জেলা প্রতিনিধি :- বরিশাল: অপরের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল সাংবাদিক মাসুদ রানার নিত্যদিনের কাজ। মাসুদ রানা বিভিন্ন সামাজিকমূলক কাজ করতে যেমন পছন্দ করতেন, তেমনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেও ভালোবাসতেন।
মাসুদ সাংবাদিকতার ছাড়াও ফ্রি লাইন্সিং, ওয়েব ডিজাইন ও হোস্টিং, প্রাইভেট পড়ানো ছিল তার সৎ উপার্জনের বিভিন্ন পন্থা। স্ত্রী মালা রাখাইনকেকে স্বাবলম্বী করতে চাকরি ও ব্যবসার প্রতি উৎসাহ দিতেন মাসুদ রানা। পরে তারা একটি রেস্টুরেন্ট দেন।
প্রতিদিন ভোরে উঠেই মালা সেই রেস্টুরেন্টের দেখভালের জন্য যেতেন। কিন্তু আজ ভোরে আর রেস্টুরেন্টে যাননি মালা। গাড়ি নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় যাচ্ছেন স্বামীর লাশ আনতে। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ভোরেসড়ক দুর্ঘটনায় মাসুদ রানা নিহত হওয়ার পর বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন মালা। একটি দুর্ঘটনা শেষ করে দিলো তার সাজানো সংসার। তার গগণ বিদারি আর্তনাদ থামিয়ে দিচ্ছে যেন সব।
এদিন ভোরে শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয় নিহত হয়। নিহতরা হলেন- জাহানারা বেগম (৫৫), লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০), তাদের স্বজন ফজলে রাব্বী (২৮) এবং চালক রবিউল, তার সহকারী জিলানী (২৮) ও সাংবাদিক মাসুদ রানা (২৮)।
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অন্য পাঁচজনের মধ্যে নূরজাহান বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনিও গিয়েছিল।
নূরজাহানের স্বজন ইয়াসিন মল্লিক বলেন, নূরজাহান বেগম আমার ভাবি। আমার ভাই লতিফ মল্লিক আমেরিকা প্রবাসী। এই ঘরে তার একটি মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা। সেও দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এছাড়া মারা যাওয়া ফজলে রাব্বী হলো আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। সাংবাদিক মাসুদ রানা হলেন লুৎফুন্নাহার লিমার শিক্ষক ছিলেন।
ইয়াসিন জানান, আমরা এখনও মরদেহ বুঝে পায়নি। মরদেহ বুঝে পেলে গ্রামের বাড়ি বাউফলের কারখানা গ্রামে নিয়ে যাবো। আর ফজলে রাব্বীর মরদেহ দশমিনায় নিয়ে যাবো।
নূরজাহান বেগম দুইমাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। এজন্য তারা বরিশালের কলেজ অ্যাভিনিউ লতিফ ম্যানশনে নিজের বাসায় ছিলেন। রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নূরজাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশালের কেএমসি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকায় রেফার করলে রাত ১টার দিকে লতিফ ম্যানশনের সামনে থেকে যাত্রা করেন বলে জানান ওই ম্যানশনের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম।
সাংবাদিক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, মাসুদ রানা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। করোনার সময়ে তিনি অসহায় মানুষের জন্য সারাক্ষণ কাজ করেছেন। আমরা একসঙ্গেই কাজ করতাম। এভাবে তার চলে যাওয়া মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
সাংবাদিক নূরুল আমিন রাসেল বলেন, মাসুদ রানা সব সময় অপরের উপকার করতে পছন্দ করতেন। তার শেষ যাত্রাও হলো অপরের উপকার করতে গিয়ে। এমন পরোপকারী মানুষ আমরা আর পাবো না।
জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক মাসুদ রানা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তিনি দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :