অনাবিল সৌন্দর্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রকৃতি প্রেমীকদের ভীড়


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৩, ২০২২, ৫:২৮ অপরাহ্ণ / ২৬৭
অনাবিল সৌন্দর্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রকৃতি প্রেমীকদের ভীড়
মাজহারুল ইসলাম পঞ্চগড়  প্রতিনিধিঃ-
রূপ ও সৌন্দর্য্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ছুটে আসছে প্রকৃতি ও পর্যটক প্রেমিরা।

হিমালয়কন্যা হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্যেই নয়, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জনপদের নাম পঞ্চগড়। শীতপ্রবণ এ জেলার তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা।গতকাল ২৩ অক্টোবর রবিবার সূর্য উঠার পর থেকে কাঞ্চন জঙ্ঘার দেখা মিলেছে।সূর্য কিরনের তেজ বৃদ্ধির পর পর্বতটি আরো স্পর্ষ্টভাবে ধরা পড়তে শুরু করেছে পর্যটকদের চোখে।
        ছবিঃ ফিরোজ আল শাবাহ
 চোখের কাছে ভেসে থাকা হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেয়। আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় এবং বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ কমে যাওয়ায় পরিষ্কার দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ। প্রথম সকালে একটু কালছে দেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যকিরণের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে যায়। তবে শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তীর্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে তখন অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে আবারো ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।তবে বাংলাদেশ আর ভারত সীমান্তের বুক চিরে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পাড় বা ডাকবাংলো এলাকা থেকে কাঞ্চজঙ্ঘার অপূর্ব দুর্লভ মায়াবী দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছে। আর এখানেই সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন পর্যটকরা।

সূর্যোদয়ের পর কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়াটি প্রথমে লালচে দৃশ্যমান হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ পরিবর্তন হতে থাকে। সোনালি, রূপোলির পর তুষারশুভ্র বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয় পর্যটকদের সামনে। আর বিকালের সূর্যকিরণে তা ধরা দেয় অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের ৬৪ কিলোমিটার, চীনের ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের ৫৮ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ির ১৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্বপ্রায়  ২০০ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার ৭৩ কিলোমিটার। কিন্তু মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত সাদা পাহাড়, মনে হয় এইতো চোখের সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা।
জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সবোর্চ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জানতে পেরে ভ্রমণ পিপাসুরা কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখার খবরে পরিস্থিতির মধ্যেও দলে দলে পর্যটকরা ভিড় করছেন পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ায়।
     ছবিঃ ফিরোজ আল শাবাহ
উল্লেখ্য, স্থানীয় ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল শাবাহ বলেন,কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে চাইলেই কি পাওয়া যায়? দেড়শ কিলোমিটার সরল রেখার আশপাশের এলাকার বাতাস পরিস্কার থাকতে হয় । দেড়শ কিলোমিটার এলাকা পলুট্যান্স,ধুলিকণা ,ময়েশ্চার সহ ভিজিবিলিটি স্কেল এর আরো নানান ধ্রুবককে এক সাথে খুব কম থাকতে হয় বাতাসে । তখনি গিয়ে ঝলমল করে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা ,কাবরু, পান্ডিম , কুম্ভকর্ণদের । এটা কি চাট্টিখানি কথা ? চারশ কিলো এসে না দেখে বিরক্ত হলে চলবে ? সেদিন আমি অনেক ছবি তুলেছি। ছবিটা তোলার পর আরো বিস্মিত হলাম ক্যামেরায় তাকিয়ে ! এলোমেলো চিন্তা করতে করতে ফুল ফ্রেমে মাউন্ট কাবরুর ছবি তুলছিলাম । তোলার পর কাঞ্চনজঙ্ঘার বা পাশে মাউন্ট কাবরু ও  মাউন্ট তালুং ঢাল এর মাঝখান দিয়ে  ঠিক পিছনে উঁকি দিচ্ছে আরেকটি পর্বত সোনালী শৃঙ্গ যেটা আমি আগে কোনদিন খেয়াল করিনি। কাঞ্চনজঙ্ঘারও পিছনে  নতুন একটা শৃঙ্গ দেখতে পেয়ে কি ভালো লাগলো  সেটা বলে বোঝানো মুশকিল ! ছবিতে বা থেকে মাউন্ট কাবরু সাউথ (৭৩১৮ মিটার) তার পাশেই মাউন্ট কাবরু নর্থ (৭৪১২ মিটার) দুই ভাই ও তাদের পাশে বন্ধু মাউন্ট তালুং (৭৩৪৯ মিটার) । এবং তাদের নিচে কাবরু ডোম (৬৫০০ মিটার) । এবং ডানে সবচেয়ে উপরে এদের সবার অভিভাবক  কাঞ্চনজঙ্ঘা সাউথের অংশ ও মাউন্ট ইয়ালুং কাং।  এটি এই মাসের ১৮ তারিখের তোলা ছবি । এক কথায় কাঞ্চনজঙ্ঘার আরো কয়েক সহোদর ভাই রয়েছেন তারা একটু ছোট কিন্তু আলো ঝলমলে কিন্তু তাদের কেউ সুন্দরী বলেনা।কাঞ্চনজঙ্ঘা সব চেয়ে উঁচু ও আলো ঝলমলে তাই প্রকৃতি প্রেমীরা তাঁকে নিয়ে নানা কৌতুলহল উপভোগ বিলাসি।