আন্তরিকতার অভাবে বাড়ছে লোকসান, সেবা নিয়েও অসন্তুষ্টি


প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৩, ১:৩৬ অপরাহ্ণ / ৬০
আন্তরিকতার অভাবে বাড়ছে লোকসান, সেবা নিয়েও অসন্তুষ্টি

জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী :- লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারো ছুটলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। গেলো তিন বছরে এই ট্রেনটি যা আয় করেছে এর চেয়ে ব্যয় করেছে কয়েকগুণ বেশি। পরিসংখ্যান বলছে ট্রেনটির লোকসানের পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষ সঠিক পরিকল্পনা করতে পারলে রেল লোকসান নয় লাভের মুখ দেখতো। এক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘটতি রয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।

দিন দিন কুরিয়ার সার্ভিস লাভজনক হচ্ছে, ট্রেনের আন্তরিকতা নেই। আন্তরিক হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। ট্রেনও লাভজনক হবে’- মো. আনোয়ারুল হক, সভাপতি, রাজশাহী এগ্রোফুড প্রডিউসার সোসাইটি

প্রতি বছরের মতো এবারও রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে আম নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছেছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এ ট্রেনের উদ্দেশ্য সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কম খরচে আম ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন করা। এতে চাষি, ব্যবসায়ী এমনকি লাভবান হবে রেল কর্তৃপক্ষও।

কিন্তু ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রহনপুর থেকে ট্রেনটি বিকেল ৪টায় ছেড়ে গেলেও ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছেছে শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টায়। ২৪ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছায় আমের ক্ষতি হয়েছে।

পশ্চিম রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে ৪৭ দিন। আম পরিবহন করেছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে ৪৯ দিন। আম পরিবহন করেছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ গতবছর ২০২২ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি। এতে আয় হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা।

গেল তিন বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৮ টাকা। আর ব্যয় করেছে ১ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা দিন শেষে রেলের লোকসান ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকা। চলতি বছর প্রথম দিনে ঢাকায় যে কয়েকজন ব্যবসায়ী আম পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে আব্দুর রহিম একজন। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ট্রেনে আমটা ভালো যাবে। তবে আম পৌঁছাতেইতো চলে গেছে ২৪ ঘণ্টা। যার কাছে আম পাঠিয়েছি সেতো এখনো আম পায়নি। এতক্ষণ লাগলেতো আম নষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেখানে কুরিয়ার মাত্র ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টায় বাড়িতে আম পৌঁছায়, সেখানে ট্রেনে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এত করে আমের ক্ষতি হবে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে লাভজনক এই সেবা খাতটি লোকসানে পরিণত হচ্ছে। সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরাও।

রাজশাহী এগ্রোফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক বলেন, আমরা যারা বিদেশে আম পাঠাই তাদের প্রথম পছন্দ ট্রেন। কারণ এতে নিরাপদে ও কম খরচে পৌঁছানো যায়। কিন্তু এদের সেবার মান, প্রচার ও প্রসার নেই। ট্রেন কবে থেকে চলবে সেটিও আমরা জানি না।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে পাঠাতে হলে আমাদের আমগুলো সকাল সকাল পৌঁছাতে হয়। তবে ট্রেন যদি লেট করে তাহলেতো কুরিয়ারই ভালো। দিন দিন কুরিয়ার লাভজনক হচ্ছে, ট্রেনের আন্তরিকতা নেই। আন্তরিক হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। ট্রেনও লাভজনক হবে।

তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এটা রেলের সার্ভিস নয়, সেবা। এখানে আয়-ব্যয় মূল নয়। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমাদের সেভাবে ব্যাকবন ডেভেলপমেন্ট নেই। আমরা চেষ্টা করছি। ডে বাই ডে এটি উন্নত হচ্ছে। আমাদের সমস্যাগুলো ওভারকাম হচ্ছে।