গন্তব্যহীন পথচলা


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২২, ৮:২০ অপরাহ্ণ / ১৩৫
গন্তব্যহীন পথচলা
গল্প  (১ম পর্ব)
খুলনা জেলার কুসুমপুর নামের ছোট্ট একটি গ্রাম ।ছায়া সুনিবিড় মায়াময় পরিবেশে ঘেরা সুন্দর একটি গ্রাম । এই গ্রামেই জন্ম আবীর সুপর্ণার। ছোটবেলা থেকে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার ভালোবাসার সম্পর্ক । দুজনে অনন্তকাল একসাথে পথ চলার স্বপ্নে বিভোর । আবীর শহরে থাকে পড়াশোনা আর নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য । আবীর বাড়ি আসলো ছুটিতে। সুপর্ণার সাথে দেখা করবে তাই তড়িঘড়ি করে  খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হলো বাড়ি থেকে।
 সুপর্ণা আর আবীর গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটছে আনমনে । চুপচাপ দুজনে। মনের মধ্যে ঢেউ খেলে যাচ্ছে  চঞ্চল যৌবনের স্বপ্নজড়ানো ছন্দময় সুখস্মৃতি। দুজনে অনুভব করছে হৃদয়ের টালমাটাল ক্ষণ। দুজনের চোখ জুড়ে সুন্দর আগামীর স্বপ্নরা হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।
সুপর্ণা  নীরবতা ভেঙে বলল আবীর তুমি এবার শহর থেকে ফিরলে পাঁচ মাস সতের দিন পর।
আবীর : হুম এবার একটু দেরি হলো। স্টুডেন্টদের পরীক্ষা ছিল আর আমার নিজেরও কিছু পড়ালেখার চাপ ছিল।
সুপর্ণা : কি ভাবছ আমাদের বিষয়ে ? ছোট্ট প্রশ্ন সুপর্ণার।
আবীর : চাকরির চেষ্টা করছি দেখি কত দ্রুত কিছু ভাবা যায় ।
সুপর্ণা  : বাড়িতে খুব বেশি আর বুঝিয়ে রাখতে পারব না। আমাকে ভীষণভাবে চাপ দিচ্ছে বিয়ের বিষয়ে ।
আবীর: চলো ওইখানটায় গাছের ছায়ায় বসি। এই বলে
সুপর্ণার হাতটি ধরে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় বসলো দুজনে ।
সুপর্ণা : জানো আবীর জীবনটা মাঝে মাঝে ভীষণ সুন্দর মনে হয় ।এই যে তুমি পাশে আছ এমনি করে যদি সবসময় কাছে পেতাম তোমাকে ।
আবীর: সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় সুপর্ণা ।আমরা একসাথে অনেক সময় কাটাব।
দুজনের কথোপকথন যেন শেষ হতেই চাইছে না। অনেক বেলা হয়ে গেল ।পুব আকাশের সূর্যটা অস্ত যাওয়ার জন্য তৈরি। এই বুঝি অন্ধকার নেমে আসবে।
দুজনের এবার বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে আসলো।
সুপর্ণা : আবীর চলো আজ উঠি। তুমি তো কাল শহরে  চলে যাচ্ছ।এবার ভালো খবর নিয়ে তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করো। নিজের খেয়াল রেখো ।
আবীর : হুম চলো উঠি। তুমি চিন্তা করো না সুপর্ণা  আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করব ।এবার আসলে সাথে ভালো খবর নিয়ে ফিরব আশাকরি।
দুজনে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে ।হঠাৎ সুপর্ণার ভেতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠল।আবার পেছন ফিরে গিয়ে আবীরকে জড়িয়ে ধরল।
আবীর: দূর পাগলি এমন করতে নেই আমি তো কথা দিলাম খুব তাড়াতাড়ি ফিরব।
সুপর্ণা : এবার কেন যেন তোমাকে ছাড়তে মন চাইছে না । মনটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠছে। এমন কেন লাগছে বুঝতে পারছি না ।
আবীর : ঠিক আছে এসো এবার । মন খারাপ করো না।সাবধানে যেও।
আবীর যথারীতি নগর জীবনে ফিরে আসলো।
সুপর্ণা  রইল অপেক্ষায় ………!
