লিখুন :