নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পদ্মা সেতু পার হতে পারবে, কিন্তু টাকা নেই রেলের


প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২২, ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ / ৩৯৯
নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পদ্মা সেতু পার হতে পারবে, কিন্তু টাকা নেই রেলের

দোতলা পদ্মা সেতুর নিচতলায় স্থাপন করা হয়েছে রেললাইন। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সেতু পার হতে পারবে ট্রেন। ৩৫ বছরে সেতু কর্তৃপক্ষকে রেলওয়ের দিতে হবে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেতু চালুর প্রথম বছরেই দিতে হবে প্রায় ১০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বিভিন্ন বছরে পরিশোধের হারও ভিন্ন। কিন্তু এ অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য নেই বাংলাদেশ রেলওয়ের। গতকাল সোমবার রেলওয়েতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ কথা জানানো হয়। পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ট্রেনে কী পরিমাণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতে হবে এবং সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের সঙ্গে এর তফাতের পরিমাণ পর্যালোচনা করতে গতকাল একটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের কমিটিতে আরও রয়েছেন পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), পরিচালক (ট্রাফিক) ও পরিচালক (অর্থ)। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। এ রুটে ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্য চাহিদা, আয় ও ব্যয়, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে যাত্রী পরিবহনের আয় ও নির্ধারিত ট্যারিফের তারতম্য সবই খতিয়ে দেখবে কমিটি। গতকাল সকালে রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডি এন মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আরও ছিলেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন আইনের চোখকে বলেন, পদ্মা সেতু ব্যবহারে রেলওয়ের জন্য ট্যারিফের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একটি কমিটি করা হয়েছে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে। এর পর রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আরেকটি বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের অভিমত চাওয়া হবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে ২৫ জুন। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পও সরকারের মেগা প্রকল্প। এ জন্য ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল প্রকল্প চলমান রয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত ট্যারিফ দিয়ে ট্রেন চালনা সম্ভব নয় বলে মনে করে রেলওয়ে। গোটা পথ পাড়ি দিয়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে রেল যে আয় করবে তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে হবে ট্যারিফ হিসাবেই। বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল চালানোর ভাড়া বাবদ প্রতিবছর এক কোটি টাকা দেয় রেলওয়ে। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতু প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। কিন্তু ভাড়া বা টোল দিতে হবে ১০০ গুণেরও বেশি।

বৈঠকে এক কর্মকর্তা বলেন, রেল সরকারি সংস্থা। পদ্মা সেতু ব্যবহারে প্রস্তাবিত ট্যারিফ দিতে হলে সরকারের রেল খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। রেলের নিজস্ব আয় দিয়ে এ অঙ্ক পরিশোধ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেতু কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। রেল সরকারি সংস্থা। রেলের কাছ থেকে ট্যারিফ মওকুফ করা দরকার বলে তিনি বৈঠকে মত দেন।

গতকালের বৈঠকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) বলেন, ট্রেন চলাচলে সেতু থেকে ট্যারিফ, টোল বা টোকেন মানি চাওয়া যৌক্তিক নয়। কারণ রেলের আয় সরাসরি সরকারের রাজস্ব খাতে যুক্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা এক হবে না। ট্যারিফ নির্ধারণে কোথাও ৫০ কিলোমিটার, কোথাও ৮০ কিলোমিটারা আবার কোনো ক্ষেত্রে ১০০ কিলোমিটার হিসাব করা হয়। পদ্মা সেতুর বেলায় একটা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। নতুবা যাত্রী ও পণ্য পরিহনের ভাড়ায় প্রভাব পড়বে।

সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে রেল চালানোর জন্য আগামী অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত টোল ও ট্যারিফ দিয়ে যেতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ট্যারিফ দিতে হবে রেলকে। পরের চার বছর প্রায় ১০৫ কোটি টাকা করে দিতে হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছর থেকে ২০৩১-৩২ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কোটি টাকা করে প্রতিবছর দিতে হবে। পরের পাঁচ বছর দিতে হবে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা করে। ২০৩৭ থেকে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রায় ১৮০ কোটি টাকা করে টোল দিতে হবে। শেষের ১০ বছরে দিতে হবে সর্বোচ্চ হারে ট্যারিফ। এই সময়ে প্রায় ২৩০ কোটি থেকে ২৫১ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে হবে। এর মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ দিতে হবে প্রায় ২৫১ কোটি ১২ লাখ টাকা। রেলওয়েকে গত ২৪ এপ্রিল এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আগামী অর্থবছর থেকে প্রস্তাবিত এই ট্যারিফ পরিশোধ করার কথা বলা হয় চিঠিতে।

আগামী বছর থেকে ট্যারিফ দেওয়া প্রসঙ্গে রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছর নয়, ২০২৪ সালে শেষ হবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। আর এভাবে ট্যারিফ আরোপের প্রস্তাব মানা সম্ভব নয়। এটি সেতু কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। আগে রেল ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখন রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়।

রেলকে লেখা চিঠিতে সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, রেলওয়ে ডেক, ভায়াডাক্ট ইত্যাদি নির্মাণে ঠিকাদারের খরচ হয়েছে ৫ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের শতকরা হার ১৭.০২৫%।