তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকদের অনীহা


প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৩০, ২০২৩, ১০:২০ অপরাহ্ণ / ১০০
তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকদের অনীহা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকঃ তথ্য অধিকার জাতিসংঘ স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও রয়েছে আইন। ২০০৯ সালে করা ওই আইনটির মাধ্যমে ২০টি বিষয় ও আট প্রতিষ্ঠান ছাড়া যে কোনো বিষয় বা প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাইতে পারবেন নাগরিকরা। নিয়মিত তথ্যপ্রবাহের মধ্যে থাকা সাংবাদিকদের আইনটি বেশি প্রয়োজন হলেও তাদের মধ্যেই দেখা যায় অনীহা। আর আইন বাস্তবায়নে ১২টি প্রধান প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানায় খোদ তথ্য কমিশন।

সাধারণত বিভিন্ন আইনে নাগরিকের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্র। কিন্তু এই আইনে রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষমতা আরোপ করতে পারেন নাগরিকরা। জনগণের ক্ষমতায়নের অনন্য দৃষ্টান্ত এই আইন। তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে প্রশাসনে দুর্নীতি রোধ হয়, স্বচ্ছতা আসে এবং জবাবদিহি তৈরি হয়। প্রশাসনে জনসম্পৃক্ততা বাড়লে সরকার জনপ্রিয় হয়। তাই আইনটির প্রয়োগ আরও বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।

তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ২৫ জন সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা নিয়েছে জাগো নিউজ। এর মধ্যে সিংহভাগেরই এ আইন প্রয়োগের অভিজ্ঞতা নেই। তারা কখনো এ আইন প্রয়োগ করে তথ্য চাননি। বাকি ২৫-৩০ শতাংশ আইন মেনে তথ্য চেয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকের অভিজ্ঞতাও নেতিবাচক। যথা সময়ে তথ্য পাননি, হয়রানির শিকার হয়েছেন বা একেবারেই তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে অধিকাংশই আইনটির পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ করেননি।

যারা তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাননি তাদের বক্তব্য, সাংবাদিকতার বাস্তবতা হলো তাৎক্ষণিক তথ্য এনে নিউজ করা। কিন্তু তথ্য অধিকার আইনে সেটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। আবার কর্মকর্তা চাইলেই তথ্য না দিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং হয়রানি করতে পারবেন। যে কারণে তারা এ আইনে আগ্রহী নন।

এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুর রহমান আইনের চোখকে বলেন, দুটো কারণে এই আইনের আওতায় তথ্য চাইনি। প্রথমত, প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। দ্বিতীয়ত, আমার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে, অনেক অফিসার নামটি মার্ক করবেন এবং সোর্স পরে তথ্য দিতে সাই ফিল করবেন।

বাংলানিউজের ডেপুটি চিফ অব করেসপনডেন্টস এস এম এ কালাম বলেন, আমরা তো নগদ তথ্য এনে নিউজ করার লোক। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয় বলে এটা আমার কাজে লাগেনি। একবার সিইসিতে চাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সময় দেখে আর করিনি।

তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ১২ চ্যালেঞ্জ

১. তথ্য কমিশনের সীমিত নিজস্ব জনবল তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।

২. তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে জানার অভাব।

৩. প্রতিটি তথ্য প্রদান ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়া এবং তথ্যের হালনাগাদ না করায় জনগণ এই আইন প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

৪. শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় শান্তি দেওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ ও আপিল কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

৫. তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ একটি প্রযুক্তিবান্ধব আইন হলেও সাধারণ নাগরিক এ বিষয়ে অবগত নয়।

৬. সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০১৪ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ও তথ্য অধিকার (তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা, ২০১০ অনুসরণে তথ্য সংরক্ষণ করা।

৭. কর্তৃপক্ষের স্ব-প্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে অনীহা।

৮. কর্তৃপক্ষের সিটিজেন চার্টার বাস্তবায়ন না করা।

৯. তথ্য অধিকার আইনে আপিল কর্তৃপক্ষ নির্ধারণে সমস্যা।

১০. তথ্য অধিকার আইনে তথ্য সরবরাহ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদন চাওয়ার বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

১১. দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভৌত সুযোগ-সুবিধার অভাব, লজিস্টিক সামগ্রীর অভাব।

১২. তথ্য অধিকার আইনে তথ্য সরবরাহে কোনো আর্থিক বরাদ্দ থাকা।

তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে ৫ সুপারিশ

১. তথ্য অধিকার আইনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভৌত সুবিধা ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

২. আইনটির বাস্তবায়নে তথ্য কমিশনের জনবল বাড়াতে অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্গানোগ্রাম দ্রুত অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩. তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে চার স্তরের কমিটিকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। কমিটিগুলোর মাধ্যমে আইনটি প্রচার ও প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে এবং মনিটরিং করা যেতে পারে।

৪. ‘টেকসই উন্নয়ন সাধনে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প দ্রুত অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৫. আরটিআই অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন, আপিল ও অভিযোগ দায়ের করার জন্য মাঠ প্রশাসনে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।