রংপুরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক


প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ৫:৩৪ অপরাহ্ণ / ১২৭
রংপুরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক

আবু রায়হান, বিশেষ প্রতিনিধি।রংপুর :-  রংপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীর চাঁদা আদায়, যুবলীগ নেতার মাধ্যমে অধিকাংশ ফেরৎ রংপুরের শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মুরগী মিলন ও
তার সহযোগী গ্রেফতারে এলাকাবাসীর আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ সেই সাথে তাদের গড ফাদারদের আইনের আওতায় আনার জোর
দাবী।

রংপুরে সাংবাদিকের উপর হামলাকারি ইমরান ওরফে টোকাই ইমরানের গ্রেফতারের জোর দাবী জানাচ্ছে এলাকাবাসী, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৪ জানুয়ারি ২৩ শনিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাংবাদিক সংগঠন (গভঃ রেজিঃ নং  ৯৮৭৩৬/১২ ) "বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব" রংপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি সাংবাদিক আতিকুর রহমান আতিক-এর দায়েরকৃত মামলায় ১৮ জানুয়ারি ২৩ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়  র‌্যাব হাতে মুরগী মিলন ও বানিয়া সুমন গ্রেফতার হয়। যথারীতি
১৯ জানুয়ারি ২৩ বুধবার আসামীদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয় যাহার মামলা নং-জিআর ৩৩/২৩ বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে আসামীদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। রংপুর মহানগরীর কেরানীপাড়া এলাকাবাসী তাদের গ্রেফতারে বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মুরগী মিলনের প্রকৃত নাম মোঃ  মাহফুজুর রহমান মিলন তার পিতার নাম মোঃ সিরাজুল ইসলাম, রংপুর মহানগরীর কেরাণীপাড়ার জামতলা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তার বাড়ি। গ্রেফতারকৃত অপর সন্ত্রাসী বানিয়া সুমনের বাড়িও একই এলাকায় তার পিতার নাম মজিবর রহমান। সরেজমিনে কেরাণীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে এলকাবাসীর মনে আনন্দ বিরাজ করছে, তাই তারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এলাকাবাসী আরো জানান মুরগী মিলন বিগত জামায়াত বিএনপি’র সময় ছাত্রদলের
ক্যাডার ছিল। তখন জাময়াত বিএনপির ছত্রছায়ায় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সে
গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে ছিলো। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার কাছে সে আশ্রয় খুঁজতে থাকে। অনেক নেতাই তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলেও রংপুর মহানগর যুবলীগের সভাপতি জামাত নেতার ছেলে সিরাজুম মুনির বাশার-এর কাছে ওই সন্ত্রাসীরা বেশ দেবতাতুল্য বলেও জানান এলাকাবাসী। ওই হাইব্রিড যুব নেতার প্রকাশ্য মদদ ও আশ্রয়ে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মুরগী মিলন, বানিয়া সুমনসহ রংপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এই হাইব্রীড যুব নেতার ছত্রছায়ায় থেকেই তারা নানাবিধ অপকর্ম করে যাচ্ছে বলেও জানান
এলাকাবাসী। তার নামে ৩টি হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি, মাদক, চুরি, ছিনতাই, ব্লাকমেইলেইলিংসহ ডজনের উপরে মামলা রয়েছে।

মুরগী মিলনের অন্যতম সহযোগী গ্রেফতারকৃত বানিয়া সুমন সেও বিভিন্ন মামলার আসামী। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক শিক্ষক জানান, বানিয়া সুমন সে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত, স্থানীয়রা ভয়ে ওদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়না। মুরগী মিলন ও বানিয়া সুমন গ্রুপের সন্ত্রাসের স্বীকার এক ভুক্তভোগী বলেন, উক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হওয়ার আগের দিনেও নির্মাণাধীন এক নতুন বাড়িওয়ালার কাছে ৫০,০০০ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদার টাকা না পেয়ে ভুক্তিভোগী ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মারপিট করে,ভুক্তভোগী ব্যক্তি জীবনের ভয়ে থানায় মামলা করতে পারেনি। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের উপরে
গডফাদার রয়েছে, তারা কোন অপরাধ করলে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের গডফাদাররা তাদেরকে বাঁচিয়ে দেয়।

