কাগজে কলমে স্কুল ঘর আছে, বাস্তবে  ফসলি জমি, ঘর এখন গরুর গোয়াল, নেই কোন কার্যক্রম, অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে বিদ্যালয়টি।


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২০, ২০২২, ৯:১৪ অপরাহ্ণ / ১৬৮
কাগজে কলমে স্কুল ঘর আছে, বাস্তবে  ফসলি জমি, ঘর এখন গরুর গোয়াল, নেই কোন কার্যক্রম, অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে বিদ্যালয়টি।
মাজহারুল ইসলাম পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ- পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ দন্ডপাল রাজার হাট নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলটির বেহাল দশা। কাগজে কলমে স্কুল ঘর আছে কিন্তু বাস্তবে নেই কোন কার্যক্রম । দুই বছরেও কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর স্কুলে কোন পদচিহ্ন পড়েনি। ভগ্নদশায় পড়ে আছে জ্বরাজীর্ণ সেই স্কুলটি।
স্কুলের সাইনবোর্ড ও শিক্ষকদের বসার স্থান
স্কুলের সাইনবোর্ড ও শিক্ষকদের বসার স্থান

সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেবীগঞ্জের দন্ডপাল ইউনিয়নের রাজার হাট নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলটি ২০০০ ইং সালে স্থাপিত হয়।

স্কুলের শিক্ষক বৃন্দ
স্কুলের শিক্ষক বৃন্দ
 কিছু বিদ্যাশাহী ব্যাক্তির বহু আশা করে রাজার হাট নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে হায়দার আজিজুলের ৫০ শতক জমি এবং ধর্মনারয়নের – ৩৩ শতক।মোট ৮৩ শতক
স্কুলের কলায় ক্ষেত
স্কুলের কলায় ক্ষেত
জমি দান করে স্কুল প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলটিতে  কিছু বালিকা শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হয়েছিল ভালই। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সহ মোট ৮ জন ষ্টাফও রয়েছে, স্কুলটিও চলছিল।কিন্তু ২০০০ সালের শেষের দিকে মহামারি করোনা আসার পর স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে আর ওই স্কুলটি চালু করা হয়নি এযাব। ফলে স্কুলের শ্রেনী কক্ষে ও প্রধান শিক্ষকের রুমে এখন গরু ঢোকে গোয়াল ঘরে পরিণত হয়েছে।গরুর পেশাব পায়খানায়  ভর্তী হয়ে একটি গরু খামারে পরিণত হয়েছে। স্কুলটি এখন জ্বীর্ণ শির্ণ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে যেন ভুতুড়ে  বাড়ি। স্কুল ঘরটি টিনের চাল খসে পড়েছে, উইপোকা খেয়ে ঘরে বেড়া করেছে তছনছ। ঘরের আলমারিটিও খোলা এবং ময়লা ধুলাবালি ভরা এক অসস্থিকর পরিবেশ। মোট কথায় দু বছর ধরে কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কোন পদচিহ্ন পড়েনি সেখানে। ছবিতে স্কুলের প্রতিটি করুন চিত্র চোখে পড়বে যেন এক ভুতুড়ে বাড়ী।
প্রধান-শিক্ষিকার আলমারি
প্রধান-শিক্ষিকার আলমারি
স্কুল সরোজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর চোখে পড়েনি। অবশেষে ফোন করে প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষককে উপস্থিত করে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁরাও স্কুলটির বন্ধের কারণ করোনাকালীন সময় থেকে বন্ধের কথা স্বীকার করেন। এক প্রশ্নে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা বহির খাতা দেখতে চাইলে তাঁরা পাশের বাড়ী থেকে এনে দেখানো হয়। মজার ব্যাপার যে,স্কুল বন্ধ থাকলেও তারা বাড়ীতে বসে একই হাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেখান।২০০০ই সালে প্রথমে ১৩ জন শিক্ষার্থী হাজির দেখানো হলেও খাতায় ও কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে ১৩০ জন। স্কুলটি পরিদর্শনে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারে পরিদর্শনের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা জানান কালে ভদ্রে একজন সহকারি অফিসার এসে স্বাক্ষর করে যান কিন্তু পরিদর্শন খাতায় বৃষ্টির পানি পড়ে স্বাক্ষর অস্পর্স্ট দেখাচ্ছিল।
ছাত্রীদের টয়লেট
ছাত্রীদের টয়লেট
এলাকাবাসীর কয়েকজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণে জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকার স্বামী একজন চতুর ব্যাক্তি। তাঁর স্ত্রী প্রধান শিক্ষিকা পদে নাম থাকলেও সব তদারকি করেন প্রধান শিক্ষিকার স্বামী। তিনি চেংঠি হাজরা ডাঙ্গার কলেজের প্রভাষক। তিনি নাকি স্কুল উন্নয়ন, ও শিক্ষক নিযুক্তিতে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৫/ ৬ লাখ টাকা করে গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয়টির সংস্কার বাবদ এমপি কোঠা থেকে দুবার বরাদ্দ পেয়েছেন। মাঠ ভরানোর জন্য কিছু মাটি ভরাট করলেও সব টাকা গেছে ভঁড়িভোজনে। ৫০ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে এখন সেখানে ডালের আবাদ করেছেন।
ছবিতে সেই ডালের ক্ষেত। সাক্ষাৎকার গ্রহনের সময় শিক্ষকদের মন অত্যান্ত ভারাক্রান্ত ও হতাশার ছাপ চোখে মুখে পরিলক্ষিত হয় কিন্তু উপস্থিত সবার সামনে সব কথা খুলে বলতে নারাজ।
প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামী
প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামী

এ ব্যাপারে প্রাধান শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী প্রভাষক মোমিনুল ইসলামকে এসব টাকার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা নাকচ করে বলেন এমন সব টাকা আত্মসাধের অভিযোগ সম্পূর্ণ  মিথ্যা ও ভিত্তাহীন। আমাদের মান ক্ষুন্ন করার জন্য কতিপয় ব্যাক্তি এমন মিথ্যা তথ্য আপনাদের কাছে শুনায়েছে যা সম্পূণ বানোয়ট ও ভিত্তিহীন।