মানুষের জীবনে সত্যিটা যখন অপ্রিয়।


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ৯:৫৩ অপরাহ্ণ / ৯১
মানুষের জীবনে সত্যিটা যখন অপ্রিয়।

লেখক প্রণব মন্ডল।

আজকাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই  ঘুরে ফিরে একটা বাক্য চোখে পড়ে ” দেশের জন্য এই করেছি, ওই করেছি, সেবার জন্য ত্যাগ করেছি, উৎসর্গ করেছি ” ইত্যাদি ইত্যাদি -অনেক কিছু। আর এই উক্তি গুলো যারা করে, তারা সবাই পেশাজীবি। মোদ্দা কথা চাকরিজীবী।  প্রত্যেক পেশারই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কিংবা কর্ম থাকে। এগুলো পেশা ভেদে ভিন্ন  হলেও সব পেশারই মুল উদ্দেশ্য হল জন সেবা। অন্তত এ সম্পর্কে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। অবশ্য এই জন সেবার মাঝেও অনেককে আবার অনেক রকমের সেবা করতে দেখা/শুনা যায়। সেগুলো সম্পুর্ন ব্যক্তি নির্ভর। পেশা নির্ভর নয়। তবুও ব্যক্তির সেবার মানের সুচক সর্বদাই পেশা,সমাজ ও দেশের উপর উর্ধ্ব ও অধঃক্রমে উঠানামা করে। তাই ব্যক্তির সেবার মানের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। যেহেতু ব্যক্তি এখানে মূখ্য নিয়ন্ত্রক, তাই অনেকেই মিডিয়ায় এভাবে ফলো আপ করে নিজেকে, নিজের পেশাকে বড় করে দেখাতে চায়। তবে সেটা যতটা না পেশার জন্য, তার চেয়ে ঢের বেশি সে নিজের জন্য করে/করতে চায়। কারন, এখানে একটা বড় রকমের সুক্ষ্ণ সস্তা বাহাবা পাওয়ার উলঙ্গ কামনা বাসনা থেকে যায়। কারন, আমি যে সেবা করছি– তা তো আমার পেশায়ই করতে বলছে। আর তার জন্যে তো সরকার আমাকে একটা নির্দিষ্ট মানের পারিশ্রমিক সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। তাহলে তো এভাবে ফলোআপ এর কোন প্রয়োজন নেই। সেবা তো তাকেই বলে, যার পিছনে কোন প্রতিদান, স্বার্থ, বাসনা থাকে না/থাকতে নেই। আজ আমি যদি চাকরি না করতাম, তাহলে কি রাত জেগে জেগে এভাবে পাহারা দিতাম? কিংবা ভর দুপুরে রোদ্রে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম? মোটেই না। হয়তো পেটের দায়ে, সংসারের চাপে অন্য কিছু করতাম। হয়তো কামলা, কৃষি, ফ্যাক্টরি শ্রমিক –কিংবা অন্য কিছু।  আর সেই কর্ম করতে করতে মরে গেলেও আর যাই হোক -এটা অন্তত কেউ বলত না যে–জন সেবা করতে করতেই লোকটা মারা গেছে। অথচ, প্রকৃত সেবা বলতে যা বোঝায় সেটা এই প্রান্তিক মানুষেরাই করে। কারন, তাদের মাথার ঘাম পানি করার মাঝেই আজকের এই সভ্যতার ভিত নিহিত। তবে যারা সবার অলক্ষ্যে, নিঃস্বার্থে মানুষের, সমাজের সেবা করে–তাদের সেবাই প্রকৃত জনসেবা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে, মহামারিতে, কোন দুর্ঘটনায়, আপদে-বিপদে কিংবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যারা বিনা বেতনে, নিঃস্বার্থে, লুকিয়ে মানুষের কিংবা সমাজের উপকার করে -তারাই তো প্রকৃত বীর। আর তাদের সেবাই প্রকৃত সেবা–জনসেবা। আর এই অপ্রিয় সত্যিটা নিতান্তই আমার নিজস্বতা–হয়ত সার্বজনীন নয়।।