আর কেউ যদি
সাহস করে থানায় অভিযোগ বা মামলা করলে সেই মালমলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে । এছাড়াও নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা যায়, মুরগী মিলনের অন্যতম সহযোগী এবং সাংবাদিক আতিকুর রহমান আতিকের উপর হামলাকারী ইমরান ওরফে টোকাই ইমরান গণেশপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সে গণেশপুর রোডে ডিশ, অবৈধ নীল ছবি এবং ইন্টারনেটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সে অবৈধ অস্ত্রধারী তার কাছে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এছাড়াও সে নারী ব্যবসার সাথেও জড়িত। গণেশপুরের
স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, সে এলাকায় ইন্টারন্টে এবং ডিসের ব্যবসার আড়ালে মাদকের আস্তানা তৈরি করেছে। টোকাই ইমরান গণেশপুর এলাকায় প্রকাশ্যে নারী ব্যবসার সাথে জড়িত।

সে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের
চাকুরীর কথা বলে তার পাতানো ফাঁদে ফেলে নারীদের দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত করে। রংপুরের যত নারীর দালাল রয়েছে এই ইমরান নারী ব্যবসার দালালদের অন্যতম নেতা। রংপুরের শান্তিপ্রিয় কেরাণীপাড়া, মুন্সিপাড়া ও গণেশপুর এলাকাবাসী জানিয়েছেন ইমরান ওরফে টোকাই ইমরাণকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক, অন্যথায় মানববন্ধনসহ সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন কর্মাসূচি দেওয়া হবে। রংপুরের মাটিতে কোন সন্ত্রাসীর স্থান নেই, আমরা সন্ত্রাস চাইনা, আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি শনিবার সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে রংপুর মহানগরীর কাচারি বাজারস্থ মৌবন মার্কেটে সিভি (বায়োডাটা) বানাতে যান রংপুর জেলা যুবলীগের নেতা, ডিজেল আহমেদ, লক্ষ্ণীন চন্দ্র দাস ও কান পঁচা রাজু। ব্যস্ততার কারণে সিভি তৈরী করতে পারবেনা বলে জানান আসিফ কম্পিউটার-এর স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোঃ আসিফ। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন ওই যুবলীগ নেতারা। পাশাপাশি ডিজেল আহমেদ ফোন করে ডাকেন রংপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগী মিলন, বানিয়া সুমন টোকাই ইমরান গ্রুপকে! উল্লেখিত সন্ত্রাসীসহ অজ্ঞাত আরও ৯/১০ জন দেশীয় অস্ত্রসহ লোহার রড ও লাঠি নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুনরায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পিটিয়ে আহত করেন। আহত অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হাসপাতালে যেতেও বাঁধা প্রদান করেন সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিন রাতে আনুমানিক ৮টার সময় এসে প্রকাশ্যে  ৯ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন।

১৮ জানুয়ারি
উক্ত সন্ত্রাসীরা র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হবার পর, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় জেলা ও মহানগর যুবলীগের কতিপয় নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। পরদিন ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ দুপুর ১২টার দিকে ৫০০ টাকা সম মুল্যের  ১০টি নোটে মোট ৫ হাজার টাকা ফেরৎ দেন, যুবলীগ নেতা ডিজেল, পূর্বের ন্যয় তার সাথে ছিলেন লক্ষ্ণীন চন্দ্র দাস ও কান পঁচা রাজু।

