আগুন-ধোঁয়ায় কাজ করা ফায়ার ফাইটাররা আজীবন রেশন পাবেন


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২২, ৮:১৬ অপরাহ্ণ / ৭৬
আগুন-ধোঁয়ায় কাজ করা ফায়ার ফাইটাররা আজীবন রেশন পাবেন

আইনের চোখ ডেস্ক:-  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফায়ার ফাইটারদের সারা জীবন আগুন ও ধোঁয়ায় কাজ করতে হয়। এজন্য এ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অনেকেই অবসর বয়সে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এ কারণে আমরা তাদের আজীবন রেশন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সেবার ক্ষেত্র এবং কর্তব্যরতদের মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ আগুন লাগলে বা কোনো দুর্ঘটনা বা ভূমিকম্প বা ভবন ধসে গেলে ফায়ার সার্ভিসই সবার আগে ছুটে যায়। এমনকি কোনো জাহাজ বা লঞ্চ যখন দুর্ঘটনায় পড়ে, তখনো এ ফায়ার সার্ভিসকেই আমরা পাই। তাই তাদেরকে আরও যুগোপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন। সেই পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি। এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সেবার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি।’

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ ২০২২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

অগ্নিনির্বাপণকারীরা ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার উচ্চক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। সব উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম, তা এখন শেষপর্যায়ে। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত তারা যেন উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ উন্নত, আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা সংবলিত বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছি। সর্বশেষ আমরা বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারের লেডার সম্বলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ করেছি। ৬৮ মিটারের পাঁচটি গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ১১টি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ক্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যাল দেওয়া হয়েছে। নদীপথে সক্ষমতা বাড়াতে ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১০টি ফায়ার ফ্লোট কেনা হয়েছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, লিঙ্গ অসমতা দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্প ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে ফায়ার সার্ভিসের কেমিক্যাল টেন্ডার, ব্রিদিং টেন্ডার, ফোম টেন্ডার, হ্যাজমেট টেন্ডারের মত বিশেষ ধরনের কোনো গাড়ি ছিল না। আমরা এ ধরনের ৩৫টি বিশেষায়িত গাড়ি দিয়েছি। যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একসময়ের অবহেলিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা একটি সম্মানজনক স্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সরকার এ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ রেশন ও ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়েছে। অপারেশনাল কর্মীদের জন্য তিন রঙের মর্যাদাপূর্ণ কমব্যাট পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পদকের সংখ্যা ও সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। উদ্ধার কাজের সুবিধার্থে জার্মানির তৈরি তিনটি জাম্বু কুশন হস্তান্তর করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে আমরা ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। আরও ২০ কোটি টাকা এ ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরে এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা এক লাখ ৯২ হাজার ৮৭টি অগ্নি দুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। একই সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এক লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯টি অ্যাম্বুলেন্স কলের মাধ্যমে এক লাখ ২৬ হাজার ৮৩৯ জন রোগী হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় লাখ ১৩ হাজার ৬১ জন শিক্ষার্থীকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৪০ জন কর্মীকে দুই দিনব্যাপী অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ প্রতিরোধে হেলপিং ফোর্স হিসেবে তারা ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৪৪৯ জনকে তিন দিনব্যাপী স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে কর্তব্যপালনকালে নিহত ৩০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ৪৫ জন দমকল কর্মীর হাতে চার কাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ করেন।