তাসফির বিয়ের পর


প্রকাশের সময় : জুন ৩, ২০২৩, ৫:০৩ অপরাহ্ণ / ১০১
তাসফির বিয়ের পর

ওমায়ের আহমেদ শাওন।

সকাল বেলা। তাসফি বেডে শুয়ে আছে। রনি নাস্তার প্লেট রেডি করে তাকে ডাক দেয়। তাসফি ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে আধশোয়া হয়ে বসে।
‘এতো সকালে তুমি নাস্তা রেডি করছো? আমাকে আগে ডাকলেই তো নাস্তা বানাতাম।’
– সখের বউকে কাজ করতে দিবো নাকি?
‘মেয়েদের কাজ তো মেয়েদের করতে হবে নাকি? তাহলে কি করতে দিবে শুনি !
– কিছুই না। তোমাকে সাজিয়ে রাখবো।
তাসফি মুচকি হেসে বলে, ‘আগে কেন জীবনে আসোনি? তোমার মতো পুরুষ পাবার স্বপ্ন দেখতাম। আল্লাহ আমাদের মিলিয়ে দিয়েছেন।’
– হুম। বিয়েটা হলো ভাগ্যের ব্যাপার। আচ্ছা। থাক সেসব কথা। চলো, আগামীকাল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসি।’
বিয়ের পর সব মেয়েরাই স্বামীসহ হানিমুনে যাবার স্বপ্ন দ্যাখে-। নতুন নতুন সম্পর্কে যত্ন ও আগ্রহ বেশী থাকে। কক্সবাজার যাবার কথা শুনে তাসফির হৃদয়টা উচ্ছাসে ভরে যায়।
– সব রেডী করে রাখো তাহলে।
‘আচ্ছা।’
তাসফি ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশ রুমে যায়।
কিছুক্ষণ পর ডাইনীং টেবিলে বসে দুজনে নাস্তা খায়।

রাত্রে রনি ও তাসফি বেডে শুয়ে অনাগত সন্তান নিয়ে আলোচনা করছে-। এমন সময় অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। তাসফির ফোনটি রনির হাতে ছিলো। মেসেজে লেখা, ‘তাসফি, কেমন আছো? শুনেছি বিয়ে করেছো। দোয়া রইলো। তবে আমাদের স্মৃতিগুলো ভুলে যেওনা। ইতি- তোমার শাওন।’
রনি মেসেজ দেখে হতবাক ! মনে মনে ভাবতে লাগে- তাসফির তাহলে অতীত ছিলো? এখনকার যুগে অতীত ছাড়া কোন মেয়ে নেই। রনি তাসফিকে মন থেকে ভালোবাসে, সেজন্য তার অতীতে যাই কিছু হোক সমস্যা নেই।
– তোমার নাম্বারটা চেঞ্জ করা দরকার।
‘হুম। আমিও সেটাই ভাবছি।’
– আমি চাইনা কেউ তোমাকে ফোন বা মেসেজ দিক।
তাসফির বুকটা কেঁপে ওঠে। সে ভাবে, হয়তো শাওন মেসেজ করেছে। একটু চিন্তা বলে রনিকে বলে, ‘তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার।’
– বলো।
‘বিয়ের আগে শাওন নামে এক ছেলে আমাকে প্রচন্ড বিরক্ত করতো। সেকি মেসেজ করেছে নাকি?’
– হুম।
‘তাকে এতো গালি দেই ! তাও ফোন দেয়, মেসেজ করে। কি করবো বলো তো?’
– বললাম তো, সীম নাম্বার চেঞ্জ করতে হবে।’
‘আচ্ছা।’
– শাওনের বিষয়ে কিছু বলো আরও।’
‘ সে আমাকে অনেক ভাবে পটানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আমি তার ফাঁদে পা দেইনি। কারণ, আমি শুধু তোমার মতো একজনকে চেয়েছিলাম। তা পেয়ে গেছি। আমার জীবনে আর কোন অপূর্ণতা নেই। তুমি সারাজীবন আমাকে এভাবে আগলে রেখো।’ বলে কাত হয়ে রনির কাঁধে মাথা রাখে।
– শাওন এখন কোথায় থাকে?
‘কি জানি ! গাজীপুর বা ঢাকায় থাকতে পারে।’
– ফোনে কথা হয়?
‘না। তার নাম্বার ব্লক করে রাখা।’
– ছেলেটা কেমন ছিলো?
‘দ্যাখো- পাগলাটে টাইপের।’ তাসফি শাওনের ফেসবুক আইডি দেখায়।
– কই? এমন তো দেখছি না ! তাকে স্মার্ট ও জ্ঞানী মনে হচ্ছে।
‘এসব কথা বাদ দাও তো। ওর কথা শুনলে আমার মাথা গরম হয়।’
– সে কি জানে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?
‘কি জানি? ইদানীং সে তো আর বিরক্তও করেনা।’
– হয়তো অন্য কোন মেয়ের পিছনে ঘুরছে।
‘না। সে আমাকেই শুধু ভালোবাসে। অন্য কোন মেয়ের পিছনে ঘুরবে না।’
– তাহলে তাকে উপেক্ষা করলে কেন?
‘আমি তাকে চাইনি। আমি শুধু তোমার ভালোবাসা চাই।’
– ও আচ্ছা।
‘জানো? আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় নাম কি?
– শাওন? রনি হেসে বলে।
‘না। ওর কথা একদম বলবে না আর।’
-তাহলে কোন নাম প্রিয় শুনি !
‘রনি আমার প্রিয় নাম।’
– আমি তোমার মতো এতো সুন্দরী মেয়ে জীবনে পাবো কল্পনাও করিনি।
পরদিন শুক্রবার। তাসফি ও রনি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিমান আকাশে উড়ছে। তাসফির অতীতের কষ্টগুলো চেপে রেখে রনির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
কথায় বলে, ‘মেয়েরা সেই গল্প তার স্বামীকে কখনোই বলেনা যে গল্পে সে নিজেই দোষী।’ মনে মনে শাওনের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তাকে ছেড়ে শাওন কখনো ভালো থাকতে পারবে না সে জানে। শাওনের প্রতি অবিচার ও জেদ করা তার একবারেই উচিত হয়নি। পরিস্থিতি ও একসাথে থাকার অভ্যাসের কারণে রনির প্রতি শারিরীক টান আছে কিন্তু শাওনকে যে সে মন থেকে ভালোবাসতো ! আত্মার টানের চেয়ে বড় ভালোবাসা পৃথিবীতে আর নেই। তাসফি তারপরও পুরনো স্মৃতিগুলো ভুলে থাকার চেষ্টা করে। মেয়ে বলেই হয়তো একদিন চিরতরে সেসব ভুলে যাবে ! সংসার টেকানোর জন্য তাকে সেটা পারতেই হবে। আর রনি তাসফিকে কখনোই ভুল বুঝতে পারবে না। কারণ, সুন্দরী বউ কেউ হারাতে চায় না।