রংপুরের পীরগাছায় গায়েবি প্রকল্প দেখিয়ে এলজিএসপির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ১১:১৩ অপরাহ্ণ / ৩৭৭
রংপুরের পীরগাছায় গায়েবি প্রকল্প দেখিয়ে এলজিএসপির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ রংপুরের পীরগাছায় ১নং কল্যাণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কতৃক স্বেচ্ছাচারিতা ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানা দূর্ণীতির অভিযোগ” শিরোনামে স্থানীয়, জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নুর আলম তার মামাতো ভগ্নিপতি ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নব্য শিল্পপতি রহিম কে সাথে নিয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্নসাৎ এর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান স্থানীয়রা, তারা আরও বলেন নুর আলম চেয়ারম্যান এর অনিয়ম দূর্ণীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হবার পর থেকেই এখন সবার মুখে হইহই স্কুলের বেঞ্চ গেল কই? রংপুরের পীরগাছা উপজেলাধীন ১নং কল্যাণী ইউনিয়নের বড়দরগাহ বাজার এলাকার প্রত্যেক মানুষের মুখেমুখে একটাই প্রশ্ন, লাখ টাকার বেঞ্চ গেলো কই? রংপুরের পীরগাছায় উপজেলা বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে, লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের আওতায় উঁচু নিচু বেঞ্চ সরবরাহ প্রকল্পের এক লক্ষ টাকা লোপাট করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম।

শিক্ষার মান উন্নয়নের সারাদেশে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বাদ পরেনি বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষার মান উন্নয়নে স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারি হিসেব মোতাবেক অনেক আগেই স্কুলের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। উপজেলার হিসেব অনুযায়ী টাকাও উত্তোলন সম্পুর্ন হয়েছে গত বছরের শুরুর দিকে।

সাম্প্রতিক সময়ে ওই স্কুলের বরাদ্দকৃত প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়েছে বলে ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি ওয়েবসাইট kollyaniup.gov.bd মাধ্যমে [ প্রকল্পঃ এল জি এস পি ২০২১-২০২২অর্থ বছরের এলজিএসপি প্রকল্প সমূহঃ ১| বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে কাঠের উঁচু নিচু বেঞ্চ সরবরাহ বরাদ্দ
=১,০০০০০|= এক লক্ষ টাকা] প্রকল্প আইডি ২৭৭১৬৮ সহ অন্যান্য আরো ৮টি সর্বমোট ৯টি প্রকল্পের তালিকা প্রকাশ করেন। কাজের বর্ণনায়, “সকল প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে” বলে উল্লেখিত সরকারি ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দাবী করেন ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদ কতৃপক্ষ। সরেজমিনে তদন্ত করে নতুন কাঠের ব্রেঞ্চ দুরের কথা, নতুন কাঠের টুকরোও মিলেনি ওই স্কুলে। সরকারি বরাদ্দের নতুন বেঞ্চ এর জানতে চাইলে বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম খোকন বিভিন্নভাবে তালবাহানা করেন এবং তার বক্তব্য নিতে একাধিকবার স্কুলে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারী তাকে অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেনি বলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ইতিপূর্বে উক্ত প্রকল্পের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম খোকন জানিয়েছিলেন যে, ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম কয়েক মাস পুর্বে মুঠোফোনে জানান, আমাদের স্কুলের একটি প্রকল্প এনেছেন, তবে বরাদ্দ পেতে হলে “প্রকল্প বুঝিয়া পাইলাম মর্মে একটি প্রত্যায়ন দিতে হবে। একাধিকবার তার সাথে কথা বলার পর,
অত্র ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ সামছুল আলম লিপুর মাধ্যমে, প্রকল্পটি বুঝে পেয়েছি মর্মে প্রত্যায়ন নিয়েছেন ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম। আমি সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকল্পের অপেক্ষায় আছি। লোকমুখে শুনেছি বাইশ সেট উঁচু নিচু ব্রেঞ্চ এর জন্য বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যেহেতু আমার স্কুলে ব্রেঞ্চ কম আছে, সেহেতু প্রকল্পটি পেলে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব উপকার হবে। কারণ সেন্টার পরীক্ষার সময় ব্রেঞ্চ সংগ্রহ করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়। প্রকল্পের বিষয়ে জানতে গেলে, তৎকালীন ইউপি সচিব মতিনুজ্জামান বলেন, বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি (এলজিএসপি-৩) এর বরাদ্দকৃত প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন? জানতে চাইলে ইউপি সচিব ক্ষেপে গিয়ে বলেন, প্রকল্পের তথ্য কাউকে দেয়ার নিয়ম নেই! আপনার যা জানার আছে তা উপরে গিয়ে জানেন। মতিনুজ্জামান আরও বলেন, যে কোন সাংবাদিক প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলেই আমরা ফাইল দেখাবো? আপনি কিছু জানতে চাইলে উপরে গিয়ে জানেন। চেয়ারম্যান’র অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য কাউকে দেয়ার নিয়ম নেই। সেখানে উপস্থিত অত্র ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের এক সদস্য বলেন এখানে চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কিছুই হয়না।

এলজিএসপি প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে, ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, মহান আল্লাহতালার নামে কসম করে বলেন, যদি মিথ্যা বলি তাহলে আমি মুসলমানদের বাচ্চা না! আমি এখনো কোন টাকা উত্তোলন করিনি। একই আলোচনার টেবিলে তিনি পরক্ষনেই সাংবাদিকদের বলেন আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-কে টাকা বুঝে দিয়েছি।

উক্ত প্রকল্পের বিষয় জানতে চাইলে চাইলে, ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ শামসুল আলম লিপু বলেন, আমি চেয়ারম্যান নুর আলম ভাইয়ের নির্দেশে, বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম খোকন স্যারের নিকট প্রকল্প বুঝে পেয়েছে মর্মে একটি প্রত্যায়ন নিয়ে চেয়ারম্যানের হাতে বুঝে দিয়েছি। তবে আমার জানামতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শান্তনা রাণী সরকার জানান, বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের স্কুলে সরকারি বরাদ্দের কোন ব্রেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল বা কোন শিক্ষা সামগ্রী পাইনি। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক, আবুল কালাম আজাদ, নুরে আলম সিদ্দিক, আনোয়ার হোসেন, ফারুক হোসেন সহ একাধিক শিক্ষক বলেন ২০২১/২২ অর্থ বছরে আমাদের স্কুলে সরকারি বরাদ্দের কোন ব্রেঞ্চ সরবরাহ করা হয়নি। ইতিপূর্বে ঢাকা থেকে অডিট এসেছিল আমরা তাদেরকে ব্রেঞ্চ পাইনি মর্মে সাফ জানিয়ে দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম ও দশম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, পুরনো ব্রেঞ্চে বসে আমাদের অনেকের’ই কাপড় ছিড়ে গেছে। আমাদের শিক্ষকরা সেটা জানেন। কিন্তু নতুন ব্রেঞ্চ আনার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২০২২ সালে স্কুলে নতুন কোন ব্রেঞ্চ এসেছে কিনা জানতে চাই