শ্বাশুড়ির কু-মন্ত্রনায় অনাগত সন্তানকে হত্যার অভিযোগঃ বিপ্ল


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ১১:০০ পূর্বাহ্ণ / ১০৭
শ্বাশুড়ির কু-মন্ত্রনায় অনাগত সন্তানকে হত্যার অভিযোগঃ বিপ্ল

বিশেষ প্রতিনিধি রংপুরঃ রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৭নং সদর ইউনিয়নের সুখান পুকুর গ্রামে মেয়ের মায়ের কু-পরামর্শেই সংসার ভাঙ্গার উপক্রম সায়মা বিপ্লব দম্পতির। স্বামী বিপ্লবের পরিবারের অভিযোগ, বিপ্লব ও সায়মা দম্পতির অনাগত সন্তানকে কৌশলে হত্যা করছেন সায়মার মা মনেক্কা। এখন মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছেন বলে জানান- সায়মার স্বামী কলেজ শিক্ষার্থী বিপ্লব।

এবিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামবাসীরা বলেন, মেয়েকে নির্যাতনের বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা বানোয়াট। এটি মেয়ের মায়ের হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না। তারা আরও বলেন, বিকারগ্রস্ত মানুষ সবসময় ছিল এখনও আছে। সময়ের প্রয়োজন ও প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এসব মানুষ বাড়ছে বৈ কমছে না। বিকারগ্রস্ত সমাজের একটি বড় ব্যাধি হলো ডিভোর্স। সামান্য থেকে সামান্যতম কারণে একটি সাজানো সংসার ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে ডিভোর্সের হার। আজকে আপনারা যদি দেখেন অধিকাংশ ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে মেয়েদের পক্ষ থেকে। আজকে তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এখানেও তেমনি ঘটনার জন্ম হয়েছে একটু ভিন্নরূপে! অহেতুক কারণে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে এখন এলাকায় সৃষ্টি করেছে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি।

নামপরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক নারী বলেন, বিগত প্রায় ১বছর পুর্বে অত্র ইউনিয়নের মোঃ সপু আহমেদ এর ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী বিপ্লবের সাথে, পার্শ্ববর্তী একই গ্রামের প্রবাসী সাদেক এর মেয়ের গভীর প্রেমের সম্পর্ক জানাননির এক পর্যায়ে, দুই পরিবারের আলোচনা ও সম্মতিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ইং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই দুই পরিবারের আত্নীয়তার সেতুবন্ধনের সৃষ্টি হয়। আমাদের চোখের সামনেই দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হলো। আমাদের জানামতে তাদের প্রেমের সম্পর্কের কারণেই এই বিয়ে হয়েছিল। এবং আমরা প্রতিবেশী হিসেবে তাদেরকে বেশ প্রফুল্ল মেজাজেই দেখেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই শোনা যাচ্ছে মেয়েটাকে নাকি নির্যাতন করেছে তার স্বামী। নির্যাতনের বিচার চেয়ে পীরগাছা সদর ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে মামলাও দায়ের করেন মেয়ের পরিবার। স্থানীয়রা আরও বলেন, এটি একটি মিথ্যে অভিযোগ। আর এই মিথ্যে অভিযোগের কারণেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দু’টি জীবন। আমরা যতটুকু জানি মেয়ের মায়ের প্ররোচনায় এসব হচ্ছে। তাছাড়া মেয়েটাও যেমন সুন্দর তার আচার-আচরণও বেশ ভালো, ছেলেটাও অনেক সুন্দর ও আচরণ ভালো।

দক্ষিণ সুখান পুকুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মেয়ের ফুপু সাহেরা বেগম বলেন, আমার বাড়ি এবং আমার ভাইয়ের বাড়ি একসাথেই। আর আমার ভাতিজিকে (সায়মা) নির্যাতনের বিষয়ে আমি জানিনা, কোনদিন শুনিনি। আর মামলা করেছে এটাও আমার জানা নেই। তবে আমার ভাতিজি অনেক ভালো, জামাই বিপ্লবও অনেক ভালো। আমার ভাই ভাবী চায়না মেয়েটা ওখানে সংসার করুক।

পীরগাছা উপজেলার ৭নং পীরগাছা সদর ইউনিয়নের গ্রাম আদালত মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং বাদী সায়মার দায়েরকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম আদালত এটিকে ৪৪/২২ নং মোকদ্দমা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বাদী- বিবাদী দুই পক্ষকেই আইনানুযায়ী নোটিশ করেন বিজ্ঞ আদালত। যাহা মোকদ্দমা চলাকালে ১২/০৯/২২ইং, ২২/০৯/২২ইং ০৬/১০/২২ ইং এবং ১৭/১০/২২ইং মামলা শুনানির লক্ষে মোট ৪টি তারিখ নির্ধারণ করেন সদর ইউনিয়নের বিজ্ঞ গ্রাম আদালত। মামলা শুনানির প্রথম দুই ধাপে ১২/০৯/২২ইং এবং ২২/০৯/২২ইং উল্লেখিত দুই ডেটে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই উপস্থিত হলেও পরবর্তী ০৬/১০/২২ ইং এবং ১৭/১০/২২ইং বিবাদী পক্ষ উপস্থিত হলেও বাদী পক্ষ অনুপস্থিত থাকেন। গ্রাম আদালত সুত্রে আরো জানাযায়, প্রথম দুই ডেটে বাদী সায়মার লিখিত অভিযোগের কোন প্রকার প্রমানাদী পেশ করতে পারেনি। এমনকি বাদীনির স্বামী কতৃক শারীরিক নির্যাতনের কোন চিহ্ন কিংবা মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে পেশ করতে পারেনি। যৌতুক দাবির বিষয়েও স্বাক্ষী প্রমাণ দিতে ব্যার্থ হন বাদীপক্ষ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সায়মার মা মনেক্কা বলেন, আমি ভালো আমার মেয়েরাও ভালো। ওরা (বিপ্লবের পরিবার) তাবিজ করে আমার মেয়েরে পাগল বানায় বিয়ে করছে। এখন আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে, ওরা আমার কাছে শুধু টাকা চায়, যৌতুক চায় এজন্য আমার মেয়ে ওখানে আর সংসার করবে না। আর মেয়ে যেখানে সংসার করবেনা সেখানে আমার কিছুই করার নেই। সন্তান হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মনেক্কা বেগম বলেন, সন্তানকে ওরাই মারছে এখন আমার উপরে দোষ চাপাচ্ছেন।

বিবাদী স্বামী বিপ্লবের কাছে স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পীরগাছা কলেজের ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। প্রতিবেশী সায়মার সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্কের সুত্র ধরেই দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়। সংসার জীবনও ভালোই চলছিল আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু হঠাৎ কোথাথেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না! আমার পরিবারের সবার নামে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেন আমার স্ত্রী! আমি নাকি তাকে নির্যাতন করেছি! যৌতুক দাবি করেছি, এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলা চলমান অবস্থায় আমার শ্বাশুড়ির কু-প্ররোচনায় আমার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায়। এবং ঢাকায় গিয়ে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ আমলী আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। লোকমুখে শুনেছি আমার অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে তার মা বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করছেন। আমাদের অনাগত সন্তানকেও হত্যা করছেন আমার শ্বাশুড়ি। আমি দেশের সরকার এবং প্রশাসনের কাছে আমার স্ত্রীকে ফেরত পাওয়াসহ সন্তান হত্যার বিচার চাই।

আবু রায়হান, রংপুর