                      ( ২য় পর্ব )

গন্তব্যহীন পথচলা
সুপর্ণা মনে মনে স্বপ্ন আঁকছে তাঁর নতুন জীবনের । মেহেদী রাঙানো হাতে আলতা পায়ে লাল বেনারসি শাড়িতে ঘোমটা দিয়ে আবীরের বাড়িতে যাবে নববধূর সাজে। এইসব নানা রকম ভাবনার মধ্যে বেশ আনন্দে কাটছে তার দিন।
এভাবে আরো দু মাস গত হলো। আবীর আজ অনেক খুশি ।তার ভালো একটি চাকরি হয়েছে ।
আবীর: মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে চাকরির খবরটা প্রথমে বাড়িতে তারপর সুপর্ণাকে জানাতে হবে।
প্রথমে বাড়িতে কল করল আবীর ।
হ্যালো মা কেমন আছ? মা আমার ভালো একটি চাকরি হয়েছে, আশীর্বাদ  করো।আমি খুব শীঘ্রই বাড়ি আসব। তুমি তোমার আর বাবার খেয়াল রেখো ।
মা প্রাণ ভরে ছেলেকে আশীর্বাদ করল।বলল নিজের খেয়াল রাখিস। সাবধানে থাকিস বাবা।
 আবীর: আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি মা। ভালো থেকো তোমরা।
এবার আবীর চরম ভালোলাগা নিয়ে সুপর্ণাকে কল করল। মনে মনে ভাবছে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে মেয়েটা খবরটা শুনে ।
সুপর্ণা: পুকুর ঘাটে বসে ভাবছে আবীরের কথা।হঠাৎ সেল ফোনটা বেজে উঠল। কি ব্যাপার আজ আবীর অসময়ে কল দিল।
বেশ খুশি মনে কল রিসিভ করল।
আবীর: হ্যালো সুপর্ণা দারুণ একটি খবর দেওয়ার জন্য কল দিলাম তোমাকে ।আমার খুব ভালো একটি চাকরি হয়েছে । আমি খুব শীঘ্রই বাড়ি আসছি। আর দেরি নেই তোমাকে আমার কাছে সব সময়ের জন্য নিয়ে আসব।এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল আবীর।
সুপর্ণা : খবরটা শুনে খুশিতে আটখানা হয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলল এবার আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ হবে।দুজনে একসাথে পথ চলব। আমাদের জীবনটা খুব সুন্দর করে সাজাবো তুমি দেখো।
আহা কি আনন্দ লাগছে আমার । চিৎকার করে সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করছে খুশির খবরটা।আনন্দে কাঁদো  কাঁদো গলায় কথাগুলো বলছিল সুপর্ণা ।
আবীর: সুপর্ণা তোমার গলাটা এত ভারী শোনাচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই কান্না করছ। আরে পাগলী খুশির দিনে কি কেউ কাঁদে বলো?
সুপর্ণা : আমি এত আনন্দিত হয়েছি চোখে জল চলে এলো। ভেবোনা গো তুমি এ আমার আনন্দশ্রু ।
আবীর: ঠিক আছে রাখছি তাহলে প্রিয় । ভালো থেকো প্রিয় । আমি কবে বাড়ি আসছি পরে জানাব ।
 আজ এত একটি ভালো খবর দেওয়ার জন্য আবীরের প্রতি ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠলো সুপর্ণার।সৃষ্টিকর্তাকেও মনে মনে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানালো।
একমাস গত হলো।  চাকরির বেতন হাতে পেল আবীর।
এবার বাড়ি ফেরার পালা। সুপর্ণার বাড়িতে বাবা মা কে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাতে হবে।
আবীর এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকলো।
ফ্রেশ হয়ে চা বানালো নিজের জন্য । এরপর মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল করল সুপর্ণাকে।
সুপর্ণা: হ্যালো আবীর কেমন আছ? কি করছ?অফিস থেকে ফিরে কিছু খেয়েছ? বাড়ি কবে আসছ?
