ট্যুরের টাকা জোগাতে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে নানাকে খুন


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৩, ২০২২, ৬:৩১ অপরাহ্ণ / ৭০
ট্যুরের টাকা জোগাতে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে নানাকে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক:- ঘুরতে যাওয়া জন্য টাকার প্রয়োজন। নানার কাছে ছিল নগদ টাকা। সেই টাকা নেওয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারই দুই নাতি-নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হয় নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ কয়েকজন। চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে টাকা-পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী— নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে রাজধানীর চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের ফার্স্ট লেনের ছয়তলা ভবনের দোতলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করে তারা। সত্তরোর্ধ্ব হাজী মুনসুর আহম্মেদ তখন বাসায় একাই ছিলেন। বাকি সদস্যরা ছিলেন একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র তদন্ত মোড় নেয়। শুরুতে আমরা দস্যুতাসহ খুনের মামলা নিলেও পরবর্তিতে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই। পরিকল্পনায় ভিকটিমের নাতি-নাতনি জড়িত। নাতনি আনিকা ন্যাশনার ডেন্টালে পড়েন। তিনি মূল পরিকল্পনাকারী, তার ভাই, তার ছেলেবন্ধু ও অন্যানা পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি করতে গিয়েছিল।

ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই টাকা জোগাতে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এক মাস আগে পরিকল্পনা হয়। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। আর এ সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে যায়। আনিকাও সেখানে যায়। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন আনিকা। আর বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু দেখভাল হিসেবে কাজ করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ।

এরপর তারা নানা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাঁধা দেন। আর তখনই তাকে মারধর করেন ডাকাতি করতে আসা তরুণেরা। মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা (তরুণরা) বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর বকশিবাজার, চাঁদপুর আর মুন্সিগঞ্জ থেকে মুনসুর আহম্মেদের দুই নাতি ও নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে চকবাজার থানা পুলিশ। তারা হলেন- মুনসুর আহম্মেদের মেয়ের দুই ছেলে-মেয়ে আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভী। তাবাসসুমের বয়ফ্রেন্ড রাজু ও রাজুর ভাই রায়হান ও তাদের পরিচিত সাঈদ। ঘটনার তদন্তে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, আটকদের মধ্যে তিনজন মুনসুরকে ইনজেকশন দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাঁধা দেন মুনসুর। আর তখনই রায়হান এবং সাঈদ তাকে মারধর করে ঘরে থাকা ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান। টাকাগুলো খুঁজে বের করে দেন আলভী।

যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ৯২ হাজার টাকা লুট হয়। লুট হওয়ার ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এ হত্যাকাণ্ড।

একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি করা। আনিকা ও আলভী পরিবার থেকে হাত খরচ হিসেবে খুবই সামান্য টাকা পেতেন। ঘুরতে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। ঘটনাক্রমে হত্যার শিকার হন মুনসুর আহম্মেদ।

ভুক্তভোগী মনসুর আহম্মেদের স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। মেয়ের দুই সন্তান ডাকাতির পরিকল্পনায় জড়িত।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনায় আনিকা ও আলভী জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে পুলিশ। কার কী দায় রয়েছে তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন পাঁচজন।