ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে: বিএনপি


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ৫:৪০ অপরাহ্ণ / ৬৫
ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে: বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:-   ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং নিজেদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে বর্তমান সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএন‌পির স্থায়ী ক‌মি‌টির সিনিয়র সদস‌্য ড. খন্দকার মোশাররফ হো‌সেন।

তিনি ব‌লে‌ন, বর্তমান সরকার শুধু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়, অনেক ব্যাপারে ইতিহাস বিকৃত করছে।

শুধুমাত্র নিজেদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়া, জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা এই কাজটি করে।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান বিজয় দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ (বিএসপিপি) এই আলোচনা সভার আ‌য়োজন ক‌রে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হো‌সেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সামজিক সাম্য ফিরিয়ে আনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, শান্তি ও সুশাসসন প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে দিয়ে দেশ পরিচালনা করা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাকালে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ভুলণ্ঠিত হয়েছে। এই কথাগুলো আমরা বললে আওয়ামী লীগ বা বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা, এমনকি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রীও যেসব কথা বলেন, সেগুলো আসলে এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার অথবা সত্যকে গোপন করা। এটা তাদের চরিত্র।

বিএনপি কাদেরকে ভাড়াটিয়া নিয়োগ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই ব্যাখ্যা চেয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছে, দেশের বদনামে ভাড়াটিয়া নিয়োগ করেছে বিএনপি। কাদেরকে আমরা ভাড়াটিয়া নিয়োগ করলাম, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি তার নাম-ঠিকানা ব্যাখ্যা চাই।

দেশের বদনাম আওয়ামী লীগ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর তারাই ক্ষমতায় ছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখনো দেশের বদনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই বাকশাল সঠিক ছিল এ কথা এখন আওয়ামী লীগও জোর করে বলতে পারে না।

বিএপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, এই সরকার তখন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাটের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল। যার ফলাফল ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ। এটা কী সুনাম বয়ে এনেছলি? এই বদনাম যদি দেশের হয়ে থাকে, কারা করেছিল? আওয়ামী লীগ করেছিল। স্বাধীনতার পর রক্ষী বাহিনী গঠন করে এদেশ ২০ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। আজকের যে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এটা শুরু হয়েছিল সে সময়। এটা দেশে বিদেশে প্রচারিত হয়েছে। এটা কী দেশে সুনাম বয়ে এনেছে? এটাও তো বদনামই সৃষ্টি করেছে। আর এটাও সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে (১৯৭২-৭৫) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। এটা কি সুনাম? এই বদনাম কুড়িয়েছে কারা? স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে, লুটপাটের কারণে এই বদনাম কুড়িয়েছে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বাংলাদেশ বাকশাল না হলেও অলিখিত বাকশাল চলছে। গত ১৪ বছর তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। বিনা ভোটে, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে তারা ক্ষমতা চালাচ্ছে। যদি ১৪ সালের নির্বাচনের কথা বলি তা আমরা বয়কট করেছিলাম। ১৫৩টি আসনে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে চুরি করেছে। এটা আমাদের কথা না, জাপানের রাষ্ট্রদূতের কথা। এটা কি সুনাম হয়েছে? এটা কী বিএনপি বয়ে এনেছে?

তিনি আরও বলেন, এখানে তো বিএনপির ভাড়াটিয়া নিয়োগের কোনো প্রয়োজন হচ্ছে না। এই বদনাম এই আওয়ামী লীগ করেছে। আমেরিকা র‍্যাবের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কেন দিয়েছে? র‍্যাবকে দিয়ে সরকার অনৈতিক ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আদেশ পালন করিয়েছে। হুকুম নির্দেশ পালন করিয়ে ৬০০ এর বশি মানুষকে গুম আর ১০০০ এর বেশি বিচার বহির্ভূত হত্যা করিয়েছে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এসব বদনাম কারা বয়ে আনলো? এই সরকার। আজকের বাংলাদেশকে আর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বলে না। আমেরিকায় একটা গণতান্ত্রিক কনভেনশন হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ব্যখ্যা চাওয়া হলে তারা বলেছে, এই বাংলাদেশ আর গণতান্ত্রিক নেই, এটা হাইব্রিড বাংলাদেশ। এটা বদনাম হলে এটা বিএনপির ভাড়াটিয়া কেউ করেনি, করেছে একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র।

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই করছে। এগুলো কীভাবে লুকিয়ে রাখবে। আমরা যখনই কোনো সমাবেশ করি সরকার আমাদের দমন করতে ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়োগ করে। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে যা হয়েছে তা আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকেও করতে দেখিনি। আমরা তারপরও সমাবেশ করেছি।

বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান প্রমুখ।