প্যারী সুন্দরী”


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ৯:১৯ অপরাহ্ণ / ১৩৩
প্যারী সুন্দরী”
   মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
       প্যারী সুন্দরীর বাস্তুভিটা কুষ্টিয়া মিরপুরের সদরপুরে,
চলুন সেখান থেকে আমরা সকলে আসি, একবার ঘুরে।
        ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহী নেত্রী জমিদার,
তুমি না হয় এসো আবার স্বপ্নে আমার,খোলা রবে মোর সব কটি দ্বার।
   অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার বর্তমান (কুষ্টিয়া মিরপুর) সদরপুরের জমিদার রামানন্দ সিংহের কনিষ্ঠ কন্যা,
         আজীবন লড়েছে মাটি ও মানুষের জন্যে,
      তার কথা আমাদের আজ, ভুলেও মনে হয় না।
         দেশমাতৃকার স্বার্থে অত্যাচারের বিরুদ্ধে,
প্যারী সুন্দরীর সাথে ছিল সাধারণ মানুষ ও লাঠিয়াল বাহিনী সকল ভালো কাজের ঊর্ধ্বে।
       প্রতিপক্ষ ছিল নীলকর টমাস আইভান, শেলী, স্টিফেনসন সহ আরো অনেক অত্যাচারীর ভয়ঙ্কর নাম,
গরিব-দুঃখীদের শোষণ করতে হবে কিভাবে এটাই ছিল তাদের কাম।
   খুন জখম দাঙ্গা ডাকাতি লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগ  এমন কোন অপরাধ নেই যে নীলকরেরা করেনি,
তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান প্যারীসুন্দরী অন্যায়ের কাছে কখনো হার মানেনি।
প্যারী সুন্দরীর দেশপ্রেম ও কেনির অন্যায় অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনী ঐতিহাসিক গ্রন্থ সমূহে দেখা যায়,  হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত দ্য হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় ও এ   সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়,
প্রজা বান্ধব প্যারী সুন্দরী বিলিয়ে দিলো নিজ জীবন,
আমরা কতটুকু করতে পেরেছি তাঁকে হৃদয় দিয়ে আপন।
     প্যারী সুন্দরী বলেছিলেন যে ব্যক্তি কেনির মাথা      আমার নিকটে আনিয়া দিবে,
   আমার হাজার টাকার তোড়া সেই পাবে।
প্যারী সুন্দরী বলতো নিজের জন্য আমি ভাবিনা, না কিছু চাই,
দেশের নিরীহ প্রজাদের দুর্দশা, দুরবস্থার কথা শুনলে আমার পরান ফাটিয়া যায়।
প্রতি বিঘা জমিতে নীলচাষ খরচ হতো তখন দশ টাকা,
  অথচ নীলকরেরা মূল্য দিতো মাত্র সাড়ে তিন টাকা।
     দেখুন তারা আমাদের দিয়েছে এ কেমন ধোঁকা।
      নদিয়ায় ১৭ হাজার বিঘা জমিতে ৭ শত মন নীল উৎপন্ন হতো,
এরমধ্যে কুষ্টিয়া প্রথম ছিলো, তাদের মনের মতো।
ওই রক্তচোষা হায়নারা চুষেছে মোদের দিনের পর দিন,
প্যারী সুন্দরী তুমি বাঁচালে আমাদের তোমার কাছে থাকলো আমাদের ঋণ।
বেশ কয়েকবার প্যারীসুন্দরী কেনীর কুঠিতে আক্রমণ করে,
একথা সকলেই জানে, খারাপ মানুষ সমাজে সহজে কি মরে।
প্যারী সুন্দরী কেনি কে বাঙালি বধু রূপে সাজানোর অঙ্গীকার করেন,
ধন্য কুষ্টিয়া মিরপুর বাসি, মানুষ বেঁচে থাকে কাজের মাধ্যমে, কখনো কি তারা মরেন।
ক্ষিপ্ত হন কেনি, তিনি ঘোষণা দেন যে প্যারীসুন্দরী কে এনে দিতে পারবে তাকে তিন হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে,
কে জানে তখন চাষী ও প্রজারা ওদের কাছ থেকে কখন মুক্ত হবে কবে।
শুরু হলো চক্রান্তের আরেকটি অধ্যায় প্যারী সুন্দরীর নামে হলো মামলা,
আপোষ করেনি কখনো সে, এসেছে জীবনে যত বড়ই ঝামেলা।
প্রহসনের বিচারে যাবতীয় জমিদারী ইংরেজ সরকার অধিকার করে,
চাষী ও প্রজাদের নিয়ে প্যারী সুন্দরী অকূল পাথারে পড়ে।
প্যারী সুন্দরী নীল বিদ্রোহের ইতিহাসে স্বদেশপ্রেমের অনির্বাণ শিখা,
এই মিরপুর কুষ্টিয়া সদর পুরে যাবে না, যাবে না, আর কখনো তোমাকে দেখা।
যে ইতিহাসের ব্যাপ্তিকাল ১৮৪৯থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত ছিলো,
সংগ্রামের কারণে অবশেষে ধানের জমিতে জোরপূর্বক নীলচাষ বাধ্য করার নীতি থেকে ইংরেজ সরকার সরে দাঁড়ালো।