আদালতে জবানবন্দি দিলেন চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার নারী


প্রকাশের সময় : আগস্ট ৪, ২০২২, ৩:৫০ অপরাহ্ণ / ৩৮০
আদালতে জবানবন্দি দিলেন চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার নারী

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা চলন্ত বাসে ডাকাতির পর ধর্ষণের শিকার নারী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন।

আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ওই নারী জানিয়েছেন, ছয়জন ডাকাত তাঁকে ধর্ষণ করেন। গলা টিপে ধরে মারধর করেন। তিনি ছাড়া আরও এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টায় তাঁদের বাস সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে পৌঁছায়। খাওয়া শেষ করে রওনা হওয়ার পাঁচ মিনিট পরই রাস্তা থেকে ২০–২২ বছর বয়সের ৩ জন বাসে ওঠেন। তাঁরা জানান, সামনে তাঁদের আরও লোক আছেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরও চারজন ওঠেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘আমার লোক আছে আরও।’ কিছু দূর যাওয়ার পর আরও ছয়জন ওঠেন। এভাবে মোট ১৩ জন বাসে ওঠেন। তাঁরা বাসের পেছনে বসেন। একজন তাঁর (ভুক্তভোগী নারী) পাশে বসতে চান। কিন্তু সুপারভাইজার তাঁকে উঠিয়ে দেন। পরে কাছের একটি সিটে বসে সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া ছাড়েন। নিষেধ করলে তাঁরা তাঁকে গালাগাল করেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর তাঁদের মধ্যে তিনজন চালকের পাশে বনেটে গিয়ে বসেন। তাঁরা সামনে নামার কথা বলেন।

জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে চালককে উঠিয়ে তাঁদের মধ্য থেকে একজন গাড়ি চালানো শুরু করেন। তাঁরা বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে পেছনে নিয়ে আসেন। এরপর প্রথমে পুরুষ যাত্রীদের হাত, মুখ, চোখ বাঁধেন। পরে মেয়েদের বেঁধে ফেলেন। মুঠোফোন, গয়না, টাকা—সব লুট করে নেন। এ সময় অনেককে মারধর করেন। একপর্যায়ে ডাকাত দলের ছয়জন তাঁকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণকালে তাঁর হাত ও চোখের বাঁধন খুলে যায়। একপর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ির গতি কমে এবং ডাকাতরা নামতে থাকেন। একসময় হঠাৎ ডাকাত দলের চালক গাড়ির জানালা দিয়ে নেমে যান। এ সময় গাড়ি খাদে পড়ে যায়। প্রথমে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসেন উদ্ধার করতে। যাত্রীরা জানালা দিয়ে বের হয়ে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছে তাঁরা ডাকাতির ঘটনা বলেন। তাঁকে প্রথমে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গতকাল বুধবার রাতে তাঁকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর আদেশ দেন।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন বলেন, তিন সদস্যের মেডিকেল টিম পরীক্ষা করেছে। কিছু সাইন পজিটিভ আছে। সাইন অব স্ট্রাগল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাঁর সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

রাজা মিয়া পাঁচ দিনের রিমান্ডে

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার রাজা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হোসেন গ্রেপ্তার রাজা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিচারক শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানান আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে রাজা মিয়াকে শহরের দেওলা এলাকার বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার রাজা মিয়ার কাছ থেকে দুটি ছুরি, একটি কাঁচি এবং যাত্রীদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

মুরাদ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজা মিয়া এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বাীকার করেছেন। ঈগল পরিবহনের চালকের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রাজা মিয়া পুরো ডাকাতির সময় গাড়ি চালিয়েছেন। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।