আবীর: হা হা হা আরে একটু থেমে থেমে বলো একসাথে এত প্রশ্ন করলে আমি কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিব?
সোহানা: আচ্ছা ঠিক আছে একটা একটার উত্তর দাও ।
আবীর: আমি খুব ভালো আছি। অফিস থেকে ফিরে চা নাস্তা খেয়েছি। বাড়ি আসছি আগামী সপ্তাহে ।প্রিয় এবার বলো তুমি কেমন আছ? বলো কি চাই তোমার? কি আনব তোমার জন্য?
সুপর্ণা: আদুরে গলায় বলল কিছু চাই না আমার ।তুমি আসবে এটাই আমার পরম প্রাপ্তি ।
আবীর : আমি জানি তুমি এমনটা বলবে। মুখ ফুটে কখনো কিচ্ছু চাইবে না।অদ্ভুত একটা মেয়ে তুমি।আজকালকার মেয়েদের কত চাহিদা।কিন্তু তুমি একেবারে অন্যরকম । এখন রাখছি তাহলে প্রিয় ।খুব ভালো থেকো ।আমি খুব শীঘ্রই আসছি তোমার কাছে।
বিদায় জানালো সুপর্ণা  । আকাশ কুসুম কল্পনা করে করে পাগল হওয়ার মতো অবস্থা সুপর্ণার ।অপেক্ষা যেন আর সহ্য হচ্ছে না।আজ থেকে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কাটতে শুরু করল।
এক সপ্তাহ পার হলো।  আবীর অফিস থেকে বের হয়ে অনেক কেনাকাটা করল আগামীকাল বাড়ি যাবে খুশিতে মন চঞ্চল ।
সুপর্ণার জন্য সুন্দর একটি শাড়ি কিনল।সাথে আলতা ,চুড়ি আর একটি পারফিউম ।একবার সুপর্ণা  বায়না করেছিল একটি পারফিউম এর।কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় তখন কিনে দিতে পারেনি।
মায়ের জন্য শাড়ি কিনল। বাবার জন্য লুঙ্গি আর শার্ট কিনল।
বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাসায় ফিরল আবীর

……….!!!

          গল্প (শেষ পর্ব)
গন্তব্যহীন পথচলা
আবীর আজ খাওয়া দাওয়া শেষ করে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে গেল।
শরীর টা হঠাৎ অসুস্থ লাগছে কেন? আবীর ভাবছে আজ একটু বেশি খাটুনি গেছে তাই হয়তো এমন লাগছে। গা হাত পা বেশ ব্যাথা লাগছে।মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল, প্রচন্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো।
 রুমমেট সুনীলকে বলল বেশ খারাপ লাগছে ভাই।
উঠে ঔষধ খেলো। জ্বর কমেনি ।রাতভর কষ্টে কাটলো।সকাল বেলা থেকে কাশি শুরু হলো।
রুমমেট অফিস যাওয়ার সময় বলল চারিদিকে যে হারে কোভিড ১৯  প্রকোপ চলছে। ভয় লাগছে ।তুমি একটু হসপিটালে গিয়ে ডাক্তার দেখাই এসো।
আবীর: কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না ।এদিকে বাড়ি যাবে বলেছে আজ। সবাই খুশি মনে অপেক্ষা করছে এই মুহূর্তে অসুস্থতার কথা জানাতেও ইচ্ছে করছে না তাই মোবাইল টা অফ করে রাখলো।
আস্তে আস্তে রেডি হয়ে হসপিটাল গেল। আউটডোরে দেখানোর পর করোনা টেস্ট দিল । সুপর্ণাকে জানাতে হবে আজ আসবে না সেটা । মোবাইল হাতে নিল। কল করল হ্যালো সুপর্ণা আজ আসতে পারছি না একটু অসুস্থ লাগছে ।চিন্তা করো না । দু এক দিন পর আসব। এই বলে কল কেটে দিল।