এ ব্যপারে কাঁচারী বাজারের প্রবীণ স্ট্যাম ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ারুল আলম বলেন, আমি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কাঁচারি বাজারে ব্যবসা করি অনেক সন্ত্রাসী দেখেছি  তাদের পরিণতি পরবর্তীতে ভাল হয় না তারা সমাজ এবং রাষ্ট্রের শত্রু। রংপুর জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি আসিফ নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে রড লাঠি সোটা দিয়ে বেদম মারধর করে ও মুক্তিপণ দাবী করে,  কিন্তু কেউ তাদের ভয়ে আসিফকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে ঐ দিন সন্ধ্যাবেলা আসিফের দোকান থেকে ৯ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে যায় এবং সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিক আতিকুর রহমান আতিককে মারধরের মাধ্যমে লাঞ্ছিতসহ মোবাইল এবং টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা।

উক্ত ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই যেখানে জাতির বিবেক লাঞ্ছিত হয়, সেখানে বিবেকবান ব্যক্তিরা এদের কবল থেকে কতদিন নিরাপদ থাকবে? আমি এদের শাস্তির জোর দাবী জানাচ্ছি। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মামলা বাদী সন্ত্রাসী হামলার শিকার নির্যাতিত সাংবাদিক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, গত ২২ জানুয়ারি মামলা শুনানি ছিল, বিজ্ঞ আদালত আমাদের কথা শ্রবণ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগী মিলন ও বানিয়া সুমন-এর জামিন নামঞ্জুর করেছেন। মিঃ আতিক কান্না জড়িতকন্ঠে প্রতিবেদককে আরও
বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে সাংবাদিকতা করছি, কখনো ভাবিনি প্রাণের শহর রংপুরে আমাকে এভাবে হেনস্থা করা হবে।

কখনো ভাবিনি
আমার ছোট সন্তানকে তারা আঘাত করবে! মৌবন মার্কেটে নির্মমভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে পেটানো দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাই কি হয়েছে? এটাই কি আমার অপরাধ? এতেই সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আক্রমণ করে বসে। ওরা যখন আমাকে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করে, আমার আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলে, সেই অবস্থা দেখে কেউ এগিয়ে না আসলেও  আমার ছোট ছেলে দৌড়ে এসে তাদের মার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। সন্ত্রাসীদের একটুও মায়া হয়নি ওরা আমার ছোট ছেলে সন্তানকে আঘাত করেছে।

একটা স্বাধীন দেশে কিভাবে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে

আমার জানা নেই। আমি দেশের সরকার, প্রশাসনসহ দেশবাসীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। ইদানীং আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি! সন্ত্রাসীরা ছিল ১০/১২ জন। পুলিশ মাত্র দুইজনকে গ্রেফতার করেছে বাকিরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা আমাকে প্রতিনিয়ত ফলো করছে আমি পেশাগত কারণে বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিনা।

আমার ভয় হচ্ছে ওই সন্ত্রাসীরা জেল থেকে ছাড়া পেলে আমি বাঁচতে পারবো কি না।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রংপুর জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক এনামুল হক স্বাধীন, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলী তুষার  এবং মহানগর শাখার সভাপতি রুস্তম আলী সরকার যৌথ বিবৃতিতে বলেন,  সাংবাদিক আতিকের উপর হামলাকারী র‍্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী, মুরগী মিলন ও বানিয়া সুমনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরী। ওদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা বাকী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানাচ্ছি এবং ভুক্তভোগী সাংবাদিককে আইনি নিরাপত্তা
প্রদানে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়য়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অন্যথায় সকল সাংবাদিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি
পালন করতে বাধ্য হবো। সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সন্ত্রাসীরা যত বড় রাঘব বোয়াল হোক তাদের সাথে কোন আপোষ নয়। রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয় তাই আমরা সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা গডফাদারদের বলতে চাই ভদ্রতার খোলস পরে না থেকে ভালো হয়ে যান। সাধারণ মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন। সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হলে রংপুর ছেড়ে পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবেন না। বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সারাদেশে সুসংগঠিত একটি সাংবাদিক সংগঠন।
রংপুরের মাটিতে আর কোন সাংবাদিকের উপর অন্যায় করা হলে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে।