পঞ্চগড়ে উপ-সহকারি প্রাণী কর্মকর্তার কারনে কৃষকের আড়াই লাখ টাকার গাভীর মৃত্যু


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ৫:৪৫ অপরাহ্ণ / ১১২
পঞ্চগড়ে উপ-সহকারি প্রাণী কর্মকর্তার কারনে কৃষকের আড়াই লাখ টাকার গাভীর মৃত্যু

মোঃ মোমিন ইসলাম সরকার দেবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ে উপ সহকারী প্রাণী কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া চিকিৎসকের চিকিৎসায় মারা গেছে কৃষকের গরু । রবিবার (২৫-ডিসেম্বর) জেলার সদর উপজেলায় এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে । এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সদর থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন । ভুক্তভোগী মোঃ সোহরাব আলী সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ডুবানুছি গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক এর ছেলে । ভুক্তভোগী মোঃ সোহরাব আলী বলেন, আমার এই গাভীটির বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা । দৈনিক ৪/৫ লিটার দুধ হয় । যা বাজারে বিক্রি করে আমর সংসার চলে । আগে দৈনিক ১৫/২০ লিটার দুধ হতো । গত কয়েকদিন ধরে গরুর পাতলা পায়খানা হচ্ছিল ।

আমি স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসক মোঃ আতিয়ার রহমানকে জানালে সে কয়েকদিন চিকিৎসার পর উপজেলা উপ সহকারী প্রাণী কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ আব্দুর রহিম এর সাথে যোগাযোগ করে অনেক গুলো ঔষধ ও ইনজেকশন আমাকে কেনায় । এবং তা গরুর উপর প্রয়োগ করে । এর পরেও গরু সুস্থ না হলে পুনরায় প্রেসকিপশন লিখে দেন । এবং এই উপজেলা উপ সহকারী প্রাণী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আমার কাছে ১০০০ টাকা ভিজিট নেন । তার পরামর্শে ও তার সাথে যোগাযোগ করে আতিয়ার ডাক্তার আমার গরুকে অনেক ইনজেকশন পুশ করে । এতে গরুর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায় । এতে বার বার ডাঃ আব্দুর রহিম এর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন ধরেন নি । রবিবার (২৫-ডিসেম্বর ) গরু উঠে দাঁড়াতে পারছিলনা। পরে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গরু নিয়ে আসি । দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থেকেও কাউকে আমি পাইনি । গেইটে তালা দেওয়া ছিল । এর মধ্যে আব্দুর রহিম আমাকে দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় । অবশেষে দুপুরের পর বিনা চিকিৎসায় গরু মারা যায় । তার অভিযোগের পর সরেজমিনে দেখা যায়, মোঃ আতিয়ার রহমান কোন প্রাণী চিকিৎসক নন । তিনি হাঁস মুরগি, গবাদি পশু পালন ও পরিচর্যার উপর সাত দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে । এবং একটি ঔষধ কম্পানি হতে গাভীকে বিভিন্ন জাতের বীজ দেওয়ার একটি ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এলাকায় পশু ডাক্তারের পরিচিত লাভ করে । এবং যে কোন প্রয়োজনে সদর উপজেলা উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহিম এর পরামর্শ নেন । পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোঃ আব্দুর রহিম সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বদলি হয়ে বোদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগদান করেছেন । এ বিষয়ে আতিয়ার রহমানের মুখ থেকে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও ডাঃ আব্দুর রহিম এর কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি । এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসকদের সাথে উপজেলা উপ সহকারী প্রাণী কর্মকর্তার যোগসাজশের বিষয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ । তারা বলেন, সরকারি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা এসব ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে তাদের সহযোগিতা করছে । তাহলে আমরা সাধারন মানুষ কথায় যাবো । ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে ডাঃ আব্দুর রহিম এর মতো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই । এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাণি কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, গরু মারা যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক । সরকারি ছুটি থাকায় অফিস বন্ধ ছিল । আব্দুল রহিম পঞ্চগড় সদর উপজেলা থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে বোদা উপজেলায় কর্মরত আছেন । এলাকাভিত্তিক কিছু মানুষ যুব উন্নয়ন বা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রাণী চিকিৎসা করছে । যা সম্পূর্ণ বেআইনি । প্রাণী চিকিৎসার জন্য আমারা সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসক । আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি । তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সরাসরি আমাদের কাছে আসবেন । ভুয়া চিকিৎসকের চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত না হতে সবাইকে অনুরোধ করেন ।