কিচ্ছু  ভালো লাগছে না ।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আর ভয় করছে। টেস্ট করানোর পর করোনা পজিটিভ আসায় হসপিটালে ভর্তি হতে হলো।
করোনা ওয়ার্ড রোগিতে ভর্তি ।কোথাও সিট খালি নেই ।আবীরের জায়গা হলো মেঝেতে। চারদিকে হাহাকার আর করুণ আর্তনাদ ।এ যেন এক মৃত্যুপুরী। একটু পর পর লাশ বের করছে আর এম্বুলেন্স এর বিকট শব্দে কান ঝালাপালা ।
আবীর চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। আপনজন কেউ জানতেও পারছে না এমন করুণ অবস্থায় সে আছে এই খবরটা । চিরচেনা নগরীটা হঠাৎ অচেনা হয়ে গেল। জন কোলাহলের নগরী হয়ে গেল নিস্তব্ধ
 হাসপাতালে ভর্তির তিনদিন গত হলো। আবীরের সেল ফোনটা ও বন্ধ হয়ে গেল।
আবীরের চোখে মুখে অন্ধকার নেমে এলো।শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । খুব বুঝতে পারছে আবীর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছে সে। আবীর আনমনে বলে চলছে সুপর্ণা আর তোমার কাছে যাওয়া হলো না আমার। তোমার জন্য কেনা জিনিসগুলো দিয়ে তোমাকে সাজাতে পারলাম না। তোমাকে আমার ঘরে বউ সাজিয়ে আনতে পারলাম না।আমাকে ক্ষমা করো তুমি।ক্ষমা করো প্রিয় । মুহূর্তে থেমে গেল আবীরের শ্বাসপ্রশ্বাস !!!মৃত্যুর কাছে হেরে গেল টগবগে যুবকটা।
আবীর যোগাযোগ এর ঠিকানায় তার রুমমেট সুনীলের নাম ও নাম্বার টা হসপিটালে ভর্তির সময় দিয়েছিল।
আবীরের রুমমেটের মোবাইল টি হঠাৎ বেজে উঠল
রিসিভ করতেই বলল আপনি কি সুনীল বলছেন? আবীর নামে কাউকে চিনতেন আপনি?
সুনীল : হে তিনি আমার রুমমেট ছিল।
আমরা লাশ দাফনকারী সংস্থা থেকে বলছি মি:আবীর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ।ওনার ডেট বডি বাড়ির ঠিকানায় নিয়ে যেতে চাই।আপনার সহযোগিতা লাগবে ঠিকানাটি আমাদের জানান।
স্তব্ধ হয়ে দপ করে বসে পড়ল আবীরের রুমমেট সুনীল। কাঁপা গলায় বলল আমি আসছি হসপিটালে ঠিকানা এবং ওর কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ।একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ ।
রুমের এক কোণায় আবীরের শপিং করা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো সুনীল। ওহ গড!  মৃত্যু কেন এত নির্মম হয়? এই শোক আবীরের বাবা মা কি করে সহ্য করবে? আর সুপর্ণা? তার কি হবে? আর কিছু ভাবতে পারছে না সুনীল।
সুপর্ণা: আজ আবীরের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ছে সুপর্ণার। তিনদিন কথা হয়নি আবীরের সাথে। মোবাইলটা ও বন্ধ বলছে। কি যে করবে সুপর্ণা বুঝতে পারছে না। মায়ের কাছে গিয়ে বলল মা ও মা আজ আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে।শান্তি পাচ্ছি না। ও মা গলা শুকিয়ে আসছে আমার। বার বার তৃষ্ণা পাচ্ছে।কেন এমন লাগছে বলতো?
