ওএমএসের চাল-আটা দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকে ফিরছেন খালি হাতে


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ৭:১৬ অপরাহ্ণ / ৮৮
ওএমএসের চাল-আটা দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকে ফিরছেন খালি হাতে

সেলিম রানা:-  রাজধানীর পূর্ব রামপুরার শাহাদৎ রোডের ওপেন মার্কেট সেল বা ওএসএস ডিলারের দোকানের সামনে। প্রতিদিন সেখানে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বিক্রি। তবে বহু মানুষের জটলার মধ্যে পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা পেতে ভোক্তাদের অনেকে ভোর থেকে সেখানে লাইন দেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রামপুরা রোডের সেই ওএমএস ডিলারের দোকানের সামনে গিয়ে কথা হয় বলেন, আগে না এলে চাল-আটা পাই না। অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। সেজন্য ফজরের নামাজ পড়ে চলে এসেছি। বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে ওএমএসের পণ্য বড় ভরসা। যে কোনোভাবেই হোক প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে চাল-আটা সংগ্রহ করি।

কথা হয় সেখানে ওএমএসের পণ্যের জন্য লাইনে অপেক্ষমাণ আরও তিন নারীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে দুজন বৃদ্ধা এসেছেন সন্তানের পরিবারের জন্য পণ্য কিনতে। তারা জানান, নিয়মিত তারা ওএমএসের পণ্য কেনেন। তাতে সংসারের খরচ কিছুটা সাশ্রয় হয়। চাল ও আটা সংগ্রহ করে সন্তানের পরিবারের খরচ বাঁচাতে তারা বড় ভূমিকা রাখেন।

মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল, বলছেন ভোক্তারা। এছাড়া ওএমএসের চাল ও আটা পেতে ক্রেতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেককে চাল ও আটা না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

ওএমএস পণ্যের এই ক্রেতারা জানান, তারা প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। তাতে তাদের ব্যয় হয় ১৫০ টাকা অথচ বাজারে একই পরিমাণ চালের দাম ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। তারচেয়েও বেশি সাশ্রয় হচ্ছে আটায়। কারণ, প্রতি কেজি ওএমএসের আটার দাম ২৪ টাকা, যা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ফলে ওএমএসের ৫ কেজি আটায় তাদের সাশ্রয় হয় ২০০ টাকারও বেশি।

সেখানকার ডিলার বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় এতো সমস্যা। একজন ডিলারকে একদিনের জন্য এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তা-ও প্রতিদিন নয়। কোনো সপ্তাহে দুদিন, কোনো সপ্তাহে তিনদিনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। ডিলাররা একদিনে ২০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারে। কিন্তু পণ্যের জোগানের তুলনায় চাহিদা দু-তিনগুণ বেশি।

বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের অপেক্ষা নতুন নয়। এসব ডিলারের দোকানের সামনে বিশৃঙ্খলাও এখন নিত্যদিনের চিত্র। বিশেষত বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু বরাদ্দ কম থাকায় নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের ভর্তুকি দামে চাল-আটা বিক্রির উদ্যোগে খুব বেশি সুফল মিলছে না। এক্ষেত্রে পণ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সাধারণ মানুষ ও ডিলাররা বলছেন, ঢাকার ৭০টি স্থানে বিক্রি করা হয় ওএমএসের পণ্য। তবে নিম্নবিত্ত ও বস্তি এলাকায় ওএমএসের ট্রাকে পণ্য বিক্রির পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এখন ওএমএসের ট্রাকের সামনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বরাদ্দ কম থাকায় পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খালি হাতে ঘরে ফিরছেন।