পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতো: প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ৬:৪১ অপরাহ্ণ / ৮৮
পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতো: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার :- ঢাকা: মানুষ আগে পুলিশের নাম শুনলে ভয় পেতো, এখন জানে পুলিশ সেবা দেয়। পুলিশ এখন জনগণের পুলিশ বাহিনী হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,

মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’ এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী জনগণের পুলিশ হিসেবেই তারা জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে পুলিশের নাম শুনলে ভয় পেতো এখন জানে পুলিশ সেবা দেয়, তাদের (জনগণের) পাশে দাঁড়ায়। ’

সংকটকালীন সময়ে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সবসময় মানুষের পাশে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের পাশে থাকে পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ সেখানেও পুলিশ ভূমিকা রাখে। মানুষের জান-মাল বাঁচাতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে। যেকোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের সবচেয়ে বড় কাজ এবং সেটাই তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে। ’

সরকার প্রধান বলেন, ‘মানুষের আস্থা অর্জন করা, জনগণের আস্থা অর্জন করা এটা যেকোন বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা জনগণের সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা যেন অক্ষুন্ন থাকে। ’

পুলিশ বাহিনীকে জনগণের পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতেন, “আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। ”

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের পুলিশ বাহিনী ‘জনবান্ধব পুলিশ’ হিসেবে জাতির পিতার সেই আকাঙ্খা পূরণ করবেন। ’

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গড়তে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ পুলিশকে একটি দক্ষ ও চৌকস পুলিশ বাহিনী হিসেবে, স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। কোনো প্রতিবন্ধকতাই যেন আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধা দিতে না পারে। ’

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হিসেবে যাতে গড়ে ওঠে সে ব্যবস্থাও আমরা নেবো। ’

টানা সরকারে থাকার সুফল তুলে ধরে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থবারের মতো আমরা ক্ষমতায় আছি। আর আছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পেরেছি। ’

বিগত সময়ে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

দেশ যখন উন্নয়ন-অগ্রগতির দিকে যায় তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক চক্রান্ত আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। যখনই বাংলাদেশ ভালোর দিকে যায় তখনই নানা ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়। ’

অনুষ্ঠান থেকে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’।

সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এলে সেখানে তাকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। এ সময় তাকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন পুলিশ সদস্যরা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং এ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কুজকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন।

গত ১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানানো হয়, পুলিশ সপ্তাহে এবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম পাচ্ছেন ১১৫ পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২২ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২৫ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’ প্রদান করা হলো।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ৫০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ প্রদান করা হলো।

২ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ও গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে বিপিএম পদকে ভূষিত করার বিষয়টি জানানো হয়। এর ফলে এবার বিপিএম-পিপিএম পদকপ্রাপ্ত মোট কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭ জনে। পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রধানমন্ত্রী পদক পরিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।