মা : বেশি কাজকর্ম  করেছিস তাই এমন লাগছে মনে হয় ।চুপটি করে বসতো আমি একটু মাথায় তেল দিয়ে দিই।
হঠাৎ সুপর্ণা খেয়াল করলো অদ্ভুত একটি শব্দ করে একটি এম্বুলেন্স প্রবেশ করছে গ্রামের মেঠো পথ
ধরে । আর সেটা এসে থামলো আবীরদের  উঠোনের সামনে।
এর মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম জুড়ে আবীর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ।
কেউ আর ঘরের বাইরে বের হলো না।
আবীরের মা বাবার আহাজারিতে চারিদিক ভারী হয়ে উঠলো।
একটা ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পুরো গ্রাম জুড়ে ও পুত কি হইল তোর ও পুত কেন চলে গেলি এভাবে? আমার ছেলেটা কেন এভাবে আমাদের অসহায় করে চলে গেল। হে ভগবান এত বড় শাস্তি কেন দিলে? আমরা কার মুখ চেয়ে থাকব ? ও আমার সোনা ছেলে!,ও পুত ! ও পুত! কেমনে থাকব তোকে ছাড়া ।
সুপর্ণা: নির্বাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আবীরের মুখটির দিকে ।কি শান্তির ঘুম যাচ্ছ।আমাকে কার কাছে রেখে গেলে আবীর? তোমার তো এভাবে আমার কাছে আসার কথা ছিল না? তুমি আমাকে শেষ কথা দিয়েছ দু এক দিন পর বাড়ি আসবে।এই তোমার আসা?
 সুপর্ণা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কথা গুলো বলে চলছে ।
আবীরকে নিয়ে আসা গাড়ির একজন হঠাৎ বলল কোথায় দেহ সৎকার করব আমাদের একটু বলে
দিন ।আমাদের তাড়া আছে ।কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
সুপর্ণার হাতে শপিং এর ব্যাগগুলো দিয়ে বলল এগুলো আবীর কিনেছিল বাড়ি আসবে বলে।আপনি একটু ওর মা বাবাকে বুঝিয়ে দিবেন প্লিজ ।
সুপর্ণা: টলতে টলতে আবীরের মায়ের কাছে ব্যাগগুলি রেখে আসলো।
আবীরকে কোথায় সৎকার করবে সুপর্ণাই দেখিয়ে দিল। যেহেতু আবীরের কোনো ভাইবোন নেই। আবীরের বাবা ও শেষ কাজ করার অবস্থায় নেই।ওনার বয়স হয়েছে অসুস্থ তাই বুকে পাথর চাপা দিয়ে সুপর্ণা সব রকম সহযোগিতা করে আবীরের দেহ সৎকার করাল।
সন্ধ্যা নামলে রাতের অন্ধকার যেমন দিনের আলো গ্রাস করে নিমিষে ঠিক তেমনি সুপর্ণার জীবনটা মুহূর্তে তলিয়ে গেল গভীর অন্ধকারে ।তছনছ হয়ে গেল সমস্ত স্বপ্নগুলো ।
বাড়ি এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বুকফাটা আর্তনাদে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল সুপর্ণা
কি করব এখন আমি আবীর? কেন এমন করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? আমি কিভাবে বাঁচব তোমাকে ছাড়া ।চোখের জল আর আহাজারিতে পুরো রাত কেটে গেল । ঠিক কখন ভোর হলো টের পায়নি সুপর্ণা ।
জীবনের বাকীপথ কিভাবে চলবে জানা নেই সুপর্ণার
আজ দিনের আলোতেও অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার দেখছে সুপর্ণা ।
কষ্টের নোনা জলেও আবীরের ভালোবাসার গভীরতা খুব টের পাচ্ছে নিজের ভেতর। আবীর নেই ভাবতেই পারছে না সুপর্ণা। আবীর এসে যেন সুপর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে গেল। যেন বলে গেল আমাদের অঙ্গীকারগুলো কখনো ভুলে যেও না। আমি আছি তোমার সাথে ।
বেদনার ভারে আজ বড্ড ক্লান্ত সুপর্ণা । তাদের ভালোবাসা এভাবে অপূর্ণ রয়ে গেল করোনা নামক মরণঘাতক মহামারির নির্মম আঘাতে ।
আজ থেকে গন্তব্যহীন পথচলা শুরু হলো সুপর্ণার।একা ভীষণ একা আজ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বুকের ভেতরটা প্রচন্ড কষ্টে মোচড় দিয়ে উঠছে । সুপর্ণা  গভীর শূন্যতায় ও যেন আবীরের ভালোবাসাকে ভীষণভাবে অনুভব করছে।।