তবে কি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্যই কাউন্সিলর কর্তৃক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ?


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৫, ২০২৩, ১১:৩৬ অপরাহ্ণ / ১১৬
তবে কি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্যই কাউন্সিলর কর্তৃক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ?
রংপুর ব্যুরো:
সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু বাদী হয়ে যমুনা টেলিভিশনের রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নানসহ তিনজনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা অভিযোগ আমলে নিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ড. আব্দুল মজিদ পুলিশ ব্যূরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে ( পি বি আই ) তদন্তের নির্দেশ দেন ।

আসামিরা হলেন- যমুনা টেলিভিশনের রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান (৪৫), নূর মোহাম্মদ (৫৫) ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাফিউল ইসলাম শাফি (৫০)।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১ এপ্রিল) রাত ৯টায় যমুনা টেলিভিশনের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ক্রাইম সিনে কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে সরকারি দলের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং মাদকের কারবারসহ তার বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনের দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়। প্রচারিত সংবাদের মাধ্যমে আসামিরা যোগসাজশে কাউন্সিলর শিপলুর মানহানি, সুনামক্ষুন্ন করার চেষ্টার সঙ্গে বর্তমান সরকার তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে দুর্বল ও জনবিচ্ছিন্ন করতে অপপ্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

বাদী শিপলু নিজেই ওই মামলার এজাহারে জাল দলিলে জমি দখল সংক্রান্ত একটি মামলায় এক বছরের সাজার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগের মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। জামিনে থাকা কাউন্সিলরের দাবি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইনত সাজার আদেশ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। তারপরও আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে যমুনা টেলিভিশনের ক্রাইম সিনে সংবাদ প্রচার করে জনমনে আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপুল বলেন, যমুনা টেলিভিশনে আমার বিরুদ্ধে প্রচারিত সংবাদে তুলে ধরা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলক এই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এ কারণে বুধবার দুপুরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দাখিল করেছি।

এদিকে মামলার আইনজীবী এসএম মাহামুদুল হক সেলিম ও পাবলিক প্রসিকিউটর রুহুল আমিন তালুকদার জানান, ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪-এর ২, ২৫ এর-২, ২৭-এর ২, ২৯-এর ১ এবং ৩১-এর ২ ধারায় অভিযোগটি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আব্দুল মজিদ।

গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের উদ্দেশ্যেই এই মামলা করা হয়েছে দাবি করে যমুনা টেলিভিশনের রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন প্রতিবেদন ক্রাইম সিনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি জালিয়াতির কারণে এক বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু বাহিনীর জমি দখল, মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবেদন করায় এই মামলা করা হয়েছে। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রচারিত প্রতিবেদনে যমুনা টেলিভিশন কোথাও নিজের কোনো কথা বলেনি। আদালতের রায় ও মামলার নথিপত্র, ভুক্তভোগী জনসাধারণের বক্তব্যের কিছু অংশ প্রচার করেছে মাত্র। এ কারণে কাউন্সিলর শিপলু আমাকেসহ তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগের মামলা করা নূর মোহাম্মদ এবং সাবেক কাউন্সিলর শাফিকে আসামি করে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করেছেন। অথচ কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু নিজেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি যখন মামলা করেন তখন তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। একজন ওয়ারেন্ট এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে মামলা করে সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের।